ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

পাসপোর্টের ছবি সত্যায়ন ও পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিল দাবি টিআইবির

প্রকাশিত: ০৫:১২, ২২ আগস্ট ২০১৭

পাসপোর্টের ছবি সত্যায়ন ও পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিল দাবি টিআইবির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বহির্গমনের জন্য পাসপোর্ট ইস্যুর ক্ষেত্রে নাগরিকদের অযথা হয়রানি ও দুর্নীতি বন্ধ করতে ছবি সত্যায়ন ও পুলিশ ভেরিফিকেশনের নিয়ম বাতিলের দাবি জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সোমবার রাজধানীর ধানম-িতে সংস্থাটির মেঘমালা সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির পক্ষ থেকে এ সুপারিশ করা হয়। ‘পাসপোর্ট সেবায় সুশাসন : চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণে করণীয়’ শীর্ষক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। একই সঙ্গে পাসপোর্ট সেবায় আগের চেয়ে দুর্নীতি পরিমাণে কমে আসলেও সেবার মান প্রত্যাশিত পর্যায়ে যায়নি বলে দাবি করা হয়। গবেষণায় পুলিশী ভেরিফিকেশন বাতিলের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, নতুন পাসপোর্ট আবেদনে পুলিশ প্রতিবেদন ব্যবস্থা সাধারণ আবেদনকারীদের হয়রানি ও দুর্নীতির অন্যতম মাধ্যম। নতুন পাসপোর্ট গ্রহণের জন্য ৭৬ দশমিক ২ ভাগ নাগরিক পুলিশী তদন্তে অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৭৫ দশমিক ৩ শতাংশ সেবাগ্রহীতাকে ঘুষ বা নিয়ম বহির্ভূতভাবে অর্থ দিতে হয়েছে। পাসপোর্ট অফিসের সেবায় ঘুষ বা নিয়ম-বহির্ভূত অর্থ দেয়ার গড় পরিমাণ ২ হাজার ২শ’ ২১ টাকা। এছাড়া ঘুষ বা নিয়ম-বহির্ভূত অর্থ হিসেবে গড়ে ৭শ’ ৯৭ টাকা গ্রাহককে দিতে হয়েছে ও পাসপোর্ট বিতরণে অফিস নির্ধারিত সময়ের পর গড়ে ১২ দিন, সর্বোচ্চ ৪৪.৮ দিন এবং সর্বোনিম্ন ৪.৪ দিন বিলম্ব হয়। গবেষণা প্রতিবেদনটি তৈরি ও উপস্থাপন করেন টিআইবি’র প্রোগ্রাম ম্যানেজার (রিসার্চ এ্যান্ড পলিসি) মোঃ শাহনূর রহমান। সম্মেলনে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপার্সন এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, সদস্য এম হাফিজউদ্দিন খান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসানসহ টিআইবি’র অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সম্মেলনে টিআইবি’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সত্যায়নের কারণে হয়রানি হতে হয়। তাই দুর্নীতি বন্ধে পুলিশ ভেরিফিকেশন বিধান বাতিল করতে হবে। আমরা এর আগের প্রতিবেদনেও তাই বলেছিলাম। সরকার ও পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষের একাংশ এ ব্যাপারে একমত। কিন্তু পুলিশের একটি অংশ তা বাতিল করতে চান না। পুলিশের রাখার ইচ্ছা না থাকলে তারা স্বপ্রণোদিত হয়ে এটা বাতিল করতে পারে। একটি পাসপোর্ট করতে গেলে মোট ১৮টি পর্যায় অতিক্রম করতে হয়। সেবাগ্রহীতা পাসপোর্ট তৈরিতে শতকরা ৪১ ভাগ দালালের সহায়তা নেন। বর্তমানে পাসপোর্ট পেতে দালালের কাছে যাওয়া এক প্রকারের সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই দালাল চক্র ভাঙ্গতে হবে। অফিসের ভেতরের লোকদের সহায়তায় এসব দালাল কাজ করে। এছাড়া সারাদেশেই