ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

কোহলিদের দাপটে প্রথমদিনেই বিপাকে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:৫৬, ১৫ নভেম্বর ২০১৯

কোহলিদের দাপটে প্রথমদিনেই বিপাকে বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের অনেক ভাল কিছু করে দেখাতে হবে। তা নাহলে প্রথম ইনিংসে যে ব্যাটিং দুর্দশার চিত্র ফুটে উঠেছে, প্রথমদিনেই ১৫০ রানে গুটিয়ে গেছে, তাতেই যেন ম্যাচের হালও ফুটে উঠছে। শুরুতেই শেষের সুর মিলে যাচ্ছে। আর সেই সুর ভারতের জন্য যতটা সুমধুর হয়ে উঠছে, বাংলাদেশের জন্য ততটাই বিষাদময়। ভারত ১ উইকেট হারিয়ে ৮৬ রান করায় এখনও ৬৪ রানে পিছিয়ে রয়েছে। তবে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ পুরোটাই বিরাট কোহলির দলের হাতে আছে। বিরাটদের দাপটে প্রথমদিনেই চুপসে গেছেন মুমিনুলরা। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে খেলতে নামার আগে নিজ মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে খেলেছে ভারত। প্রোটিয়াদের তিন টেস্টেই নাজেহাল করে ছেড়েছে। টেস্টে দুর্দান্ত ফর্মে আছে। আর নিজ মাটিতে তো ভারত অপ্রতিদ্বন্দ্বীই হয়ে উঠেছে। গত সাত বছর ধরেই যে এক টেস্ট ছাড়া আর কোন টেস্টে হারেনি। গত দুই বছর আট মাস ধরে তো নিজ মাটিতে কোন টেস্টেই হারেনি ভারত। সেখানে বাংলাদেশ আর কতটা কি করতে পারবে। সেই ধারণা আগে থেকেই সবার ছিল। কিন্তু এতটাই খারাপ করবে বাংলাদেশ তা ধারণাতেই আসলে ছিল না। ভারত পেসারদের গতি-সুইং আর স্পিনারদের ঘূর্ণির সামনে এতটাই অসহায় আত্মসমর্পণ করেছেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা, একজন ব্যাটসম্যানও হাফ সেঞ্চুরির দেখা পাননি। মুশফিকুর রহিম শুধু ৪৩ রানের একটা ইনিংস খেলতে পেরেছেন। তাও আবার ভারত ফিল্ডারদের কল্যাণে। তিনবার ‘নতুন জীবন’ পেয়ে হাফ সেঞ্চুরির কাছাকাছি যান মুশফিক। চার-পাঁচটি ক্যাচ যদি হাতছাড়া না করতেন ভারতীয় ফিল্ডাররা তাহলে তো বাংলাদেশ ১০০ রানও করতে পারত না। মোহাম্মদ শামি ৩ উইকেট নেন। তবে ঐক্যবদ্ধ বোলিংয়ে ২ উইকেট করে নেয়া ইশান্ত শর্মা, উমেশ যাদব ও স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের নাজেহাল করে ছাড়েন। এরপর বিপজ্জনক ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মাকে (৬) আবু জায়েদ রাহী দ্রুতই আউট করে দেন। দিনের শেষভাগে মায়াঙ্ক আগারওয়ালকেও (৩৭*) আউট করার সুযোগ তৈরি করেন রাহী। কিন্তু ব্যাটিংয়ে যেমন, ফিল্ডিংয়েও ক্যাচ হাতছাড়া করেন ইমরুল। দিন শেষ হওয়ার আগে তাই চেতশ্বর পুজারাকে (৪৩*) নিয়ে মাঠ ছাড়েন ওপেনার আগারওয়াল। টেস্টে টস জেতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইন্দোরের হোলকার ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ শুরুতেই বাজিমাত করেছে। কিন্তু ভারতের মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে আগে ব্যাটিং নিয়েছে। বোঝাই যাচ্ছিল, সাত স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান, দুই পেসার, দুই স্পিনার নিয়ে খেলতে নামা মানেই টেস্টে ড্র’র আশা করা হয়েছে। কিন্তু উইকেটে যখন ঘাসের ছোঁয়া থাকে। শুরুতে পেসারদেরই দখলে থাকার আলামত থাকে। তখন আগে ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত আসলে দুঃসাহসিকই। তাই তো ভারতের সেরা ব্যাটসম্যান সুনীল গাভাস্কার টিভিতে যেমন বলেই দিয়েছেন, ‘এটি সাহসী সিদ্ধান্ত। শুরুর সময়টা দারুণ সতর্ক থাকতে হবে তাদের (বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের)। কারণ ভারতের পেস আক্রমণ দুর্দান্ত।’ বিরাট কোহলিও বলেছেন, তিনি আগে বোলিংই নিতে চেয়েছেন। তাই হলো। শুরুতে পেসাররা এমন গতির ঝড় তুললেন। সুইংয়ের ক্যারিশমা দেখালেন। এর সঙ্গে স্পিনাররা যুক্ত হয়ে বাংলাদেশকে শুরুতেই ডুবিয়ে দিলেন। দুই ওপেনার ইমরুল কায়েস (৬) ও সাদমান ইসলাম তো (৬) ভারতীয় পেসারদের গতি আর সুইংয়ে যেন কাঁপতে থাকেন। দলের ১২ রানেই ইমরুল ও সাদমান সাজঘরে ফেরেন। ইশান্ত শর্মার অভিজ্ঞ পেস আক্রমণ, এর সঙ্গে উমেশ যাদবের গতি আর মোহাম্মদ শামির গতির সঙ্গে মেশানো সুইং বলে একের পর এক ব্যাটসম্যান কাত হতে থাকেন। শুধু চতুর্থ উইকেটে মুশফিক-মুমিনুল মিলে ৫০ রানের বেশি জুটি গড়তে পারেন। ৬৮ রানের জুটি গড়েন। এছাড়া আর কোন জুটি থেকেই বড় কিছু মিলেনি। টেস্ট হচ্ছে ধৈর্যের খেলা। সাহস করে যত কঠিন বোলিংই হোক উইকেটে আঁকড়ে থাকতে হয়। রান আসবেই। কিন্তু সেই কাজটিই প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের কোন ব্যাটসম্যান করতে পারেননি। ইমরুল ও সাদমানের পর মোহাম্মদ মিঠুন (১৩) চেষ্টা করেও কুলিয়ে উঠতে পারেননি। দলের ৩১ রানে যখন ৩ উইকেট হারাতে হয় দল বিপদে পড়ে যায়। ভরসা তখনও থাকে। মুমিনুল উইকেটে থাকেন। মুশফিক যোগ দেন। এরপর মাহমুদুল্লাহ, লিটন কুমার দাস, মেহেদী হাসান মিরাজ থাকেন। একটি বড় জুটির দেখা মিললেই তো হলো। কিন্তু মুমিনুল-মুশফিক জুটি যখন দলের ৯৯ রানে ভাঙ্গে, পেসারদের দাপটের পর অশ্বিনের স্পিন জাদু শুরু হয়, মুমিনুল (৩৭) আউট হয়ে যান, এরপরই ভরাডুবির শুরু হয়ে যায়। ৩ রানে একবার ‘নতুন জীবন’ পেয়েও মুমিনুল বেশিদূর এগিয়ে যেতে পারেননি। স্পিন নিয়ে শুরু থেকেই ভীতি ছিল। সেই স্পিনেই বারবার পরাস্ত হন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। অশ্বিন যেমন মুমিনুল হককে আউট করার পর মাহমুদুল্লহ রিয়াদকেও (১০) সাজঘরে পাঠান। পেতে পারতেন আরও তিনটি উইকেট। এর মধ্যে মুশফিককে দুইবার আউট করার সুযোগ পান। কিন্তু রাহানে ক্যাচ মিস করেন। মাহমুদুল্লাহর ক্যাচও হাতছাড়া হয়। তা নাহলে দুটি উইকেট নয়, আরও তিনটি উইকেট অশ্বিনের ঝুলিতে জমা হতো। তবে শামি সেই কাজটি করতে ভুলেননি। মাহমুদুল্লাহ বাজে শটে আউট হওয়ার পর যে শামি ঝড় শুরু হলো তখন টপাটপ দুই বলে দুই উইকেট তুলে নিয়ে হ্যাটট্রিকের আশা জাগিয়ে তোলেন। দলের ১৪০ রানে মুশফিককে আউট করার পর মিরাজকেও সাজঘরের পথ দেখান। দুটি রিভিউ তখনও থাকে। কিন্তু মিরাজ রিভিউ নেননি। নিলে বেঁচে যেতেন। এলবিডব্লিউ যে হননি তা টিভি রিপ্লেতেই দেখা যায়। মুশফিক, মিরাজকে টানা দুই বলে শামি আউট করে দেয়ার পর মুহূর্তেই আর ১০ রানের মধ্যে লিটন কুমার দাস (২১), তাইজুল ইসলাম (১) ও এবাদত হোসেনও (২) আউট হয়ে যান। শেষ ৫১ রানে ৭ উইকেটের পতন হয়। ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচের প্রথম ইনিংসে এর আগে কখনই দেড় শ’ রানে বা তার নিচে অলআউট হয়নি বাংলাদেশ। এবারই প্রথম এমন বাজে অবস্থা হলো। এত ব্যাটসম্যান থাকার পরও বিপদ এড়াতে পারল না বাংলাদেশ। প্রথমদিনেই বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ল। এখন এই বিপদ দূর করার একটাই পথ আছে। দ্বিতীয় ইনিংসে খুব ভাল ব্যাটিং করতে হবে। তা নাহলে হারের পথ তৈরি হয়ে যাচ্ছে। ভারত যদি প্রথম ইনিংসে বড় স্কোর গড়ে। সেই স্কোর অতিক্রম করে প্রথম ইনিংসে যে হাল হয়েছে তাতে ইনিংস হার এড়ানোই তো কঠিন হয়ে পড়বে। ম্যাচ পাঁচদিনে নেওয়াও তো মহাকঠিন হবে। যেভাবে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা প্রথমদিন ব্যাটিংয়ে ভারত পেসারদের বোলিংয়ের সামনে কেঁপেছেন। মাহমুদুল্লাহ পাঁজরে গার্ড পরেও নেমেছেন। এই কম্পনেই আলামত মিলছে। শুরুতেই শেষের সুর বাজতে শুরু করে দিয়েছে। প্রথমদিনই এমন দাপট দেখিয়েছেন বিরাটরা, তাতে চুপসে গেছেন মুমিনুলরা।
×