ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ফজলে আজিম

বাঙালিয়ানায় বৈশাখী সাজ

প্রকাশিত: ০৮:২৪, ৩ এপ্রিল ২০২০

বাঙালিয়ানায় বৈশাখী সাজ

ঋতু বৈচিত্র্যের দেশ বাংলাদেশ। বছরে ৬টি ঋতু নিয়ে আসে প্রকৃতির নব নব সাজ। বছরজুড়েই এ দেশে চলে নানা উৎসব। কথায় আছে এ দেশে ১২ মাসে ১৩ মহাপার্বণ। সময়গুলোতে আনন্দমুখর পরিবেশ বিরাজ করে দেশজুড়ে। ছোট-বড়, নারী-পুরুষ সবাই মিলে একসঙ্গে উদযাপন করে দিনগুলো। ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে একাকার পরিবেশ মনে করিয়ে দেয় সবাই আমরা এক পরিবার। আর তাই বৈশাখকে বরণ করতে সমস্বরে সবাই গেয়ে ওঠে- এসো হে বৈশাখ এসো এসো...। বৈশাখ আসতে আর মাত্র কয়েকটা দিন। রাঙা বসন্ত এখন শেষের দিকে। ছোট-বড় সব বৃক্ষরাজি নব পত্রপল্লবে সেজেছে নবযৌবনে। আর কোকিলের মিষ্টি ডাক কিছুসময় পর পর মনে করিয়ে দিচ্ছে এখন বসন্ত। আর চারদিকে সবুজের হাতছানি মনে করিয়ে দিচ্ছে কিছুদিন পরই আসছে বৈশাখ। এবার বসন্তকে বিদায় দেয়ার পালা। যদিও এবার প্রকৃতি বেশ ভালভাবেই বরণ করেছে বসন্তকে। প্রাকৃতিক নিয়মেই এবার বসন্তকে বিদায় দেয়ার পালা। কারণ গ্রীষ্মের বার্তা নিয়ে আসছে বৈশাখ। ইতোমধ্যে মিষ্টি হিমেল হাওয়ার মাঝে তপ্ত রোদের লুকোচুুরি দেখে না বোঝার উপায় নেই সামনেই বাঙালীর মহাপার্বন বৈশাখী উৎসব। বাঙালীর প্রাচুর্যের প্রতীক বৈশাখকে বরণ করতে চারদিকে চলছে মহাপ্রস্তুতি। ফ্যাশন ডিনাইনাররা এখন পার করছেন ব্যস্ত সময়। এবারের বৈশাখকে ঘিরে তাদের নতুন সব ডিজাইনের পোশাক স্থান পেতে শুরু করেছে খ্যাতনামা বুটিকশপ ও শপিংমলগুলোতে। বেড়ে গেছে বুটিক হাউজগুলোতে অর্ডার আর বেচাবিক্রির ধুম। রাত-দিন চলছে নতুন সব ডিজাইনের পোশাক তৈরির কাজ। রাজধানীর মিরপুর, গাউছিয়া, নিউমার্কেট, মিরপুর-১, মিরপুর-১১, ধানমন্ডির দোকানগুলোতে বেড়েছে কেনাবেচা। সময়টিতে বেচাবিক্রি বেশ ভালই বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। বৈশাখকে ঘিরে তরুণদের চাহিদার মধ্যে রয়েছে পাঞ্জাবি, ফতুয়া, বৈশাখী শার্ট, গামছাসহ বেশকিছু নতুন ও ব্যতিক্রমী প্রসাধনী সামগ্রী। ফতুয়ায় বাঙালীর ঐতিহ্যবাহী ঢোল, একতারার ডিজাইনগুলো এবার কিছুটা ব্যতিক্রম ও নজরকাড়া। আর সেদিকেই ঝুঁকছেন অধিকাংশ ফ্যাশন সচেতন পুরুষ। পাঞ্জাবির চাহিদা বছরের অন্যসময়ের তুলনায় এ সময়টাতে থাকে একটু বেশি। বাঙালী বলে কথা। বাঙালীর উৎসবকে রাঙিয়ে বরণ করবে না, তা কি হয়; মোটেই না। পোশাকেও থাকতে হবে বাঙালীর ঐতিহ্য। আর তাই হাতে হালকা লাল রংয়ের কাজ, গলা ও পিঠে সাদামাটা লালের ছটায় বর্ণিল পাঞ্জাবিগুলোর চাহিদা বেশি। সাজতে পছন্দ করে না এমন মেয়েদের খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। উৎসব এলে তো কথাই নেই। নতুন পোশাক থাকা চাই। তাতে থাকা চাই বিশেষ দিনের বিশেষ ডিজাইন। বৈশাখ এলে তো লাল-সাদার ছড়াছড়ি। তপ্ত রোদে সাদা রংয়ের পোশাক তাপ শোষণ করে। আর তাই সবার নজর থাকে সাদার দিকে। বৈশাখকে বরণ করতে হোক আর গ্রীষ্মের খরতাপ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে মেয়েদের লাল সাদার দিকে দুর্নিবার আকর্ষণ আর সে চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ফ্যাশন ডিজাইনারদের। শাড়ির মধ্যে লালপাড়ি সাদাশাড়ির চাহিদা বেশ লক্ষণীয়। চাহিদার তালিকায় মেয়েদের ফতুয়া, থ্রি-পিসগুলোতেও রয়েছে লাল সাদার মিশ্রণ। প্রতিবারের মতো এবারও দেশজুড়ে তরুণ-তরুণীদের বর্ষবরণের প্রস্তুতি বেশ লক্ষণীয়। কেনাকাটার আগে একঝলক বাজার দর্শনে মেতে থাকা তরুণ-তরুণীদের অংশও কম নয়। পণ্যের পসরার মাঝে দেশীয় ঐতিহ্যে বিপণিবিতানগুলো সেজেছে ভিন্ন আমেজে। সবমিলিয়ে নগরজুড়ে বইছে সাজ-সাজ রব। বর্তমান সময়ে বৈশাখী শাড়ি পাঞ্জাবির পাশাপাশি টি-শার্ট, সালোয়ার কামিজ, ফতুয়া, টপস্ ইত্যাদির চাহিদা বেড়ে গেছে। আবার অনেকে তো সকালে পাঞ্জাবি তো বিকেলে ফতুয়া কিংবা টি-শার্ট পরে থাকেন। মেয়েদের ক্ষেত্রেও তাই। বৈশাখী উৎসবে নিজের জন্যই কেনাকাটা তা কিন্তু নয়। সারা বিশ্ব এখন করোনাভাইরাস আতঙ্কে দিন গুনছে। তাই মনে বৈশাখী উৎসবের সেই আনন্দ এখন সেভাবে নেই। যদিও ফ্যাশন হাউসগুলো বৈশাখী পোশাকের সমাহার ঘটিয়েছে। তাই হাউস খোলা মাত্রই পাবেন পছন্দের পোশাকগুলোরঙিন পোশাক পড়ে ছোট ছেলেমেয়েদের ঘোরাফেরা সরব করে তোলে চারপাশ। কখনও হাতে একটি একতারা বা বাঁশের বাঁশি সবই যেন তাদের আনন্দকে বাড়িয়ে দেয়। আর তাই বেশকিছু দোকানে থাকছে শিশুদের জন্য একতারা আর বাঁশের বাঁশি। তাছাড়া সব ফ্যাশন হাউস বাজারে নিয়ে এসেছে শিশুদের জন্য চমৎকার কালেকশন। বাচ্চাদের পাঞ্জাবি সেট, ফতুুয়া সেট, শার্ট, থ্রি-পিস, শাড়ি পাওয়া যাচ্ছে প্রায় সব দোকানে। বাজার ঘুরে ডিজাইন ও কাপড়ের ভিন্নতার কারণে দামের ক্ষেত্রে কিছুটা তারতম্য দেখা গেছে। দোকানগুলোতে বাচ্চাদের ফতুয়া সেট পাওয়া যাচ্ছে ২০০-৮০০ টাকায়। ছেলেদের ফতুয়া বিক্রি হচ্ছে ২২০-১২৫০ টাকার মধ্যে। শর্ট পাঞ্জাবির দাম পড়বে ৫০০ থেকে ১৩০০ টাকা। টি-শার্ট ২০০ টাকা থেকে ৪৫০ টাকা। বৈশাখী পাঞ্জাবির চাহিদা বেশি হওয়ায় দামটাও একটু বেশি। দাম শুরু হয়েছে ৬৫০ টাকা থেকে ১৮৫০ টাকা। সালোয়ার কামিজ ৮৫০ টাকা থেকে ২২৫০ টাকা। শাড়ি ৭৫০ টাকা থেকে ২৫৫০ টাকা। এ দেশের ট্রেডিশনাল ফোক মোটিভের নিরীক্ষাধর্মী নাগরিক নক্সা ব্যবহার করা হয়েছে পোশাক ও অনুষঙ্গে।
×