ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শেখ হাসিনা সবার শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করেছেন ॥ ড. রাজ্জাক

প্রকাশিত: ০৮:২০, ২৫ নভেম্বর ২০১৭

শেখ হাসিনা সবার শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করেছেন ॥ ড. রাজ্জাক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সকলের শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ সহাবস্থান নিশ্চিত করেছেন বলে জানিয়েছেন সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার অনেক আগেই সাম্প্রদায়িক, জঙ্গী ও স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই ঘোষণা করেছে। এজন্য তিনি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছেন। সম্প্রতি নিজ দেশে হত্যা, নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে তিনি ‘মাদার অব হিউমিনিটি’ উপাধি পেয়েছেন। শুক্রবার বনানীতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন মাঠ প্রাঙ্গণে ঢাকাবাসী গারোদের দিনব্যাপী ‘ঢাকা ওয়ানগালা- ’১৭ উদযাপনের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ঢাকা ওয়ানগালার নকমা শ্যামল সি দিব্রার সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকায় ফিলিপিন্সের রাষ্ট্রদূত ভিসেন্তে ভিভেনসিও টি বান্দিলো, গারো কবি ও সাহিত্যিক মত্যেন্দ্র মানখিন, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের সাবেক ভিপি ডাঃ বিলিয়ম অনিষীম সাংমা, নয়ানগর খ্রীস্টান কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন লিমিটেডের প্রেসিডেন্ট মার্টিন এস পেরেইরা, ঢাকা ওয়ানগালার সাবেক নকমা পবিত্র মান্দা ও দৈনিক জনকণ্ঠের সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার নিখিল মানখিন প্রমুখ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন শুভজিত সাংমা। গারো সম্প্রদায়ের জন্য বর্তমান সরকার গৃহীত বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচীর কথা উল্লেখ করে ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকার বড় অংশ গারো ভোটার। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির প্রতি তাদের আস্থা ও সমর্থন রয়েছে। আর গারোদের উন্নয়নে আন্তরিক রয়েছে বর্তমান সরকারও। বর্তমানে গারো এলাকাসমূহে শোষণ-নির্যাতন, সম্প্রদায়িক আচরণ এবং ভূমি লুণ্ঠনের ঘটনা বহুগুণ কমে গেছে। অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিভিন্ন কল্যাণকর কর্মসূচী বাস্তবায়িত হচ্ছে। আর তাদের সংস্কৃতি বিকাশেও সহায়ক ভূমিকা রাখছে সরকার। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় থাকলে সকলে স্বস্তিতে জীবনযাপন করতে পারেন বলে জানান ড. আব্দুর রাজ্জাক। এদিকে শুক্রবার রাজধানীর বনানীর ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন মাঠ প্রাঙ্গণে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনা ও আনন্দমুখর পরিবেশে উদযাপিত হয়েছে গারো সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় সামাজিক অনুষ্ঠান ‘ওয়ানগালা’। উৎসবে আট সহ¯্রাধিক গারো নর-নারীর সমাগম ঘটে। শিশুদের উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। শহুরে জীবনের কর্মব্যস্ততার ফাঁকে দিনভর তারা নিজেদের মতো করে আনন্দে মেতে থাকে। স্কুল মাঠে গড়ে তোলা হয় বিভিন্ন পণ্যের অস্থায়ী স্টল। ওই সব স্টলে স্থান পায় গারো সংস্কৃতি ও আবেগবিজড়িত পোশাক, খাবার, শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য। ঢাকা ওয়ানগালার বিদায়ী নকমা (সমাজ প্রধান) শ্যামল সি দিব্রা জনকণ্ঠকে জানান, ‘ওয়ানগালা’ ধন্যবাদ বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশের উৎসব। আদিবাসী গারোদের বিশ্বাস, শস্য দেবতা বা ‘মিশি সালজং’ পৃথিবীতে প্রথম ফসল দিয়েছিলেন এবং তিনি সারা বছর পরিমাণ মতো আলো-বাতাস, রোদ-বৃষ্টি দিয়ে ভাল শস্য ফলাতে সহায়তা করেন। তাই নবান্নে নতুন ফসল ঘরে তোলার সময় ‘মিশি সালজং’কে ধন্যবাদ জানাতে উৎসবের আয়োজন করে গারোরা। ফসল দেবতাকে উৎসর্গ না করে তারা কোন খাদ্য ভোগ করে না। ‘ওয়ানগালা’ আদিবাসী মান্দি বা গারোদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব। শুক্রবার সকালে দেবতাদের পূজার মাধ্যমে শুরু হয় ‘ওয়ানগালা উৎসব’। ‘আমুয়া’, ‘রুগালা’র মতো ধর্মীয় আচার পালন করা হয়। দুপুরের বিরতির পর শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে নিজস্ব ভাষায় গান গেয়ে শোনান গারো শিল্পীরা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বিশেষ আকর্ষণ ছিল গারোদের ঐতিহ্যবাহী জুম নাচ। উৎসবে উপস্থিত গারারো জানায়, ওয়ানগালা একই সঙ্গে ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসব। ওয়ানগালা উৎসব পাহাড়ী জুমচাষকে কেন্দ্র করে উদযাপিত হয়ে থাকে। নতুন ফসল তোলার পরে নকমা (গ্রাম প্রধান) সবার সঙ্গে আলোচনা করে অনুষ্ঠানের তারিখ নির্ধারণ করেন।
×