ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

থিয়েটারওয়ালার ‘জবর আজব ভালোবাসা’ মঞ্চে আসছে

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ২০ জুন ২০১৭

থিয়েটারওয়ালার ‘জবর আজব ভালোবাসা’ মঞ্চে আসছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রোজার মাসে সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের স্থবিরতার মাঝেও ঢাকার মঞ্চে এলো নতুন একটি নাটক। থিয়েটারওয়ালা রেপাটরির নতুন প্রযোজনাটির নাম ‘জবর আজব ভালোবাসা’। অন্তন চেখভের নাটক অবলম্বনে এটি অনুবাদ করেছেন মোবারক হোসেন খান। তিনটি চরিত্রে সাজানো প্রযোজনাটির রূপান্তর ও নির্দেশনা দিয়েছেন সাইফ সুমন। রবিবার শিল্পকলা একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে নাটকটির কারিগরি মঞ্চায়ন হয়। আগামী ৫ জুলাই একই হলে নাটকটির উদ্বোধনী মঞ্চায়ন হবে। প্রযোজনাটি প্রসঙ্গে নির্দেশক সাইফ সুমন জনকণ্ঠকে বলেন, এই নাটকে নেই কোন চিন্তার ব্যায়াম বা কোন বার্তা বা প্রশ্ন বা মতবাদের প্রাচুর্য। আছে মানুষের অন্তর্গত চিরন্তন অনুভূতি-ভালবাসা এবং এর প্রকাশ। আছে শুধুই নিরেট আনন্দ দানের প্রয়াস। শিল্পের কাছে তো ভোক্তা প্রথমত সেই আনন্দটাই চায়। ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া জীবনের উদ্যম হারানো এই শহরে চারদিকে সব যখন খড়খড়ে, তখন কোথায় খুঁজবো একটু আনন্দ! অসৎ বাজার অর্থনীতির এই অস্থির সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সবাই যখন ছুটছেÑ তখন আমাদের নির্মল বিনোদন নেয়ার বা পাওয়ার তো আর কিছু নেই। মানুষের প্রতি ভালবাসাহীন এই সময়ে ভালবাসার কথাই বলতে এসেছি এ নাটকে এবং বোধ করি ভালবাসার কথা বেশি করেই বলা উচিত এখন। ছোট পরিসরের প্রযোজনাটি শিল্পকলা একাডেমির বাইরেও ঢাকা শহরের নানা জায়গায় প্রদর্শনী করার ইচ্ছা রয়েছে আমাদের। জবর আজব ভালোবাসা নাটকের কাহিনীতে দেখা যায়, প্রয়াত স্বামীর শোকে সারাক্ষণ বিলাপ করতে থাকা গৃহকর্ত্রী প্রভাব ওপর ভীষণ বিরক্ত বাসার কেয়ারটেকার সবুর। সবুরের কাছে জীবন মানে খাও-দাও-ফূর্তি করও। কিন্তু গৃহকর্ত্রী প্রভা মৃত স্বামীর প্রতি এতটাই কাতর যে, দিন-দুনিয়া ভুলে গৃহবন্দী জীবনযাপন করে চলেছে অনেকদিন হয়। সে বাসার বাইরে যাওয়া তো দূরের কথা, বাসায় কেউ এলে দেখা পর্যন্ত করে না। একদিন সন্ধায় কাঁটাবনের এ্যানিম্যাল ফুড ব্যবসায়ী নাভিদ বাসায় আসে প্রভার সঙ্গে দেখা করতে। নাভিদ জানায়, প্রভার স্বামী তার দোকান থেকে নিয়মিত কুকুরের জন্য খাবার কিনত এবং বকেয়া বিল বাবদ তার কাছে পঞ্চাশ হাজার টাকা পাওনা আছে। প্রভা জানে তার স্বামীর প্রচ- কুকুরপ্রীতি ছিল। সে জানায় টাকাটা শোধ করে দেবে কিন্তু তাকে দুইদিন সময় দিতে হবে। নাভিদ জানায় টাকাটা তার আজই লাগবে, কারণ কাল টাকা দিতে না পারলে ব্যাংক তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেবে। প্রভা জানায়, টাকা-পয়সার কোন হিসাব সে রাখে না। ম্যানেজার ছুটি থেকে দুদিন পর ফিরবে, তখন টাকা শোধ করে দেবে। কিন্তু এর আগে কোনভাবেই টাকা দেয়া সম্ভব না। নাভিদও নাছোড়বান্দা, সে টাকা না নিয়ে যাবেই না। একজন টাকা দিতে পারবে না, আরেকজন টাকা না নিয়ে যাবেই না। দুইজনের মধ্যে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের একপর্যায়ে নাভিদ বলে, এসব টাকা না দেয়ার কৌশল। নাভিদ মনে করে পৃথিবীর সকল নারী নির্বোধ এক প্রাণী যারা নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য মায়াকান্নাই করতে জানে শুধু। এতে প্রভা আরও ক্ষেপে যায় এবং পুরুষদের কথা বলতে গিয়ে নিজের স্বামীর সব অপকর্মের বয়ান দেয়। তারপরও বলে সে তার স্বামীকে ভালবাসে। দুইজনের কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে নাভিদ আবিষ্কার করে সে প্রভাকে ভালবেসে ফেলেছে এবং সে প্রভাকে প্রস্তাব দিয়ে ফেলে। প্রভা শুনে অগ্নিমূর্তি ধারণ করে, নাভিদকে গুলি করে মেরে ফেলতে চায়। ঘরে থাকা স্বামীর পিস্তলও নিয়ে আসে। কিন্তু সে জানে না কিভাবে গুলি চালাতে হয়। এক সময়ের বিশ্ববিদ্যালয়ের টপটেরর নাভিদের কাছে পিস্তল চালানো ডাল-ভাত। প্রভা তার কাছে পিস্তল চালানো শিখতে চায়। অতঃপর এই পিস্তল চালানো শেখাতে ও শিখতে গিয়ে দুইজন আরও কাছাকাছি চলে আসে। দুইজনের মধ্যে সম্পর্ক আরও নিবিড় হয় এবং দুইজনই পরস্পরকে ভালবাসতে সম্মত হয়। নাটকটির নির্দেশক সাইফ সুমন বলেন, এই নাটকে নেই কোন চিন্তার ব্যায়াম বা কোন বার্তা বা প্রশ্ন বা মতবাদের প্রাচুর্য। আছে মানুষের অন্তর্গত চিরন্তন অনুভূতি-ভালবাসা এবং এর প্রকাশ। আছে শুধুই নিরেট আনন্দ দানের প্রয়াস। শিল্পের কাছে তো ভোক্তা প্রথমত সেই আনন্দটাই চায়। নাটকটির তিনটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিয়াজ হোসেন, সংগীতা চৌধুুরী ও রামিজ রাজু।
×