ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

এমপি আব্দুল হাইয়ের ইন্তেকাল 

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঝিনাইদহ

প্রকাশিত: ০০:৩৯, ১৭ মার্চ ২০২৪

এমপি আব্দুল হাইয়ের ইন্তেকাল 

আব্দুল হাই

ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই এমপি ইন্তেকাল করেছেন (ইন্না লিল্লাহি... রাজিউন)। শনিবার থাইল্যান্ডের ব্যাঙ্ককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ব্যাঙ্কক সময় সকাল ৭টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ব্যাঙ্ককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে সংকটাপন্নাবস্তায় তাকে ভর্তি করা হয়।তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।

মৃত্যুর বিষয়টি থাইল্যান্ডে অবস্থান করা তার ব্যক্তিগত সহকারী শহিদুল ইসলাম নিশ্চিত করেছেন। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, ১ মেয়ে ২ ছেলেসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তার মৃত্যুতে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু শোক বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে তিনি গভীর শোক ও শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি বলেন তার মৃত্যুতে দলের যে ক্ষতি হলো তা অপূরণীয়। এ ছাড়া নানা শ্রেণি পেশার মানুষ শোক বিবৃতি দিয়েছেন।
আব্দুল হাই এমপির জন্ম শৈলকুপা উপজেলার মহম্মদপুর গ্রামে। পিতা ফয়জুদ্দিন মোল্লা ও মাতার ছকিরন নেছা দম্পতির ৩ ছেলে ও ২ মেয়ের মধ্যে সবার ছোট তিনি। তার শিক্ষাজীবন শুরু পার্শ্ববর্তী মির্জাপুর গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। সেখান থেকে পাস করার পর ভর্তি হন বসন্তপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। মাধ্যমিক পাস করার পর ভর্তি হন ঝিনাইদহ কেশবচন্দ্র কলেজে। সেখান থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে পাস করেন বিএ।

 বসন্তপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অধ্যায়নরত অবস্থায় তিনি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ১৯৬৮ সালে তৎকালীন মহকুমা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পান তিনি। বিপদে-আপনে ছুটে যান কর্মীদের পাশে। সেই থেকে তার জনপ্রিয়তা শুরু। ১৯৬৯ সালে সরকারি কেসি কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হন।  একই বছর তিনি বৃহত্তর যশোর জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে ঝাঁপিয়ে পড়েন মুক্তিযুদ্ধে।

সেখানেও তিনি নেতৃত্বের স্বাক্ষর রাখেন। স্বাধীনতা বিরোধীদের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে জীবন বাজি রেখে তিনিই ঝিনাইদহে স্বাধীন বাংলার প্রথম পতাকা উত্তোলন করেন। দেশ স্বাধীনের পর তিনি ঝিনাইদহ যুবলীগের আহ্বায়ক ও ১৯৭৩ সালে যুবলীগের মহকুমা সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আশির দশকে জেলা আওয়ামী লীগের যুব ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন তিনি। পরে ১৯৮৭ সালে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং পরবর্তীতে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
১৯৯৬ সালে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ১৯৯৮ সালে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঝিনাইদহ-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। সেই নির্বাচনে সারাদেশে মাত্র ৫৮টি আসনে বিজয় লাভ করে আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য আসন ছিল বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই এর ঝিনাইদহ ১ (শৈলকুপা) আসন।
স্বাধীনতার টানা ৩০ বছর পর তিনি বিএনপির হাত থেকে শৈলকুপা আসনটি উদ্ধার করে আওয়ামী লীগের দখলে নেন। তিনি ২০০১ সালে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক নির্বাচিত হন। ২০০৫ সালে ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হন আব্দুল হাই এমপি। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী হিসেবে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

২০১২ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী হয়ে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৫ সালের কাউন্সিলে দ্বিতীয় বারের মতো ঝিনাইদহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন ও ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনেও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

২০২২ সালে জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তৃতীয়বারের মতো জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। সর্বশেষ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন তিনি। 
সংসদ সদস্য মো. আব্দুল হাইয়ের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 
এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, আব্দুল হাই ছিলেন বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের একজন একনিষ্ঠ কর্মী। স্থানীয় রাজনীতিতে তাঁর অবদান মানুষ চিরদিন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে। রাষ্ট্রপ্রধান মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তাঁর পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
অপর এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আব্দুল হাইয়ের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি মরহুমের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকাহত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
আব্দুল হাইয়ের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু। তিনি বলেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই এমপির মৃত্যুতে যে ক্ষতি হলো তা অপূরণীয়। এ ছাড়াও জেলার নানা শ্রেণি পেশার মানুষ তার মৃত্যুতে শোক বিবৃতি দিয়েছেন। 
ইবিতে শোক ॥ ইবি সংবাদদাতা জানান, ঝিনাইদহ-১ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাইয়ের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম। এ ছাড়া উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মাহবুবুর রহমান ও কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া পৃথক শোকবার্তায় শোক প্রকাশ করেছেন।

শনিবার বিশ^বিদ্যালয়ের তথ্য, প্রকাশনা ও জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এদিকে বিশ^বিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত ও সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় এক শোকবার্তায় গভীর শোক জানিয়েছেন।

×