ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

৭ মার্চের ভাষণের বিশ্ব স্বীকৃতি উদ্্যাপনে আজ নাগরিক সমাবেশ

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৮ নভেম্বর ২০১৭

৭ মার্চের ভাষণের বিশ্ব স্বীকৃতি উদ্্যাপনে আজ নাগরিক সমাবেশ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আজ শনিবার দুপুরে নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের বিশ্ব স্বীকৃতি উদযাপানে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে এ নাগরিক সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে। সমাবেশে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। সভাপতিত্ব করবেন নাগরিক কমিটির সভাপতি ইমিরেটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। সমাবেশ শুরু হবে জাতীয় সঙ্গীত, ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠ আর বাংলাদেশের ইতিহাসের সেই দিনটি নিয়ে নির্মলেন্দু গুণের কবিতা আবৃত্তির মধ্য দিয়ে। এ আয়োজনের প্রস্তুতি দেখতে শুক্রবার সকালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, এই সমাবেশ হবে তাদের, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনায় বিশ্বাসী, যারা বঙ্গবন্ধুকে ভালবাসেন। এটা কোন পাল্টাপাল্টি রাজনৈতিক সমাবেশ নয়। কোন রাজনৈতিক সমাবেশও নয়। সাড়ে চার দশক আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, সেই ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই (তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান) ৭ কোটি বাঙালীকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি ঘোষণা দেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ তার ওই ভাষণের ১৮ দিন পর পাকিস্তানী বাহিনী বাঙালী নিধনে নামলে বঙ্গবন্ধুর ডাকে শুরু হয় প্রতিরোধ যুদ্ধ। নয় মাসের সেই সশস্ত্র সংগ্রামের পর আসে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। বিভিন্ন দেশের আরও ৭৭টি ঐতিহাসিক নথি ও প্রামাণ্য দলিলের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণকেও গত মাসের শেষে ‘ডকুমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে ‘মেমোরি অফ দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টারে’ যুক্ত করে নেয় ইউনেস্কো। এ স্বীকৃতির উদযাপনেই আজ শনিবার নাগরিক কমিটির ব্যানারে সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে স্বাধীনতার উদ্যান সোহ্রাওয়ার্দীতে, যেখানে বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন, যেখানে পাকিস্তানী বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্যে দিয়ে লেখা হয়েছিল বাঙালীর মুক্তির দলিল। নাগরিক সমাবেশের জন্য সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে মঞ্চ বানানো হয়েছে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক নৌকার আদলে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য সামনে থাকছে আলাদা একটি মঞ্চ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ভাষণ নিয়ে কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছিলেন ‘স্বাধীনতা- এই শব্দটি কীভাবে আমাদের হলো’। নাগরিক সমাবেশের মঞ্চে কবি সেই কবিতাটি পাঠ করবেন বলে ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন। নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক হারুন-অর রশিদ জানান, সাংবাদিক গোলাম সারওয়ার, শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল ও বাংলাদেশে ইউনেস্কোর কান্ট্রি ডিরেক্টর বিট্রিস কালদুল নাগরিক সমাবেশে বক্তব্য রাখবেন। ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেবেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি ইউনেস্কোর প্রতিনিধির হাতে একটি ধন্যবাদ স্মারকও তুলে দেবেন। নাগরিক সমাবেশে আলোচনা ছাড়াও থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন। নির্মলেন্দু গুণ ছাড়াও সেখানে আবৃত্তি করবেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে শিল্পকলা একাডেমির সমবেত সঙ্গীতের পর শুরু হবে একক সঙ্গীত। কিরণ চন্দ্র রায়ের স্ত্রী চন্দনা মজুমদার লোক গাইবেন। রবীন্দ্র সঙ্গীত শোনাবেন সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরীর ছেলে শিল্পী সাজেদ আকবর। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় থাকবেন অভিনেতা রামেন্দু মজুমদার ও শহীদ বুদ্ধিজীবী আবদুল আলীম চৌধুরীর মেয়ে ডাঃ নুজহাত চৌধুরী। এ নাগরিক সমাবেশ সফল করতে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে ব্যাপক প্রস্তুতি। দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সম্পাদকম-লী, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আলাদাভাবে সভা করেছে। সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনগুলোও আলাদাভাবে প্রস্তুতি সভা করেছে। ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, এ নাগরিক সমাবেশ স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সমাবেশ হবে বলে আমরা আশা করছি। চারদিকে অভূতপূর্ব সাড়া পাচ্ছি। দল-মত নির্বিশেষে জনতার বিস্ফোরণ ঘটবে আজকের সমাবেশে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, নাগরিক সমাবেশ বিএনপির সঙ্গে পাল্টাপাল্টি ধরনের কোন সমাবেশ নয়। আর আওয়ামী লীগ বিএনপির সঙ্গে পাল্টাপাল্টি কোন ধরনের কর্মসূচী পালন করে না। বিএনপির ১২ নবেম্বরের সমাবেশের অনেক আগেই এ কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিএনপিই আওয়ামী লীগের নাগরিক সমাবেশকে ফলো করে পাল্টাপাল্টি সমাবেশ করেছে। এ সময় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম, সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×