ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

দেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে চলছে ॥ তথ্যমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ৬ ডিসেম্বর ২০১৯

দেশ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে চলছে ॥ তথ্যমন্ত্রী

অনলাইন রিপোর্টার ॥ তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণের পথে। এ উন্নয়ন অগ্রগতি কখনো সম্ভব হতো না প্রকৌশলীদের অবদান ও ভূমিকা ব্যতিরেকে। শুক্রবার সকালে রাউজানের চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) সুবর্ণ জয়ন্তীর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, আমি এ ক্যাম্পাসে এসেছি বহু বছর আগে। আমার মনে হয়, যখন ছাত্রনেতা ছিলাম তখন এসেছিলাম ছাত্রলীগের সম্মেলনে। এরপরে হয়তো একবার এসেছিলাম সেটাও অনেক বছর আগে। কিন্তু প্রায় প্রতি সপ্তাহে অন্তত মাসে দু-একবার এ ক্যাম্পাসের সামনে দিয়ে আমার যাওয়া হয়, কিন্তু ভেতরে আসা হয়নি। এমন অপরূপ সুন্দর ক্যাম্পাস খুব কম বিশ্ববিদ্যালয়ের, কম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আছে। প্রকৃতির অপরূপ শোভায় শোভিত, যেন প্রকৃতি পরম আদরে লালন করছে এ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে। এমন ক্যাম্পাস সত্যিই বিরল। আজ থেকে ৫১ বছর আগে এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু হয়। প্রথমে এটি কলেজ ছিল। ৫০ বছর পূর্তি গতবছর হয়ে গেছে। নানা কারণে গত বছরে অনুষ্ঠানটি করা হয়নি এ বছর করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য। ৫১ বছরের পথচলায় এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বহু প্রকৌশলী তৈরি করেছে। যারা শুধু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে অবদান রাখছে তা নয় তারা সমস্ত পৃথিবীব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে অবদান রাখছে। যারা মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করছে তারা মরুভূমিতে সুরম্য অট্টালিকা তৈরিতে অনেক অবদান রেখেছেন। যারা প্রাচ্যের কিংবা পাশ্চাত্যের বিভিন্ন দেশে কাজ করছে তারা সেই দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধিতে অবদান রাখছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে অদম্য গতিতে এগিয়ে চলছে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নপূরণের পথে। বাংলাদেশে কবিতায় কুঁড়েঘর আছে, বাস্তবে কুঁড়েঘর খুঁজে পাওয়া কঠিন। বাংলাদেশ এখন স্বল্পোন্নত দেশ নয়, মধ্যম আয়ের দেশ। বাংলাদেশে পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি যখন লোকসংখ্যা ছিল ৪ কোটি ৭০ লাখ তখন খাদ্য ঘাটতি ছিল। আজ লোকসংখ্যা ১৬ কোটি ৭০ লাখ কিংবা তারও বেশি, সাড়ে তিনগুণের বেশি বেড়েছে। পঞ্চাশের দশকের তুলনায় মাথাপিছু জমি ২০-৩০ শতাংশ কমেছে। এরপরও পৃথিবীর সর্বনিম্ন মাথাপিছু জমি নিয়ে পৃথিবীকে অবাক করে দিয়ে খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে। জিডিপি গ্রোথ রেট পৃথিবীতে সব দেশের তুলনায় বেশি গত সাড়ে ১০ বছরে। এ উন্নয়ন অগ্রগতি কখনো সম্ভব হতো না প্রকৌশলীদের অবদান ও ভূমিকা ব্যতিরেকে। আমরা বাঙালিরা বৈশ্বিকভাবে হয়তো ধনী নই। কিন্তু মেধার দিক দিয়ে পৃথিবীর অনেক দেশ ও জাতি থেকে অনেক ধনী। অনেক জাতিগোষ্ঠীর তুলনায় আমরা অনেক মেধাবী। ইউরোপের বাইরে প্রথম যিনি সাহিত্য নোবেল পুরস্কার পান তিনি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। গাছের যে প্রাণ আছে তা যিনি প্রথম আবিষ্কার করেন তিনি বাঙালি, স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু। ২০ বছর আগে পৃথিবীর সর্বোচ্চ যে টাওয়ার ছিল সেই সিকাগোর টাওয়ারের স্থপতি ড. এফআর খান। অনেক সুরম্য অট্টালিকা তৈরিতে জড়িত বাংলাদেশ থেকে পাস করা প্রকৌশলীরা। তারা সিলিকন ভ্যালিতে কাজ করে। পৃথিবীর অনেক আইটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে। মেধার