ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মর্টার বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে টেকনাফ সীমান্ত

অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় আরও তিন শতাধিক বিজিপি সদস্য

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান ও সংবাদদাতা উখিয়া

প্রকাশিত: ০০:৪০, ১৯ মার্চ ২০২৪

অনুপ্রবেশের অপেক্ষায় আরও তিন শতাধিক বিজিপি সদস্য

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দেশটির জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে চলমান যুদ্ধ

মিয়ানমারের অভ্যন্তরে দেশটির জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে চলমান যুদ্ধে টিকতে না পেরে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তবর্তী এলাকার নোম্যান্সল্যান্ডের কাছাকাছি অপেক্ষায় রয়েছে আরও তিন শতাধিক বিজিপি সদস্য। এদিকে রবিবার রাতে ৩৩ মিনিটে ২১টি মর্টারশেলের বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে এপারের টেকনাফ সীমান্তের কয়েকটি গ্রাম। 
স্থানীয়দের সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সে দেশের সরকারি জান্তা বাহিনী ও বিদ্রোহীদের মধ্যে ক্ষমতা দখলের লড়াই চলছে। এরই মধ্যে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের ঢেকুবনিয়া, রাইটক্যাম্পসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ এলাকা দখলে নিয়েছে বিদ্রোহীরা। বর্তমানে আশারতলী, জামছড়ি, পানছড়ি ও লেমুছড়ি সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের অভ্যন্তরে  রাশিদং অঞ্চলের অংথাব্রে ক্যাম্পসহ আরও কয়েকটি চৌকি দখলে নিতে দফায় দফায় যুদ্ধ চলছে আরাকান আর্মি। এ যুদ্ধে ব্যবহার করা গোলার শব্দে প্রায়ই কেপে উঠেছে সীমান্তের এপারের এলাকাগুলোও।

এদিকে রাখাইনের বিদ্রোহীদের সঙ্গে যুদ্ধে টিকতে না পেরে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড (বিজিপি) এর দুই নম্বর সেক্টরের প্রায় তিন শতাধিক সদস্য জড়ো হয়েছে জামছড়ি ও আশারতলী সীমান্তের নোম্যানসল্যান্ডে। গতকাল সন্ধ্যা থেকে ভারি গোলা বর্ষণের শব্দ শোনা গেলে উপজেলার আশারতলী জামছড়ি, পানছড়ি, লেমুছড়ি ও চাকঢালার
সীমান্তবর্তী এলাকায় টহল জোরদার করেছে বিজিবি।
নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আফসার (ইমন) জানান, গত ১১ মার্চ তিন দফায় জামছড়ি সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমার জান্তাবাহিনীর তিনজন কর্মকর্তাসহ ১৭৯ বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে  আশ্রয় নিয়েছিল। ওই দিন বিকালে মিয়ানমার থেকে ছোড়া গুলিতে ৮ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য সাবের আহম্মেদ আহত হয়েছিল। কয়েকদিন ধরে জামছড়ি ও আশারতলী শূন্য রেখা এলাকায়  তিন শতাধিক বিজিপি সদস্য বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার অপেক্ষায় আছে বলে জানিয়েছে সীমান্তবর্তী বাসিন্দারা।
বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, বর্তমান সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে এবং প্রশাসন ও বিজিবির পক্ষ থেকে পরিস্থিতি পর্যেবক্ষণ করা হচ্ছে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে গত তিনদিন থেমে থেমে গোলাগুলি চলে। কিন্তু রবিবার ৩৩ মিনিটে ২১টি মর্টারশেলের বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে এপারের টেকনাফ সীমান্তের কয়েকটি গ্রাম। রবিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাখাইন রাজ্যের জেলা শহর মংডু টাউনশিপের কিছুটা উত্তরে নাকপুরা এলাকায় হঠাৎ মর্টারশেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তবে রাত ১০টার পর থেকে সোমবার সকাল ১০টা পর্যন্ত আর বিস্ফোরণের শব্দ এপারের লোকজন শুনতে পাননি। 
জানা গেছে, নাফ নদীর এপারে টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের রাখাইনপল্লি চৌধুরীপাড়া ও ফুলের ডেইল গ্রাম। রাতে ৩৩ মিনিটে ২১টি মর্টারশেলের বিকট শব্দ এপারের লোকজনের মনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। দুপক্ষের মধ্যে লড়াই চলেছে। উভয় পক্ষের গোলাগুলি, মর্টারশেল, গ্রেনেড বোমা নিক্ষেপে ল-ভ- হয়ে পড়ে মংডু টাউনশিপের অভ্যন্তরীণ যোগাযোগব্যবস্থা।
এদিকে রবিবার সন্ধ্যায় আরাকান আর্মি স্থলপথে নাকপুরা এলাকার বিজিপি সেক্টর ঘিরে ফেলে এবং হামলা চালায়। এরপর বিজিপি সদস্যরাও পাল্টা জবাব দেয়। তখন রাত ৯টা ২৫ মিনিট থেকে টানা ৩৩ মিনিট মর্টারশেলের বিস্ফোরণ ঘটে। ধারণা করা হচ্ছে, আরাকান আর্মির অবস্থানের ওপর মর্টারশেলগুলো নিক্ষেপ করে সরকারি বাহিনী।
টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, রাতে বিকট শব্দের মর্টারশেলের বিস্ফোরণে কেঁপে উঠে টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া, চৌধুরীপাড়া, ফুলালপাড়া, ডেইলপাড়া, হাঙ্গারডেইলসহ অন্তত ১৩টি গ্রাম।

×