ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নরসিংদীতে সামসুল হক হত্যা মামলায় ৭ জনের মৃত্যুদন্ড

প্রকাশিত: ০০:৪৭, ২২ মে ২০১৭

নরসিংদীতে সামসুল হক হত্যা মামলায় ৭ জনের মৃত্যুদন্ড

নিজস্ব সংবাদদাতা,নরসিংদী ॥ নরসিংদীর পলাশে চাঞ্চল্যকর সামসুল হক হত্যা মামলায় একই পরিবারের চার জন সহ ৭ জনেকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছে আদালত। একই সাথে প্রত্যেক আসামীকে বিশ হাজার টাকা করে অর্থদন্ডে দন্ডিত করা হয়। সোমবার দুপুরে নরসিংদী অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মোহাম্মদ শাহীন উদ্দিন এই রায় প্রদান করেন। একই সাথে মৃত্যু হওয়ার আগ পর্যন্ত আসামীদের গলায় ফাঁস ঝুলিয়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার কথা উল্লেখ করেন। এছাড়া সামসুল হকের ছেলেকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করার অপরাধে ৫ জনকে সশ্রম কারাদন্ড ও দশ হাজার টাকা করে প্রত্যেককে অর্থদন্ডে দন্ডিত করা হয়। অপর দিকে ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতা না থাকায় ১৩ জন আসামিকে বেকসুর খালাস দেন আদালত। নিহত সামসুল হক পলাশ উপজেলার গালিমপুর গ্রামের বাসিন্দা। সে কাঠ মিস্ত্রির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করত। সাজাপ্রাপ্ত আসামীরা হল মহব্বত আলী মুন্সির ছেলে আব্দুল গাফফার, সিরাজ মিয়ার ছেলে মারফত আলী, মইজ উদ্দিনের ছেলে আলেক মিয়া ও তার সহধর্মিনী মোছা: রুপবান,তার ছেলে শরীফ মিয়া ও অপর ছেলে আরিফ মিয়া, মুল্লুক চাঁনের ছেলে তোতা মিয়া। আসামীরা সাবাই পলাশ উপজেলার গালিমপুর গ্রামের বাসিন্দা। আদালত সূত্রে জানা যায়, জমি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে নিহত সামসুল হকের সাথে পাশ্ববতী প্রতিবেশী আলেক মিয়া ও গাফফারদের সাথে দ্বন্দ চলে আসছিল। এনিয়ে উভয় পক্ষ একে অপরের বিরুদ্ধে মামলা-পাল্টা মামলা দায়ের করেন। এরই জের ধরে বিভিন্ন সময় মামলার আসামীরা অব্যাহত ভাবে নিহত সামসুল হককে দেখে নেয়ার হুমকি দিত। এরই মধ্যে ২০০৯ সালে ৩১ আগষ্ট রাতে নিহত সামসুল হকের ছেলে জহিরুল ইসলাম বাড়ী আসছিল। বাড়ীর অদূরে পথিমধ্যে আসামী মারফত,শরীফ ও আরিফ, জহিরুলকে মারপিট করতে থাকে। তার চিৎকারে বাবা সামসুল হক এগিয়ে যায়। ওই সময় আসামীরা বাবা ছেলেকে ধারালো অস্ত্রও দিয়ে এলোপাথারী কুপাতে থাকে। এসময় আসামীরা তাদের উপর্যুপরি কুপিয়ে তাদেরকে পার্শ্ববর্তী একটি গর্তে ফেলে রাখে। খবর পেয়ে নিহতের স্বজন ও আশপাশের লোকজন সামসুলকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে। সঙ্গাহীন অবস্থায় পড়ে থাকে জহিরুল। পরে তাদের স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার সামসুলকে মৃত ঘোষনা করেন। মুমুর্ষ অবস্থায় জহিরুলকে ঢাকায় প্রেরন করে সেখানে এক মাস পর তার জ্ঞান ফেরে। এঘটনায় নিহতের স্ত্রী নূরজাহান বাদী হয়ে ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত নামা আরো কয়েকজনকে আসামী করে পলাশ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে পলাশ থানা পুলিশ আদালতে চার্জসিট দাখিল করেন। উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক ও মামলায় সাক্ষ্য প্রমান শেষে অভিযুক্ত সাত আসামীর বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সন্দেহাতিত ভাবে প্রমানিত হওয়ায় সোমবার দুপুরে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক সাত জনের মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন। একই সাথে প্রত্যেককে বিশ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড আদেশ করেন। অপর দিকে নিহতের ছেলে জহিরুলকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করার অপরাধে আব্দুল গাফফার, শরীফ মিয়া, আরিফ মিয়া, আলেক মিয়া,ফারুক মিয়া ও বাছির মিয়াকে ৫ বছরের সশ্রম কারাদন্ড প্রদান করে। আসামীরা সকলেই পলাশ উপজেলার গালিমপুর গ্রামের বাসিন্দা। রাষ্ট্র পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন এডঃ এম এ এন অলিউলাহ। আসামী পক্ষে ছিলেন এডভোকেট শওকত আলী পাঠান।
×