স্বাক্ষর যে এখানে রাখছেন তা নয়। পৃথিবীব্যাপী অবদান রাখছে এ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। তিনি বলেন, অ্যালামনাই উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছেন। অনেকে বিদেশ থেকে এসেছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়কে ঘিরে অনেক আবেগ, অনেক স্মৃতি। সেই আবেগ ও স্মৃতি নিয়ে তারা আজ ক্যাম্পাসে সময় কাটাবেন আমি জানি। পুরনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গেলে আবেগ থাকে। আজ ক্যাম্পাসে কিছুটা ঘোরার সুযোগ আমার হয়েছে। আমি অনুষ্ঠান শুরুর অনেক আগেই এসেছিলাম। আমি দেখেছি কীভাবে শিক্ষার্থীরা চারদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে, পুরনো স্মৃতি খুঁজে বেড়াচ্ছে। শুধু বস্তুগত উন্নয়ন দিয়ে উন্নত জাতি গঠন সম্ভব নয় মন্ত্রী বলেন, বস্তুগত উন্নয়নের মাধ্যমে উন্নত দেশ গঠন সম্ভব। বস্তুগত উন্নয়নের মাধ্যমে সুরম্য অট্টালিকা হয়, দীর্ঘ সেতু হয়, নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল হয়, ফ্লাইওভার হয়, পাহাড়ের মাঝখানে ফুটো করে সুড়ঙ্গ দিয়ে ট্রেন বা গাড়ি চলে। শুধু বস্তুগত উন্নয়ন দিয়ে উন্নত জাতি গঠন করা সম্ভবপর নয়। এটি ভিন্ন কাজ। প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্য শুধু বস্তগত উন্নয়নের মাধ্যমে উন্নত দেশ গঠন করা নয়, পাশাপাশি একটি উন্নত জাতিও গঠন করা। এর জন্য প্রতিটি মানুষের আত্মিক উন্নয়ন প্রয়োজন। আমরা উন্নয়ন চাই, রাষ্ট্রকে উন্নত করতে চাই। ইউরোপে ১০০ বছরে অনেক উন্নয়ন হয়েছে, কিন্তু ১০০ বিয়ের মধ্যে ৫০টি ভেঙে যাচ্ছে। আমরা উন্নয়ন চাই, কিন্তু ইউরোপের মতো সমাজকে সেই জায়গায় নিয়ে যেতে চাই না। ইউরোপে অনেক উন্নয়ন হয়েছে, কিন্তু মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটলে পাশ দিয়ে শত শত গাড়ি চলে যায়। কেউ এক পলক তাকায় না। আমরা উন্নয়ন চাই কিন্তু সমাজকে সেই পর্যায়ে নিয়ে যেতে চাই না। ইউরোপে অনেক সন্তান ভালো স্কুলে পড়ে, অনেক মেধাবী, তারা ভালো শিক্ষা পায় কিন্তু যখন বড় হয় তখন মা-বাবাকে ওল্ড হোমে দিয়ে দেন। আমরা সমাজকে সেই জায়গায় নিয়ে যেতে চাই না। অবকাঠামোর উন্নয়ন, উন্নত দেশ গঠনের পাশাপাশি উন্নত জাতিও চাই। এর জন্য মেধা, মূল্যবোধ, মমত্ববোধ, দেশাত্মবোদের সমন্বয় প্রয়োজন চাই। শুধু বস্তুগত উন্নয়ন দিয়ে বেশিদূর যাওয়া যাবে না। ইউরোপে এটি মাথাব্যথা। মানুষ শুধু নিজেকে নিয়ে ভাবে, পরিবারকে নিয়েও ভাবে না। পরিবার ছোট হয়ে যাচ্ছে। আত্মকেন্দ্রিকতা আমাদের সমাজ যেন অন্ধ অনুকরণের দিকে অগ্রসর না হয়। এ লক্ষ্যে আমাদের কাজ করা প্রয়োজন। ব্যক্তি জীবনে স্বপ্ন না থাকলে যেমন স্বপ্ন পূরণের তাগাদা, তাড়না থাকে না। রাষ্ট্রীয় জীবনেও স্বপ্ন থাকতে হয়। তা না হলে তাগাদা থাকে না, তাড়না থাকে না। প্রধানমন্ত্রী দুইটি স্বপ্রে কথা বলেছিলেন, দিনবদল ও ডিজিটাল বাংলাদেশ। আজ দিনবদল হয়েছে। সন্ধ্যার পরে কিংবা ভরদুপুরে মা বাসি ভাত দেন এ ডাক শোনা যায় না। বাসি ভাতের সমস্যা আমরা সমাধান করেছি। আকাশ থেকে চট্টগ্রাম শহর চেনা যায় না। ঢাকা শহর চেনা যায় না। দিন বদল হয়েছে। ১৫ কোটি মানুষ মোবাইল ব্যবহারকারী। মোবাইল ফোনে ভিডিও কল করা যায়। মোবাইল ফোনে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে টাকা পাঠানো যায়। ভোলার মনপুরা থেকে টেলিমেডিসিন সেবা মেলে। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা হবে, স্বপ্নের ঠিকানাকে অতিক্রম করা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। বক্তব্য দেন চুয়েটের উপাচার্য ড. রফিকুল আলম। অনুষ্ঠানে বিআইটির সাবেক পরিচালক ড. একেএম ইকবাল হোসেন, অধ্যাপক সৈয়দ মতিনুর রশিদ, অধ্যাপক আ ক ম রেজাউল করিম, সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক মো. মোজাম্মেল হক, অধ্যাপক মো. জাহাঙ্গীর আলমকে সম্মাননা জানানো হয়।
×