ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

একটি রক্তাক্ত রাত

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ১৫ আগস্ট ২০১৭

একটি রক্তাক্ত রাত

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে তখন মাসের ১ম ও ৩য় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত নাইট ট্রেনিং করা হতো। অধিকাংশ সৈনিকের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান দানের জন্য অস্ত্র বের করা হলেও নাইট ফায়ারিং না থাকলে নাইট ট্রেনিংয়ের জন্য গোলাবারুদ বের করা হতো না। ট্যাঙ্ক/গাড়ি স্টার্ট, মেইটেন্যান্স ছিল চালকদের কাজ। কিন্তু ৭৫ এর ১৪ আগস্ট ঢাকা সেনানিবাসের মেজর ফারুকের ১ বেঙ্গল ল্যান্সার এবং তার নিকটাত্মীয় মেজর রশীদের ২ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি সেনাবাহিনীর স্থায়ী আদেশ অমান্য করে তারা নিজ নিজ ইউনিটের নাইট ট্রেনিং শুরু করে রাত ৯টার পর। সাধারণত অধিনায়কসহ সকল অফিসারই ট্রেনিং গ্রাউন্ডে থাকার কথা থাকলেও এক অথবা দু’জন অফিসার ব্যতীত ওই রাতে দুই ইউনিটেরই অধিকাংশ অফিসার তাদের অধিনায়কের অফিসে গোপন শলাপরামর্শে ব্যস্ত থাকে। তাদের মধ্যে অস্থিরতা বিরাজ করছিল। ২ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারি তাদের অফিসারের দায়িত্বে সীমিত সংখ্যক মর্টার ও মেশিনগানের গোলাবারুদ গোপনে বের করলেও সৈনিকদের অস্ত্রের গোলাবারুদ দেয়া হয়নি। রাত ১টায় ট্রেনিং সময় শেষ হলেও আধ ঘণ্টার বিশ্রাম দিয়ে আবারও জমায়েত হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। ইতোপূর্বে উভয় ইউনিটের কেউ যেন অনুমতি ব্যতীত বাইরে যেতে বা প্রবেশ করতে না পারে, তা নজরে রাখার জন্য অফিসারকে দায়িত্ব দেয়া হয়। রাত ১টা-৩০ মিনিটের সময় আর্টিলারি ইউনিটের সৈনিকদের আবারও জড়ো এবং সংখ্যায় সবাই উপস্থিত আছে কিনা নিশ্চিত করা হয়। এরপর যৌথভাবে ট্রেনিংয়ের নামে তাদের ৩ টন লরিতে ওঠার নির্দেশ এবং ১ বেঙ্গল ল্যান্সার ইউনিটে নিয়ে আসা হয়। রাত ৩টার কিছু পরে উভয় ইউনিটের সৈনিকদের একত্রিত করা হলে মেজর ফারুক, মেজর রশীদ, পূর্বে চাকরিচ্যুত মেজর ডালিম ও মেজর নূর যুদ্ধ পোশাকে সজ্জিত হয়ে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে বিষোদ্গার এবং তার সরকার উৎখাতে শামিল হওয়ার আহ্বান জানান। উপরোক্ত অফিসারদের বক্তব্য শেষে ১ বেঙ্গল ল্যান্সারের পক্ষ থেকে সৈনিকদের মাঝে গোলাবারুদ বণ্টন করা হয়। চাকরিরত ও চাকরিচ্যুত সব মিলিয়ে বারোজন অফিসারকে বিভিন্ন টার্গেটের দায়িত্ব ভাগ করে দেয়া হয়। মেজর ফারুক, মেজর রশীদ এবং মেজর ডালিম ভিন্ন ভিন্ন ভাবে টার্গেটসমূহের তত্ত্বাবধায়কের দায়িত্ব নেয়। রাত আনুমানিক ৪টার সময়ে বেশ কিছু জীপ ও লরির একাধিক কনভয় সেনানিবাস থেকে বের হয়ে আসে। কিছুক্ষণ পর ট্যাঙ্কও তাদের অনুসরণ করে। যাত্রার পূর্বে এমনভাবে সময় ও কনভয়ের অবস্থান নির্ধারণ করা হয়েছিল যে, সব টার্গেটে যেন প্রায় একই সময়ে আঘাত হানা যায়। সেই মোতাবেক কনভয়ের প্রথম ভাগে মেজর ডালিমের নেতৃত্বে একটি জীপ ও এক ট্রাক সৈন্য মহাখালী-মগবাজার হয়ে মিন্টো রোডে মন্ত্রী আঃ রব সেরনিয়াবাতের সরকারী বাসভবনে পৌঁছে কর্তব্যরত দুর্বল পুলিশী প্রহরা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ফেলে। মেজর রাশেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে আরেকটি দল ফার্মগেট-হোটেল ইন্টারকন হয়ে একই টার্গেট ২৯ মিন্টো রোডে উপস্থিত হয়ে সেরনিয়াবাতের বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে শুরু করে। গুলির শব্দে বাড়ির সকলের ঘুম ভেঙ্গে যায়। আঃ রব সেরনিয়াবাত কালবিলম্ব না করে রাষ্ট্রপতিকে ফোন করেন। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ফোনালাপ শেষ হওয়ার পূর্বেই মেজর রাশেদ চৌধুরী, ক্যাপ্টেন মোস্তফা ও তাদের দল গুলি ছুড়তে ছুড়তে দরজা ভেঙ্গে ঝড়ের বেগে দোতলায় উঠে যায়। তারা মন্ত্রী ও তার পরিবার এবং ক’জন অতিথিকে টেনে হেঁচড়ে নিচে নিয়ে আসে। এরপর লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে সাব মেশিন কার্বাইনের (এসএমসি) ট্রিগার চেপে ধরে। গুলির শব্দ এবং গুলিবিদ্ধ মানুষের আর্তনাদ ও গোঙানোর শব্দ যেন আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের আরশ পর্যন্ত কাঁপিয়ে দিচ্ছিল। চার বছরের শিশু শুকান্ত বাবুর মতো নিষ্পাপ শিশুও এই ঘাতকদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। মেজর আজিজ পাশা, রিসালদার মোসলেমউদ্দিনের অপর গ্রুপ প্রায় একই সময় ধানম-িতে যুব নেতা শেখ মনির বাসায় হানা দেয়। বিনা বাধায় বাড়ির দোতলায় উঠে এই গ্রুপটি শেখ মনি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে গুলি করে হত্যার পর ভাবলেশহীনভাবে বেরিয়ে ৩২ নং রোড ধানম-ির দিকে চলে যায়। খুনীরা কি সকলেই মুসলিম এবং শান্তির ধর্ম ইসলামে বিশ্বাসী ছিল? তৃতীয় দলটির টার্গেট-ধানম-ির ৩২ নং রোডের ৬৭৭ নং বাড়ি, যেখানে সপরিবারে অবস্থান করছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা শেখ মুজিব। যেহেতু এই টার্গেটে সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্য পাহারায় রয়েছে, তাই কিছুটা ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ভিন্নভাবে ঘায়েল করতে হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আর্টিলারির মেজর মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে একটি অংশ লেকের অপর পাড়ে মর্টার ও ভারি মেশিনগান নিয়ে, মেজর মহিউদ্দিন ল্যান্সারের গ্রুপ ৩২নং রোড ধানম-ির পশ্চিম প্রান্তে, মেজর নূর ও ক্যাপ্টেন বজলু ৩২ নং রোডের প্রবেশ মুখে মিরপুর রোডে অবস্থান গ্রহণ করে। আরেকটি দলকে রাখা হয় ৩১নং রোডে যেন কেউ পেছন দিক দিয়ে পালিয়ে যেতে না পারে। মেজর ফারুক ফার্মগেটে ট্যাঙ্ক নিয়ে ওয়্যারলেস সেটের মাধ্যমে অভিযান তত্ত্ব¡াবধান করছিল। বেশ কয়েকটি ট্যাঙ্ক রেডিও স্টেশন, সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান ও এর আশপাশে অবস্থান নিয়েছে। ফজরের আজান কিছুক্ষন আগেই শেষ হয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরেই বঙ্গবন্ধু তার ভগ্নিপতি আঃ রব সেরনিয়াবাতের টেলিফোন পেয়ে ইন্টারকমে দোতলা থেকে তার পিএ মুহিতুল আলমকে দ্রুত পুলিশ কন্ট্রোল রুমে লাইন মেলাতে বলেন। মুহিতুল যখন লাইন লাগাতে ব্যস্ত, এমন সময় গেঞ্জি ও লুঙ্গি পরিহিত উদ্বিগ্ন বঙ্গবন্ধু প্রায় দৌড়ে দোতলা থেকে নিচে নেমে আসেন। তখন চারদিকে আলো অন্ধকারের সহাবস্থান। রাষ্ট্রপতির বাড়ির চত্বরে সেনাবাহিনীর প্রহরীরা বিউগল বাজিয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করছে। বঙ্গবন্ধু অধৈর্য হয়ে মুহিতুলের কাছ থেকে ফোন নিয়ে কথা বলার ব্যর্থ চেষ্টা করেন। যেই মুহূর্তে বিউগল বাজা শেষ, তখনই বাড়ির দক্ষিণের লেকের ওপার থেকে আর্টিলারির মেজর মহিউদ্দিনের দলের মেশিনগানের গুলি এসে আছড়ে পড়তে শুরু করে এই বাড়ির দেয়াল ও কাচের জানালায়। মর্টারের গোলার শব্দে পুরো বাড়ি কাঁপছিল। মেশিনগানের একটি গুলি বঙ্গবন্ধুর কাছ দিয়ে চলে গেল। অল্প সময় স্থায়ী ঝাঁকে ঝাঁকে গুলির পর কিছু সময়ের নিস্তব্ধতা। এই পরিস্থিতিতে গৃহকর্মীর দ্বারা বেগম মুজিব উপর থেকে স্বামীর পাঞ্জাবি ও চশমা পাঠালেন। বঙ্গবন্ধু বাইরের দরজার কাছে এসে সেন্ট্রিদের কাছে গোলাগুলির কারণ জানতে চেয়ে পাঞ্জাবি গায়ে চড়াতে চড়াতে দোতলায় নিজ বেডরুমে ফিরে গেলেন। মেজর ফারুক ট্যাঙ্ক নিয়ে যখন ৩২নং রোডের পূর্ব প্রান্তে, তখন ওই স্থান থেকে মেজর নূর ও বজলু গ্রুপ এবং ল্যান্সার মহিউদ্দিনের গ্রুপ পশ্চিম দিক থেকে লেকের ঢালুর আড়ালে হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে আসে ৬৭৭ নং বাড়ির দিকে। ১ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারির সুবেদার মেজর ওহাব জোয়ারদারের নির্দেশে আগেই রাষ্ট্রপতির পুলিশ ও সেনা প্রহরীরা আত্মরক্ষার্থে মাটিতে শুয়ে পড়েছে। বঙ্গবন্ধু পুত্র শেখ কামাল তিন তলা থেকে দ্রুত পায়ে এই সময়ে নিচে নেমে ‘পুলিশ ভাই, আর্মি ভাইÑ কিসের গোলাগুলি’ উচ্চারণ করে যখনই রিসেপশনের বাইরের দরজায়, ঠিক তখনই মেজর নূর ও ক্যাপ্টেন