ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

মনিটরিং জোরদার

চালের মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে রাখতে হবে

প্রকাশিত: ১০:২৩, ৩ ডিসেম্বর ২০১৯

  চালের মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে  রাখতে হবে

তপন বিশ্বাস ॥ চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতার ক্রয়মূল্য তালিকা ঝুলিয়ে রাখার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি মনিটরিং জোরদার করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে তিনটি কমিটি গঠন ও একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। এ বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জনকণ্ঠকে বলেন, ইতোমধ্যে চালের বাজার কিছুটা কমে এসেছে। ভবিষ্যতে ব্যবসায়িক কারসাজিতে যাতে কেউ চালের দাম বাড়াতে না পারে সেই লক্ষ্যে সব বিক্রেতাকেই ক্রয়মূল্য ঝুলিয়ে রাখতে হবে। কেউ অযৌক্তিক দামে বিক্রি করলে জনগণই তা কন্ট্রোল রুমকে অবহিত করবেন। আর কন্ট্রোল রুম মন্ত্রণালয়কে তাৎক্ষণিক তা অবহিত করবে। সঙ্গে সঙ্গে মন্ত্রণালয়ও এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন। দুই-এক দিনের মধ্যে এ বিষয়ে একটি আদেশ জারি করা হবে। আদেশ প্রকাশের পর, মনিটরিং টিম সারাদেশে তা পর্যবেক্ষণ করবে। যারা ক্রয়মূল্যের তালিকা ঝুলিয়ে রাখবে না তাদের প্রথমবারের মতো সতর্ক করা হবে। এরপরও না করলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং নিয়মিত বাজার মনিটরিং করতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ইতোমধ্যে তিনটি কমিটি এবং একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। মানুষ এই কন্ট্রোল রুমে তাদের অভিযোগ জানাতে পারবেন। অভিযোগের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে খাদ্য মন্ত্রণালয়। রবিবার খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করা হয়েছে। চালের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ইতোমধ্যেই চাল ব্যবসায়ী ও মিল মালিকদের সঙ্গে বৈঠকসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে এবং তিনটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। মানুষ তাদের অভিযোগ কন্ট্রোল রুমে ফোন করে জানাতে পারবেন। বাজারদর মনিটরিং কমিটির কার্যপরিধির মধ্যে রয়েছে ঢাকা মহানগরের বড় বড় পাইকারি বাজার সরজমিনে পরিবীক্ষণ করে প্রতিবেদন দাখিল, বাজার পরিদর্শনের দিন বাজার দর ও আগের দুই দিনের বাজারদর সংগ্রহ করে প্রতিবেদন প্রস্তুত এবং বাজারে চাল ও আটার বিক্রয় ও ক্রয়মূল্য সংগ্রহ করে তা খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদফতরে প্রেরণ করা। বাজারদর মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা কমিটিগুলো প্রতিদিন তিনটি করে বাজার মনিটরিং করবে। কমিটি-১ এর নেতৃত্বে রয়েছেন সিনিয়র সহকারী সচিব মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান; কমিটি-২ এর নেতৃত্বে আছেন খাদ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক মোঃ ফারুক হোসেন ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নুরুল আলমের নেতৃত্বে কমিটি-৩ গঠন করা হয়েছে। প্রতি কমিটিতে তিনজন করে সদস্য রয়েছেন। এই তিনটি কমিটিকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বাজার মনিটরিং চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া জেলা প্রশাসকদের এ মনিটরিং কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। পাশাপাশি খাদ্য অধিদফতরের আওতাধীন জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের বাজার মনিটরিং কার্যক্রমে সম্পৃক্ত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং সার্বক্ষণিক খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখতে বলা হয়েছে। উল্লেখ্য, বাজার পরিস্থিতি নিয়ে যে কেউ কন্ট্রোলরুমে অভিযোগ জানাতে পারবেন। অভিযোগ কেন্দ্রের ফোন নাম্বার- ০২-৯৫৪০০২৭ এবং ০১৬৪২-৯৬৭৭২৭। বাজারে ধানের দাম কম থাকলেও হঠাৎ করে চালের দাম বেড়ে যায়। খুচরা বাজারে মিনিকেট চালের দাম ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়ে যায়। এ সময় খাদ্যমন্ত্রী মিলমালিকদের উদ্দেশে বলেন, বাজারে চালের দাম বৃদ্ধির যৌক্তিক কোন কারণ নেই। মিল ও বাজার মনিটর করে দেখা গেছে, মজুদের কোন ঘাটতি নেই, আমদানির কোন প্রয়োজন নেই, বরং রফতানি করার জন্য প্রস্তুত আছি। ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পাইকাররা কেজিতে ৫০ পয়সার বেশি লাভ করতে পারেন না, এর বেশি করলে দেশেকে আপনারা শোষণ করতে বসেছেন, এটাও সহ্য করা হবে না। খুচরা বাজার আপনাদের কন্ট্রোল করতে হবে মনিটরিং করতে হবে। সরকারী গুদামে ১১ লাখ ১২ হাজার ৬৭৪ টন চাল মজুদ আছে এবং চাল ও গম মিলিয়ে মজুদের পরিমাণ ১৪ লাখ ৫৯ হাজার মেট্রিক টন জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, মজুদের এই পরিমাণ অন্য বছরের তুলনায় বেশি। চালের দাম আর বাড়বে না- এমন শপথ নিতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান সাধন চন্দ্র মজুমদার, যিনি নিজেও পারিবারিক সূত্রে ধান-চালের ব্যবসায় জড়িত। বিগত ৭ দিনে খুচরা বাজারে মিনিকেট চালের দাম কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বাড়ার বিষয়টি তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, খুচরা বিক্রেতারা বৃদ্ধি করছে, যা বাড়ানো উচিত হয়নি। খুচরা বাজারে এটি হচ্ছে, চেষ্টা করব দাম যেন আর না বাড়ে। ভোক্তা অধিকার আইনের ব্যবস্থা নেয়া হবে। খাদ্যমন্ত্রী বলেন, গতবারের চেয়ে ধানের দাম কম রয়েছে, তাই চালের দামও কম হবে- এটাই কথা। কৃষক দাম পাবে না, মধ্যস্বত্বভোগী বেনিফিট বেশি নেবে- এটা চলতে দেয়া যাবে না।
×