পাসপোর্ট কর্তৃপক্ষের ঘাটতি রয়েছে। এছাড়া অবকাঠামো ঘাটতির পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ প্রদান কার্যক্রম নেই বললেই চলে। তিনি বলেন, অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ জনবান্ধব নয়। তা সহজ করতে হবে। টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বলেন, পাসপোর্ট খাতে অনিয়মের সবচেয়ে বড় কারণ হলো সাধারণ মানুষের অভিগম্যতায় বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা। পুলিশ ভেরিফিকেশন ও আবেদন ফরম সত্যায়নের বিধানটি রাষ্ট্র ও জনগণের মধ্যে বিশ^াসহীনতার একটি ঔপনিবেশিক সংস্কৃতিরই বহির্প্রকাশ পাসপোর্ট কার্যালয়গুলোর ভেতরের কিছু কর্মকর্তাদের প্রশ্রয় না থাকলে দালালদের দৌরাত্ম্য থাকত না। সংস্থাটি ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের সেবার মান উন্নয়ন, টেকসইকরণ এবং দুর্নীতি-অনিয়ম রোধে স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী হিসেবে দুই ভাগে মোট ১২টি সুপারিশ করেছে। দীর্ঘমেয়াদী সুপারিশে পাসপোর্ট ইস্যুর ক্ষেত্রে পুলিশ ভেরিফিকেশন বাতিলের কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, সব নাগরিকের জন্য ‘বায়োমেট্রিক ডাটা ব্যাংক’ তৈরির পাশাপাশি স্মার্ট কার্ড প্রস্তুত ও বিতরণ অবিলম্বে সম্পন্ন করতে হবে। অপরাধীদের তথ্য সংক্রান্ত ‘অপরাধী তথ্যভা-ার’ আধুনিক ও যুগোপযোগী করার পাশাপাশি এই তথ্য ভা-ারের সঙ্গে পাসপোর্ট অফিস ও ইমিগ্রেশন চেকপোস্টের সংযোগ স্থাপনের কথা বলা হয়। এছাড়া পাসপোর্টের মেয়াদ পাঁচ বছরের পরিবর্তে দশ বছর করার সুপারিশ করা হয়। অন্যদিকে, পুলিশ প্রতিবেদন তৈরিতে এসবি পুলিশ দ্বারা আবেদনকারীদের হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে। এর মধ্যে আবেদনপত্রে অযথা ত্রুটি খুঁজে বের করা, আবেদনকারীকে জঙ্গী কার্যক্রম বা অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ততার ভয় দেখানো, বাড়িতে না এসে চায়ের দোকান বা থানায় ডেকে পাঠানোর কথা বলা হয়েছে। এছাড়া নিয়ম বহির্ভূতভাবে অর্থ বা ঘুষ দাবি করা এবং ক্ষেত্র বিশেষে তা বিকাশে পাঠাতে বলা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। পাসপোর্ট অফিস ও এসবি অফিসের মধ্যে পুলিশ প্রতিবেদন সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদানে সমস্যা ও সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলেও উঠে এসেছে টিআইবি’র গবেষণা প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, পাসপোর্ট অফিস থেকে অনলাইনে আবেদনকারীর তথ্য পাঠানো হলে এসবি অফিসগুলোর একাংশ থেকে প্রতিবেদন অনলাইনে পাঠানোর ক্ষেত্রে ঘাটতি রয়েছে। আবার কিছু এসবি অফিস থেকে অনলাইনে তথ্য পাঠানো হলেও তা দেরিতে পাঠানো হয়। এতে পাসপোর্ট প্রক্রিয়া বিলম্বিত হয়। গবেষণায় বলা হয়, স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) পুলিশ কর্মকর্তাদের মতে, প্রতিবেদন অনলাইনে পাঠানোর ক্ষেত্রে তারা কিছু কারিগরি সমস্যার সম্মুখীন হন। এর মধ্যে রয়েছে, অনলাইনের লিংক সব সময় কাজ না করা, অনলাইনে পাঠানোর জন্য এমআরপি প্রকল্পের আওতায় সরবরাহ করা যন্ত্রাংশ বিকল থাকা ও কারিগরি সমস্যা সমাধানে পাসপোর্ট অফিসের সময়মতো সাড়া দানে ঘাটতি রয়েছে।
×