বজলু এবং পেছনে সৈন্যদল উপস্থিত। কোন সুযোগ না দিয়েই ক্যাপ্টেন বজলু শেখ কামালকে গুলি করা মাত্র তিনি লুটিয়ে পড়ে যান। গুলি খেয়ে শেখ কামাল যখন আর্তনাদ করে উঠেছিলেন তখন বঙ্গবন্ধু দোতলায় সেনাপ্রধানের সঙ্গেই ফোনে কথা বলছিলেন। ইতোমধ্যে গুলির আঘাতে একজন সেনা ও পুলিশ সদস্য মারা পড়েছে। মেজর নূর ও ক্যাপ্টেন বজলু যখন বাড়ির নিচতলা নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত, তখন ল্যান্সার মহিউদ্দিনের গ্রুপ পশ্চিম দিক থেকে এবং ট্যাঙ্ক নিয়ে মেজর ফারুক ৬৭৭ নং বাড়ির সামনে পৌঁছে গেছে। মেজর ফারুক চিৎকার করে বলতে থাকে ‘কিল এ্যান্ড ক্র্যাস এভরি বডি।’ প্রথম পর্যায়ের গোলাগুলি বন্ধ হলে আতঙ্কিত মেজ ছেলে জামাল ও তার স্ত্রী রোজি, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা ও বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের বঙ্গবন্ধুর কক্ষে এসে জড়ো হন। মেজর ফারুক-এর নির্দেশ মতো মেজর মহিউদ্দিন ল্যান্সার ও কয়েক সৈনিক দৌড়ে সিঁড়ি বেয়ে যখন দোতলায় পৌঁছে, তখনই বঙ্গবন্ধু কক্ষ থেকে বাইরে বেরিয়ে আসছিলেন। যুদ্ধংদেহী এই সেনা দলকে দেখে তিনি উচ্চকণ্ঠে উচ্চারণ করেন ‘তোরা কি চাস, আমাকে কোথায় নিয়ে যাবি?’ এরই মধ্যে তারা বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে ধরে এবং নিচে নামিয়ে আনতে উদ্যত হয়। তাড়াহুড়ার এক পর্যায়ে এভারেস্টের ওপর থেকে মাথা উঁচু করে বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠে উচ্চারিত হয় ‘তোরা বেয়াদবি করিস না।’ এই সময়ে নিচ থেকে মেজর নূর ও ক্যাপ্টেন বজলু উপরে উঠছিল। বঙ্গবন্ধুর চিৎকারের সঙ্গে সঙ্গে মেজর নূর বঙ্গবন্ধুর পাশ থেকে সবাইকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। মুহূর্তে সবাই সরে গেলে মেজর নূর তার হাতের এসএমজি থেকে বঙ্গবন্ধুর বুক লক্ষ্য করে গুলি চালায়। যে মানুষটির বুকে ছিল বাংলাদেশের মানচিত্র, বাংলাদেশ যার সৃষ্টি, ১৮টি গুলিতে সেই মানুষটি সিঁড়িতেই প্রাণ হারান। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর খুনী নূর-বজলুরা নিচে নেমে যায়। এর পর সেখানে উপস্থিত হয় কিছুক্ষণ আগে শেখ মনি দম্পতিকে খুন করে আসা মেজর আজিজ পাশা, রিসালদার মোসলেম উদ্দিনের দল। উন্মাদেরা পাখি শিকারের মতো প্রথমে বেগম মুজিব, পরে শেখ জামাল, নববধূ রোজি, সুলতানাকে হত্যা করে। নিচে শেখ নাসেরকে গুলি করলে তিনি পানির জন্য আর্তনাদ করছিলেন। নরপিশাচের দল পানির বদলে পুনরায় গুলি করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। সব শেষে দশ বছরের শেখ রাসেলকে তার মায়ের কাছে পৌঁছে দেয়ার অঙ্গীকার করে দোতলায় নিয়ে যায়। তাকে আপনজনদের রক্তে ভাসমান