ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পাবনায় ধর্ষণ মামলার সাক্ষীকে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেয়ায় তোলপাড়

প্রকাশিত: ০৯:৩০, ২১ জানুয়ারি ২০২০

পাবনায় ধর্ষণ মামলার সাক্ষীকে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দেয়ায় তোলপাড়

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা ॥ পাবনা থানায় ধর্ষকের সাথে জোর করে গৃহবধুর বিয়ে দেয়ার পর এবার পুলিশের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলার সাক্ষী আব্দুল আলীমকে মোবাইলে ডেকে এনে ধর্ষকদের হাতে তুলে দেয়ার অভিযোগে প্রশাসনে তোলপাড়েরর সৃষ্টি হয়েছে।শুক্রবার সন্ধ্যায় সদও থানার মালিগাছা ইউনিয়নের গাছ পাড়ায় এ ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে ধর্ষক সন্ত্রাসীরা লোহার রড ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে আল আমীনকে গুরুতর আহত করেছে।তাকে উদ্ধার করে রাতেই পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তির পর অবস্থার অবনতি হলে রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসা শেষে আবারও পাবনায় স্থানান্তর করা হয়েছে। পুলিশ প্রশাসন এ ঘটনায় ৩ সদস্য তদন্ত কমিটি গঠণ করেছে। এ ঘটনার ফাঁস হওয়া সিসিটিভি ফুটেজে পাবনা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) খাইরুল ইসলাম ও একজন সিপাহীকে ঘটনাস্থলে দেখা গেছে। এ ঘটনায় ঐ পুলিশ কর্মকর্তা ও সন্ত্রাসীদের বিচার দাবী করেছেন ভুক্তভোগীর স্বজনরা। চরম উদ্বেগ জানিয়েছেন মানবাধিকার কর্মীরা। আহত যুবক আব্দুল আলীম জানান, পাবনা থানার ওসি (তদন্ত) খাইরুল ইসলাম তাকে মালিগাছা ইউনিয়নের এক ধর্ষণ মামলার সাক্ষী হওয়ায় তদন্তের বিষয়ে কথা বলতে শুক্রবার সন্ধ্যায় মোবাইলে গাছপাড়া মোড়ে দেখা করতে বলেন। তিনি ওসির ফোন পেয়ে গাছপাড়ায় এসে তার সাথে কথা বলতে থাকেন। এ সময় সেখানে আগে থেকেই অবস্থান করছিলো একদল স্বশস্ত্র সন্ত্রাসী দল। কিছুক্ষণ কথাপোকথনের পরেই ওই ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামী মালিগাছা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম শরিফের ছোট ভাই আরিফুলের সন্ত্রাসী বাহিনী তার উপর অতির্কিতে হামলা চালায়।ওসির সামনেই সন্ত্রাসীরা এলোপাথারী লোহার রড, হকিস্টিক দিয়ে পেটানোর পর ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে মোটর সাইকেলযোগে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এসময় পাবনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) খাইরুল ইসলাম ও একজন সিপাহী উপস্থিত থাকার পরও কোন বাঁধা না দিয়ে দাড়িয়ে থাকে। একপর্যায়ে ওসি এলাকা ত্যাগ করেন বলে আব্দুল আলীম অভিযোগ করেন।এ দিকে সদর থানার ওসি ধর্ষণ মামলার সাক্ষীকে ডেকে এনে সন্ত্রাসী ধর্ষকদের হাতে তুলে দেয়ার বিভিন্নমহলের অভিযোগ উঠলে পুলিশ ৩ সদস্য তদন্ত কমিটি গঠন করে। পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার গৌতম কুমার বিশ^াস হামলার ঘটনাকে আকস্মিক ও অনাকাঙ্খিত দাবী করে বলেন, তদন্তকারী কর্মকর্তার গাফিলতি আছে কিনা বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গোয়েন্দা) শামিমা আকতারকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সোমবার রাতে আহত আব্দুল আলীমের স্ত্রী রুমা খাতুন বাদী হয়ে দশ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ১০/১৫ জনের বিরুদ্ধে পাবনা থানায় মামলা দায়ের করেছে। মামলা নং-৬৫, তাং ২০/০১/২০২০ইং। পুলিশ দুই জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। গ্রেফতারকৃতরা হলেন, মনোহরপুর গ্রামের মো: তোফাজ্জল হোসেন ও মো: আশরাফ প্রামানিক। এ বিষয়ে আহত আব্দুল আলীমের মা আলেয়া খাতুন কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, আমার ছেলেকে পুলিশ ডেকে নিয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে তুলে দিলে সন্ত্রাসীরা পিটিয়ে কুপিয়ে জখম করে। তিনি এই ঘঁঠনা সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবী করেন। এ ব্যাপারে ওসি তদন্ত খাইরুল ইসলামের বক্তব্য নিতে তার কার্যালয়ে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তিনি একটি মামলায় রাজশাহী সাক্ষ্য দিতে গেছেন বলে পাবনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসিম আহম্মেদ জানান।
×