ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ডিএসইর ভয়ের বাধা ভেঙে রাস্তায় বিনিয়োগকারী

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ১৫ অক্টোবর ২০১৯

ডিএসইর ভয়ের বাধা ভেঙে রাস্তায় বিনিয়োগকারী

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রতিদিনের সূচক কমার আর বিনিয়োগকারীদের হৃদয়ের রক্তক্ষরণ বাড়ে। ক্ষরণ বাড়লেও তাদের কথা বলার উপায় নেই। যদিও প্রায় দুই মাস পরে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর কাছে অনুমতি নিয়ে মঙ্গলবার বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিক্ষুদ্ধ বিনিয়োগকারীরা। গত দুই মাসে অব্যাহত পতনেও প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক একচেঞ্জের কর্তাব্যক্তিদের মামলার ভয়ে ন্যূনতম রাস্তায় নামার যোগ্যতাই হারিয়েছিল। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছছে পুঁজি না থাকলেও প্রতিবাদের ভাষা ছিল না। শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করাই তাদের অপরাধ। তবে মঙ্গলবার সেই ভয়ের বাধা যেন ভেঙ্গেছিল। বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শেয়ারবাজারে প্রাথমিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে ঢাকা স্টক একচেঞ্জের ভূমিকা ববাবরই রহস্যজনক। শেয়ারধারী পরিচালকদের একক আধিপত্য ভেঙে দিতে ঢাকঢোল পিটিয়ে ডিমিউচুয়ালাইজেশন করা হলেও মাত্র চারজন শেয়ারধারী পরিচালকরাই এখন সবকিছুর নিয়ন্ত্রক রয়ে গেছেন। বিগত সময়ে শেয়ারবাজারে নানা ইস্যুতে যেমন প্লেসমেন্ট বাণিজ্য, জেড ক্যাটাগরির কোম্পানিগুলোকে তালিকাচ্যুতি, উদ্যোক্তাদের শেয়ার বিক্রি এবং আইপিও অনুমোদনের ইস্যু নানা সময়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছিল। এছাড়া কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রি নিয়ে চীন ও ভারতের দ্বন্দ্ব বেশ কিছু ইস্যুতে ডিএসইর ভূমিক নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষ সাধনে চীনের সঙ্গে চুক্তি করা হচ্ছে এমন বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে ডিএসইর ইস্যুকৃত শেয়ারের বেশি দাম পাওয়াই ছিল মূখ্য সেটা বলার অপেক্ষা ছিল না। চীনের কনসোর্টিয়ামকে শেয়ার বরাদ্দ দিতে গিয়ে ভারতের কনসোর্টিয়ামকে বাদ দেওয়া হয়েছিল। এই কনসোর্টিয়ামের বড় একটি ছিল বাংলাদেশী উদ্যোক্তারা। যারা আজও শেয়ারবাজার থেকে নিজেদের কিছুটা দূরে সরিয়ে রেখেছেন। শেয়ারবাজারে বর্তমান পতনে এটিও অন্যতম কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে ডিএসইর বর্তমান কমিটির একাধিক শেয়ারধারী পরিচালকের একান্ত ইচ্ছায় রহিমা ফুড ও মডার্ন ডাইং নামের দুটি কোম্পানিকে তালিকাচ্যুতির ঘটনা ক্ষতি করেছে বেশি। কারণ এর আগে বিভিন্ন সময়ে পতনের সময় আর কিছু না হলেও জেড ক্যাটাগরির শেয়ারের দর বাড়তো। কিন্তু এখনও সেটিও হচ্ছে না। অন্যদিকে তালিকাচ্যুতির আশঙ্কায় বিনিয়োগকারীরাও এখন লোকসানে কোম্পানিগুলো থেকে হাত গুটিয়ে নিচ্ছে। বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শেয়ার মার্কেটে শুধুমাত্র বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশ নেয় না। বেশিরভাগই ক্যাপিটাল গেইন করে থাকে। কিন্তু কোম্পানির তালিকাচ্যুতির ভয় দেখিয়ে এইসব কোম্পানির ক্যাপিটাল গেইন বন্ধ করা হয়েছে। অন্যদিকে উদ্যোক্তাদের শেয়ার বিক্রির বিষয়টি প্রথমে ডিএসই আলোচনায় আনে। তাদের শেয়ার বিক্রির সুযোগ না থাকলে শেয়ার মার্কেটে ভাল উদ্যোক্তারা আসবেন না জেনেও ডিএসইর পক্ষ থেকে এই শেয়ার বিক্রি নিয়ে অযথা সমালোচনা করেছে। কারণ ঘোষণা দিয়ে আইন মেনেও উদ্যোক্তার শেয়ার বিক্রি করতে পারে। সেটির ব্যতয় ঘটেছে কিনা সেটা দেখার বিষয় তো প্রাথমিক নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে ডিএসইর ওপর বর্তায়। কিন্তু তারা সেটি করেনি। সবমিলে ডিএসইর কর্ত্যাব্যক্তিদের আচরণ এখন ধরি মাছ না ছুঁই পানির মতো। সমালোচনাও তারা এখন সহ্য করতে পারছে না, বলে বিনিয়োগকারীদের মামলার ভয় দেখিয়ে চুপ করিয়ে দিতে চান না। তারা কোনভাবেই চান না এই বাজার গতি ফিরে পাক। জানা গেছে, ২৭ আগস্ট মঙ্গলবার ডিএসইর সিনিয়র এক্সিকিউটিভ (সিকিউরিটি ইনচার্জ) মো. মামুন-উর রশিদ মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেনও। এই জিডির পর আর বিনিয়োগকারীদের রাস্তায় দেখা যায়নি। এখন পতন হলে তারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে চুপ করে বসে থাকেন। যদিও মঙ্গলবার কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে বিনিয়োগকাীরা রাস্তায় নেমেছিল। সেখানে শেয়ারবাজারে স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর দ্রুত পদক্ষেপ কামনা করেন। গত ২৭ আগস্ট মতিঝিল থানায় দায়ের করা জিডিতে বলা হয়েঠিল, মঙ্গলবার আনুমানিক দুপুর ২-৩টা পর্যন্ত বাংলাদেশ পুঁজিবাজার ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের ব্যানারে ৯-১০ জন লোক ডিএসইর সামনে ব্যানার ও মাইকসহ বিক্ষোভ মিছিল করেন। ফলে ডিএসইর সদস্য, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যাতায়াত এবং অফিসের স্বাভাবিক কার্যক্রম সম্পাদনে বিঘœ ঘটে। আরও উল্লেখ করা হয়, ডিএসইর সামনে কিছুদিন ধরে তারা এ ধরনের বিক্ষোভ করছে এবং পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ও পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সম্পর্কে সম্মানহানিকর মন্তব্য করছেন। ডিএসই মনে করে এ ধরনের কার্যকলাপ দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে এবং বহির্বিশ্বে বাংলাদেশ পুঁজিবাজারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করছে। ফলে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত হচ্ছে- বলে সাধারণ ডায়েরিতে উল্লেখ করা হয়। মঙ্গলবারে বিক্ষোভ করা বিনিয়োগকারীরা বলেন, যেখানে বিনিয়োগকারীদের টাকা উধাও হয়ে যাচ্ছে সেখানে আন্দোলন করতে না দিয়ে উল্টো আমাদের কণ্ঠ রোধ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যেভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে শেয়ারবাজার সেটির সাথে তাল মেলাতে পারছে না।
×