ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

আরেকদফা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম

প্রকাশিত: ০৮:৪৬, ১১ নভেম্বর ২০১৯

আরেকদফা বেড়েছে পেঁয়াজের দাম

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে আরেক দফা বাড়লো পেঁয়াজের দাম। বর্তমান প্রতিকেজি আমদানিকৃত পেঁয়াজ ১৪০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে খুচরা বাজারে। মিসর ও তুরস্কের পেঁয়াজ আমদানি শুরু হওয়ায় কমতে শুরু করেছিল সব ধরনের পেঁয়াজের দাম। কিন্তু বুলবুলের প্রভাবে আবারও সেই পেঁয়াজের দাম বাড়তে শুরু করেছে। ঘূর্ণিঝড়ের আগে মিয়ানমারের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়। জানা গেছে, চলতি সপ্তায় মিসর ও তুরস্ক থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ দেশে ঢুকবে। এ কারণে আগেই বন্দর কর্তৃপক্ষকে দ্রুত পেঁয়াজ ছাড়করণে অনুরোধ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর দিয়ে ৬৬ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। আমদানিকৃত এসব পেঁয়াজের ৫ টন সম্প্রতি দেশে আনা হয়। এছাড়া দেশেও নতুন পেঁয়াজ দেখা যায় বাজারে। কিন্তু বুলবুলের প্রভাব ও অতিবৃষ্টির কারণে দেশেও পেঁয়াজের জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন স্থানের কৃষকরা। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কাজ শুরু করে দিয়েছে। তবে পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক রাখতে সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবি ট্রাকসেলে ৪৫ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছে। এতে করে স্বল্প আয়ের ক্রেতারা সস্তায় পেঁয়াজ কিনতে পারছে। এদিকে, আমদানিকৃত পেঁয়াজ দেশে ঢুকলে এর একটি ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্য সচিব মো. জাফর উদ্দীন। তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, মিসর ও তুসস্ক থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ দেশের পথে রয়েছে। ওই পেঁয়াজ বাজারে আসলে দাম কমে যাবে। এর পাশাপাশি নতুন পেঁয়াজ উঠবে এ মাসেই। এছাড়া ভারতের রফতানি বাজার চালুর জন্য কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। সরকারী এসব উদ্যোগের ফলে আশা করছি পেঁয়াজের দাম হ্রাস পাবে। এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অন্য একটি সূত্র বলছে, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে পেঁয়াজ খালাস হতে পারেনি। এতে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহে সঙ্কট তৈরি হয়েছে। ফলে সাময়িক সময়ের জন্য আবার দাম বেড়ে গেছে। তবে ঝড় কেটে যাওয়ায় এখন পেঁয়াজের সরবরাহ বাড়লে দামও কমবে। দাম বাড়ার কারণ সাময়িক বলে তিনি জানান। জানা গেছে, বছরে ২৪ টনের পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে, বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে ১৯ লাখ টন। অর্থাৎ ৫ লাখ টনের এই ঘাটতি পূরণ হচ্ছে আমদানিকৃত পেঁয়াজ দিয়ে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত থেকেই ৯৫ শতাংশ পেঁয়াজ আমদানি হয়ে থাকে। কিন্তু এবার ভারত নিজ প্রয়োজনে রফতানি বন্ধ করে দিলে দেশে লাগামহীন হয়ে পড়ছে পেঁয়াজের দাম। দফায় দফায় দাম বেড়ে খুচরা বাজারে এই পেঁয়াজ এখন ১৩০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মূল্যবৃদ্ধির কারসাজির পেছনে রয়েছে শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্র। অস্থির হয়ে পড়ছে বাজার। এ অবস্থায় সঙ্কট দূরীকরণে মিসর ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। পাশাপাশি ভারতের রফতানি বন্ধের আদেশ প্রত্যাহারে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। একই সঙ্গে পেঁয়াজে উৎপাদন বাড়ানোর কথা বলছে কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক ও বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। শীঘ্রই পেঁয়াজের উৎপাদন বাড়াতে এই দুই মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে একটি রোডম্যাপ করা হবে। এছাড়া কৃষি বিপণন অধিদফর থেকে পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক রাখতে ৭টি সুপারিশ তুলে ধরেছে। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে-চাহিদার তুলনায় উৎপাদন ঘাটতি থাকায় উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে, বছরের যে সময় পেঁয়াজের চাহিদা বৃদ্ধি পায় সে সময়কে চিহ্নিত করে পূর্ব থেকে প্রয়োজনীয় আমদানির ব্যবস্থা গ্রহণ করা, ব্যবসায়ীরা যাতে বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে মূল্যবৃদ্ধি করতে না পারে সে ব্যাপারে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার, এ্যান্টি হোল্ডিং এ্যাক্ট প্রয়োগ নিশ্চিত করা, মজুদদারী ব্যবস্থা কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রন, বাজার মনিটরিং জোরদার এবং সাপ্লাই চেইন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখতে হবে।
×