ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১

ইতিহাস গড়া বোলিংয়ে ৭ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা শামি

নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে ফাইনালে ভারত

শাকিল আহমেদ মিরাজ

প্রকাশিত: ০০:০২, ১৬ নভেম্বর ২০২৩; আপডেট: ০১:৪৮, ১৬ নভেম্বর ২০২৩

নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে ফাইনালে ভারত

সেঞ্চুরি উদ্্যাপন করছেন বিরাট কোহলি

ওয়াংখেড়ের গ্যালারিতে আলো ছড়ালেন শচীন টেন্ডুলকর, ডেভিড বেকহ্যাম, রজনীকান্তের মতো ভিন্ন অঙ্গনের সব কিংবদন্তি। আর বাইশ গজে ব্যাট হাতে চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছোটালেন বিরাট কোহলি, শ্রেয়াস আইয়ার। ভয়ংকর সুন্দর বোলিংয়ে মোহাবিষ্ট করলেন মোহাম্মদ শামি। তাতেই স্বপ্নের পথে আরেক ধাপ এগিয়ে গেল রোহিত শর্মার দল। বুধবার মুম্বাইয়ে উন্মাদনার প্রথম সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডকে ৭০ রানে হারিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠে গেল ভারত। সুপার কোহলি (১১৩ বলে ১১৭) ও সেনশেনাল শ্রেয়াস আইয়ারের (৭০ বলে ১০৫) জোড়া সেঞ্চুরির সৌজন্যে ৫০ ওভারে ৪ উইকেটে ৩৯৭ রানের রেকর্ড সংগ্রহ পায় ভারত।

জবাবে ৪৮.৫ ওভারে ৩২৭ রানে অলআউট হয় নিউজিল্যান্ড।  বিফলে যায় ড্যারিল মিচেল (১১৯ বলে ১৩৪) ও অধিনায়কের কেন উইলিয়ামসনের (৭৩ বলে ৬৯) লড়াই। ক্যারিয়ারে তো বটেই, বিশ্বকাপের ইতিহাসে নক-আউটে সেরা বোলিংয়ের বিশ্বরেকর্ড গড়ে ম্যাচসেরা শামি। রেকর্ডময় ম্যাচে বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন কোহলিও। শৈশবের হিরো শচীনকে (৪৯তম) ছাড়িয়ে ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে পেয়েছেন ৫০তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি।

স্বপ্নের মতো বিশ্বকাপে শামির আরেকটি দুর্দান্ত পারফরমেন্স। ম্যাচে ডানহাতি পেসারের বোলিং বিশ্লেষণ ৯.৫-০-৫৭-৭। ওয়ানডে বিশ্বকাপের ইতিহাসে নকআউট ম্যাচে যা সেরা বোলিংয়ের নতু রেকর্ড। আগের সেরা ছিল গ্যারি গিলমোরেরর ১৪ রানে ৬ উইকেট, ১৯৭৫ বিশ্বকাপে। ৬ ম্যাচেই ২৩ উইকেট নিয়ে চলতি বিশ্বকাপে শিকারের তালিকায় শীর্ষে উঠে এলেন শামি। কোহলি, আইয়ার, শামির চোখ ধাঁধানো নৈপুণ্যে বিশ্বকাপে ভারতের আরেকটি পূর্ণাঙ্গ পারফমেন্স এটি। লিগ-পর্ব থেকে টানা ১০ জয়, শিরোপার জন্য রোহিতদের চাই আর একটি। রবিবার আহমেদবাদের ফাইানলে কারা হচ্ছে প্রতিপক্ষ?

অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকা, আজকের দ্বিতীয় সেমিফাইনাল শেষে মিলবে সেই উত্তর। ১১৩ বলে ৯ চার ও ২ ছক্কায় কোহলি সাজিয়েছেন তার রেকর্ডময় ১১৭ রানের ইনিংসটি। আর ৭০ বেল ৪ চারের বিপরীতে ৮টি বিশাল ছক্কায় আইয়ার করেন ১০৫ রান। এ ছাড়া গিল ৬৬ বলে ৮ চার ও ৩ ছক্কায় ৮০ রানে  ও লোকেশ রাহুল ২০ বলে অপরাজিত ৩৯। তাতেই ভারত পায় ৩৯৭ রান। ওয়ানডে বিশ্বকাপের ইতিহাসে নক-আউট ম্যাচে যা দলীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহের নতুন রেকর্ড। আগের সর্বোচ্চ ছিল ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালের সেই ম্যাচে, ওয়েলিংটনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৬ উইকেটে নিউজিল্যান্ড করেছিল ৩৯৩ রান।
৩৯৮ রানের অসম্ভব লক্ষ্য তাড়ায় নিউজিল্যান্ডের হয়ে ৮ চার ও ১ ছক্কায় ৭৩ বলে ৬৯ রান করে আউট হন অধিনায়ক উইলিয়ামসন। ড্যারিল মিচেলের ব্যাট থেকে আসে সর্বোচ্চ ১৩৪ রান। ১১৯ বলের ইনিংসে ৯ চার ও ৭টি ছক্কা হাকান তিনি। একটি করে উইকেট নিয়েছেন জাসপ্রিত বুমরাহ, মোহাম্মদ সিরাজ ও কুলদীপ যাদব। ব্যাটিংয়ে রেকর্ডের খাতায় ঝড় তুলেছেন  কোহলি আর বোলিংয়ে শামি। ভারতের প্রথম  বোলার হিসেবে বিশ্বকাপের ম্যাচে তিনি নিয়েছেন ৭ উইকেট। বিশ্বকাপে ৭ উইকেট  নেওয়া পঞ্চম বোলার তিনি। তবে নক-আউট ম্যাচে এটিই  সেরা  বোলিং। ১৯৭৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে ১৪ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন গ্যারি গিলমোর।

চলতি আসরে এটি তার তৃতীয় ৫ উইকেট। এক বিশ্বকাপে তিন বার ৫ উইকেট নেওয়া প্রথম বোলার। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপে এটি তার চতুর্থ ৫ উইকেট। এই কীর্তিতেও প্রথম তিনি। মিচেল স্টার্ক তিনবার নিয়েছেন ৫ উইকেট। উড়ন্ত ছন্দে থাকা শামির এবারের বিশ্বকাপে মোট শিকার ২৩টি। ভারতের বোলারদের মধ্যে এক আসরে এটিই রেকর্ড। ২০১১ সালে দলকে চ্যাম্পিয়ন করার পথে জাহির খান নিয়েছিলেন ২১ উইকেট। সব মিলিয়ে তার সামনে ¯্রফে দুজন। মিচেল স্টার্ক, ২০১৯ সালে ২৭ উইকেট ও গ্লেন ম্যাকগ্রা ২০০৭ সালে ২৬ উইকেট।
ম্যাচে কোহলির কীর্তিও আলাদা করে উল্লেখ করতে হবে। নিজের  শৈশবের নায়ক শচীনের আশা পূরণ করে তার ৫০তম (শচীনের) জন্মদিনের মাত্র দশ দিনের মাথায় ওয়ানডেতে ৫০তম সেঞ্চুরি তুলে নিলেন। অবসর নেওয়ার প্রায় ১০ বছর পর ৪৯ সেঞ্চুরি নিয়ে দুইয়ে নেমে গেলেন শচীন। সর্বোপরি বিশ্বকাপ ক্যারিয়ারে এটি কোহলির পঞ্চম সেঞ্চুরি। সমান ৫ সেঞ্চুরি রয়েছে কুমার সাঙ্গাকারা, রিকি পন্টিংয়ের। শচীন ও ডেভিড ওয়ার্নার করেছেন ৬টি করে সেঞ্চুরি। রোহিত যেখানে ৭ সেঞ্চুরি নিয়ে এককভাবে শীর্ষে।

শচীনের আরও কয়েকটি রেকর্ড নিজের করে নিয়েছেন কোহলি। চলতি আসরে ১০ ইনিংসে তার সংগ্রহ ৭১১ রান। বিশ্বকাপের এক আসরে ৭০০ রান করা প্রথম ব্যাটসম্যান তিনি। ২০০৩ সালে ১১ ইনিংসে শচীন করেছিলেন ৬৭৩ রান। এক বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসের (৮টি) রেকর্ডেও সবার ওপরে বসেছেন কোহলি। চলতি আসরে ৩টি সেঞ্চুরি ছাড়াও ভারতের তারকা ব্যাটসম্যান খেলেছেন ৫টি ফিফটির ইনিংস। ২০০৩ সালে ১ সেঞ্চুরির সঙ্গে ৬টি ফিফটি করেছিলেন শচীন।

×