লাশের ওপর ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে গুলি করলে নিষ্পাপ এই শিশুর মাথার মগজ ছিটকে বেরিয়ে যায়। ইতিহাসের এই নৃশংসতম হত্যাকা- ঘটিয়ে বর্বর খুনীরা তাদের ষড়যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত খুনী মোশতাক চক্রসহ বাংলাদেশ বেতার কেন্দ্রে উপস্থিত হয়। তারা বাংলাদেশ বেতারকে পাকিস্তান স্টাইলে রেডিও বাংলাদেশ এবং মুুক্তিযোদ্ধাদের রনধ্বনি ও শক্তির উৎস ‘জয় বাংলা’কে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ লেবেল পরিয়ে দেয়। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর এক ঘণ্টার মধ্যে পাক প্রধানমন্ত্রী ভুট্টো কেবিনেট মিটিং ডেকে হাসি-তামাশা করে অবৈধ নতুন সরকারকে স্বীকৃতি এবং খুনীদের প্রতি শুভেচ্ছাস্বরূপ জাহাজ ভর্তি চাল পাঠানোর ঘোষণা দেয়। ১৫ আগস্টের এই হত্যাকা- কেবল একজন মহান জাতীয়তাবাদী নেতা ও তার পরিবারকে হত্যা নয়, এটি ছিল সভ্যতা, মানবতাকে হত্যা করা। যে কোন মানুষের হত্যা এমনকি স্বাভাবিক মৃত্যুও আমাদের মন কাঁদায়। তবে সিরাজদ্দৌলার বিরুদ্ধে যড়যন্ত্রকারীদের ন্যায় বঙ্গবন্ধুর হত্যাকা-ের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল, তাদেরও পরবর্তী জীবন সুখকর হয়নি। খুনী মোশতাক তার নিযুক্ত সেনাপ্রধান দ্বারা দীর্ঘ সময় জেলে এবং মুক্তির অবশিষ্ট দিনগুলো মানুষের ঘৃণা ও ভয়ে স্বেচ্ছায় গৃহবন্দী ছিল। মৃত্যুর পর তার কবরেও মানুষ ঘৃণাভরে থুতু ছুড়ে দিয়েছে। দীর্ঘ কারাভোগের পর তাহের ঠাকুর, ওবায়দুর রহমানেরা বিশ^াসঘাতকের ঘৃণ্য জীবন নিয়ে মারা গেছে। নিঃসন্দেহে এই বিদ্রোহ ও হত্যাকা-ে প্রচ্ছন্ন সমর্থন দিয়েছিলেন জেনারেল জিয়া। তার অমন মৃত্যুও কাম্য ছিল না। চির প্রতিদ্বন্দ্বীর মৃত্যুর পর ভুট্টো যে উল্লাস করেছিল, তা মুসলমানের কাজ নয়। অনেক কষ্ট পেয়ে অবশেষে তাকেও ফাঁসিতে ঝুলতে হয়েছিল। তার পরিবার ল-ভ-। ইতিহাসের সবচেয়ে বড় শিক্ষা, মানুষ ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে না। আমাদের ধর্মযুদ্ধ ঘোষণা ব্যতীত মানুষ হত্যা হারাম করা হয়েছে। তার পরও এসব খুনী এমনকি নারী-শিশুদের হত্যা করেছে। মহানবীর সতর্ক বাণী উপেক্ষা করে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। কার্ফু দিয়ে জাতির পিতার জানাজায় অংশ নিতে দেয়নি। ইনডেমনিটি আইন করে হত্যার বিচার থামিয়ে দিয়েছিল। কিন্ত পারেনি। ইতোমধ্যে পাঁচ জনকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলতে হয়েছে। বাকিরা ইঁদুরের ন্যায় পালিয়ে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন দেশের অলিগলিতে। ধিক তাদের কর্র্ম, ধিক তাদের জন্ম। লেখক : সাবেক সেনা কর্মকর্র্তা
×