ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভালো ফলনের আশায় চাষিরা

পাহাড়জুড়ে আমের মুকুল, মিষ্টি গন্ধে সুবাসিত

মোহাম্মদ আবদুর রহিম

প্রকাশিত: ০০:১১, ২১ মার্চ ২০২৪

পাহাড়জুড়ে আমের মুকুল, মিষ্টি গন্ধে সুবাসিত

বান্দরবানের পাহাড়ে গাছে গাছে আমের মুকুল

বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকা আমের মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণে ম ম করছে। মিষ্টি গন্ধে সুবাসিত হয়ে উঠছে পাহাড় ও প্রকৃতি। এ সময়টাতে বৃষ্টি না হলে বা আমের মুকুলের যতœ না নিলে আমের ভালো ফলন সম্ভব নয়। তাই এখন আমবাগানগুলোর পরিষ্কার ও মুকুল ঝরা রোধে কীটনাশক স্প্রেসহ নানাভাবে বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন চাষিরা। পাহাড়ের বাগানগুলোর প্রতিটি গাছে মুকুল আসায় আম চাষিদের মাঝেও ভিন্ন আমেজ লক্ষ্য করা গেছে। এ ছাড়া গত বছরের তুলনায় এ বছর জেলার আম চাষিরা ভালো ফলনের অপেক্ষায় রয়েছেন।
চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একসময় জুম চাষই ছিল পাহাড়ে মানুষের জীবিকার একমাত্র প্রধান উৎস। কিন্তু এখন জুম চাষের পাশাপাশি অনেকে গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন ফলদ বাগান। এর মধ্যে অন্যতম আম বাগান। পাহাড়ে বিভিন্ন ফলদ বাগান গড়ে তুলতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পাশাপাশি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোও কাজ করছে। চাষিদের দেওয়া হচ্ছে সার, বীজ, চারা বিতরণের পাশাপাশি বাগান পরিচর্যায় বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষণ। ফলে অনেকে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ফলদ বাগান করছেন পাশাপাশি অনেক বাগান চাষিও হয়েছেন স্বাবলম্বী।
সরেজমিনে জানা যায়, বান্দরবান সদর উপজেলার লাইমি পাড়া, ফারুক পাড়া ও গেৎশিমানী পাড়াসহ চিম্বুক সড়কের বিভিন্ন এলাকার বাগানগুলোতে শোভা পাচ্ছে আমের মুকুল। কোনো কোনো গাছে ধরেছে গুটিগুটি আম। আমের মুকুল ও গুটি ঝরা রোধে কেউ কীটনাশক স্প্রে করছেন। এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে দাম ও ফলন ভালো পাওয়ার আশায় বুক বাঁধছেন আম চাষিরা।
বান্দরবান কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ফেলে দেওয়া আমের বীজ থেকে চারা উৎপাদন করে মে-জুন মাসে চারা রোপণ করা হয়। চারা রোপণের ৪ বছরের মধ্যে ফলন দেয়া শুরু করে রাংগোওয়ে জাতের আম গাছগুলো। ছোট বড় গাছ ভেদে প্রতি আমগাছে প্রতি মৌসুমে ১-১০ মণ পর্যন্ত ফলন দেয়। কম আঁশযুক্ত আর সুস্বাদু হওয়ায় এই আমের চাহিদা রয়েছে দেশজুড়ে। এ বছর বান্দরবানের সাতটি উপজেলায় ৯ হাজার ৮০৯ হেক্টর জমিতে আমের আবাদ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ লাখ ১০ হাজার টন। 
বান্দরবানের রুমা, থানচি উপজেলার আমচাষিরা বলেন, আমের মুকুল আসার পর থেকেই গাছের প্রাথমিক পরিচর্যা শুরু করেছেন তারা। মুকুল রোগ বালাইয়ের আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় স্প্রে করছেন বলে জানান তারা।
লাইমি পাড়ার চাষি এডেন বম জানান, তিনি ও তার ভাই ১০ একরজুড়ে গড়ে তুলেছেন আমসহ নানা ফলজ বাগান। এর মধ্যে ৭০ শতাংশই আম বাগান। অন্যান্য বছর ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতে আমের মুকুল আসলেও এবার মাসের শেষে মুকুল আসায় আমরা খুব খুশি। মুকুল, গুটি ও বাচ্চা আমগুলো বাঁচাতে পারলে ফলন ভালো হওয়ার আশা করছেন তিনি।
বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক এমএম শাহ্ নেওয়াজ দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, এবার বৃষ্টিপাত ভালো হওয়ায় পাহাড়ে ৮০ শতাংশ গাছে মুকুল ও আম ধরা শুরু করেছে। চাষিরা কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী পরিচর্যা করতে পারলে চলতি মৌসুমে জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি আম উৎপাদন সম্ভব হবে। যা স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সারাদেশে সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।

×