মোঃ মামুন রশীদ ॥ গত ৯ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার পচেফস্ট্রুমে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস নতুন করে লেখা হয়েছে। সেটি লেখা হয়েছে বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৯ দলের বিশ্বকাপ ফাইনালে বিজয়ে মূল ভূমিকা রাখা অধিনায়ক আকবর আলীর ব্যাটে। দলের বিপর্যয়ের মুখে ৬ নম্বরে নেমে অপরাজিত ৪৩ রানের ইনিংস খেলে প্রথমবার বিশ্বকাপ ট্রফি এনেছেন আকবর। আর সে কারণেই তাকে সবাই ‘আকবর দ্য গ্রেট’ নামে ডাকতে শুরু করেছেন। ভারতের বিরুদ্ধে ফাইনালে জয়ের নায়ক আকবর যে প্রচন্ড মেধাবী একজন ব্যাটসম্যান তার প্রমাণ অনুর্ধ-১৯ দলে থাকতেই প্রমাণ করে দিয়েছেন। উইকেটরক্ষক এ ব্যাটসম্যানকে নিজের চেয়েও এগিয়ে রাখছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীম। মুশফিক নিজেই দাবি করেছেন এই বয়সে আকবরের মতো মেধা ছিল না তার। এমনকি এখনও তিনি আকবরের চেয়ে পিছিয়ে বলে মন্তব্য করেছেন মুশফিক।
মুশফিক ২০০৬ সালের অনুর্ধ-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের যুবাদের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সেবার তার সতীর্থ ছিলেন বর্তমানে জাতীয় দলের এক ঝাঁক অপরিহার্য তারকা ক্রিকেটাররা। মুশফিকের সঙ্গে খেলেছিলেন সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে জাতীয় দলের হয়ে খেলা রকিবুল হাসান, সোহরাওয়ার্দি শুভ, শামসুর রহমান শুভ, কামরুল ইসলাম রাব্বি ও ডলার মাহমুদ ছিলেন সেই দলে। গ্রুপ পর্বে শক্ত দুই প্রতিপক্ষ পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড এবং উগান্ডাকে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে সুপার লীগ কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। তাই দলটি নিয়ে দারুণ কিছুর স্বপ্ন ছিল। কিন্তু সুপার লীগ কোয়ার্টার ফাইনালে ইংল্যান্ডের কাছে ৫ উইকেটে পরাস্ত হয়ে সামনে এগোতে পারেনি মেধায় ঠাসা দলটি। পরবর্তীতে মুশফিকের সেই সাফল্যকে ছাপিয়ে ২০১৬ যুব বিশ্বকাপে মেহেদী হাসান মিরাজের নেতৃত্বে ঘরের মাটিতে সেমিফাইনাল খেলে বাংলাদেশের যুবারা। তার মাত্র ৪ বছর পর আকবরের নেতৃত্ব পূর্বের সব সাফল্যকে পেছনে তো ফেলেছেই বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৯ দল, একেবারে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়ে অবিস্মরণীয় গৌরব ছিনিয়ে এনেছে দেশের জন্য। দেশের ইতিহাসে প্রথমবার কোন বিশ্বকাপ শিরোপা জিতিয়ে আনার জন্য অধিনায়ক আকবরকে মুঘল সম্রাট ‘আকবর দ্য গ্রেট’ হিসেবেও আখ্যা দিয়েছেন অনেকে। কারণ, ফাইনালে অধিনায়কোচিত একটি দুর্দান্ত ইনিংসে দলকে জেতানোর মূল নায়ক ছিলেন তিনি।
প্রতিপক্ষ ভারতকে মাত্র ১৭৭ রানে গুটিয়ে দেয়ার পরও ১০২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে পরাজয়ের শঙ্কায় পড়ে যায় বাংলাদেশের যুবারা। সেই অবস্থায় একাই লড়েছেন আকবর। দলের জয়ে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন সময়োপযোগী ৭৭ বলে ৪ চার, ১ ছক্কায় হার না মানা ৪৩ রানের ইনিংস খেলে। ইতিহাস রচনা করে ম্যান অব দ্য ফাইনাল হয়ে যান আকবর। আর ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নেন। উইকেটরক্ষক এ ব্যাটসম্যানের খেলাটি সেদিন সিলেটে বসে দেখেছিলেন মুশফিক। সেদিন জাতীয় ক্রিকেট লীগের (এনসিএল) ম্যাচ ছিল। সেই স্মৃতিটাই রোমন্থন করেছেন জাতীয় দলের উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যান মুশফিক। বিশ্বকাপ জেতানো আকবর তার বিশ্বকাপে খেলা গ্লাভস ও জার্সি করোনা সঙ্কটে অসহায়দের সাহায্যার্থে তহবিল গড়তে নিলামে তুলেছেন মুুশফিকের সঙ্গেই। এ তরুণ ভবিষ্যত তারকার ভূয়সী প্রশংসা করে মুশফিক বলেন, ‘আকবর যে জায়গায় আছে, ওই জায়গায় এত মেধাবী আমি ছিলাম না, এমনকি এখনও এমন না। আমি সত্যিই মুগ্ধ হয়েছিলাম। ঐ সময় সিলেটে আমাদের জাতীয় লীগের একটা খেলা চলছিল। খেলা শেষ হওয়ার পর ম্যাচটা বল বাই বল দেখেছি।’ বিশেষ করে ফাইনালের মতো একটি স্নায়ুচাপের ম্যাচে এই বয়সে আকবর যে ইনিংস খেলেছেন তা অসাধারণ। এ বিষয়ে মুশফিক বলেন, ‘ফাইনালে ও যে ইনিংস খেলেছে চাপের মধ্যে- অসাধারণ।’
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: