ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

লঙ্কানদের লজ্জায় ডুবিয়ে কিউইদের দুর্দান্ত সূচনা

প্রকাশিত: ১০:৩৯, ২ জুন ২০১৯

  লঙ্কানদের লজ্জায় ডুবিয়ে কিউইদের দুর্দান্ত সূচনা

স্পোটর্স রিপোর্টার ॥ টসে জেতা থেকে শুরু করে প্রতিপক্ষকে দেড় শ’ রানের আগেই অলআউট করা এবং ব্যাটিংয়ে নেমে হেসে-খেলে নেচে-কুঁদে আয়েশি জয় কুড়িয়ে নেয়া ... বিশ্বকপের আসরে এরচেয়ে ভাল শুভ সূচনা নিশ্চয়ই হতে পারতো না নিউজিল্যান্ডের জন্য। শনিবার আইসিসি বিশ্বকাপ ক্রিকেটের কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেন্সে অনুষ্ঠিত ম্যাচে (ম্যাচ নম্বর ৩) তারা ১০ উইকেটে হারায় ১৯৯৬ আসরের চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কাকে। টসে জিতে আগে নবম র‌্যাঙ্কিংধারী লঙ্কাকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানায় চতুর্থ র‌্যাঙ্কিংধারী এবং ২০১৫ বিশ্বকাপ আসরের রানার্সআপ দল নিউজিল্যান্ড। ইনিংসের দ্বিতীয় বলেই উইকেট পেয়ে কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন বুঝিয়ে দেন কেন তিনি বোলিং বেছে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। লঙ্কান ওপেনার লাহিরু থিরিমান্নেকে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলেন কিউই পেসার ম্যাট হেনরি। ২ বলে ১টি চারের মার মেরেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন লাহিরু। চার বছর ওয়ানডে ক্রিকেটে অনুপস্থিত থেকেও বিস্ময়করভাবে দলের অধিনায়ক করা অপর ওপেনার দিমুথ করুনারত্নে হাল ধরেন। সঙ্গী হিসেবে পান ওয়ান ডাউনে নামা উইকেটরক্ষক কুসল পেরেরাকে। দু’জনে মোটামুটি ভাল খেলে সামাল দেন প্রাথমিক বিপর্যয়। ৮ ওভারে যোগ করেন ৪২ রান। এরপরই আবারও আঘাত হানেন সেই ম্যাট হেনরি-ই। ২৯ রানে কট বিহাইন্ড আউট হন কুসল। তার ক্যাচটি লোফেন কলিন ডি গ্র্যান্ধমি। এরপর আবারও মড়ক লাগে লঙ্কানদের ব্যাটিংয়ে। পরবর্তী সাত ওভারের মধ্যে খুব দ্রুত পতন ঘটে আরও চার-চারটি উইকেটের। একে একে আউট হন কুসল মেন্ডিস (০), ধনঞ্জয়া ডি সিলভা (৪), এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস (০) এবং জীবন মেন্ডিস (১)। দলের সংগ্রহ তখন ৬ উইকেটে ৬০ রান। দলপতি দিমুথের সঙ্গে এবার ইনিংস মেরামত করার চেষ্টা করেন থিসারা পেরেরা। দলের এই মহাসঙ্কটের মধ্যে কোথায় থিসারা একটু রয়ে-সয়ে ব্যাট করবেন, তা না, উল্টো বেছে নিলেন আক্রমণের পথ! মাত্র ২৩ বলে ২টি বাউন্ডারির সাহায্যে ঝটপট করে ফেললেন ২৭ রান। ফলে দলের রান শ’য়ের কোটা অতিক্রম করে যায়। কিন্তু অতি আক্রমণাত্মক হতে গিয়েই মিচেল সান্টনারের বলি হন পেরেরা। দলীয় ১১২ রানের মাথায় মিচেলকে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন ট্রেন্ট বোল্টের হাতে। এরপর আবারও আরেকদফা মড়ক লাগে লঙ্কানদের ব্যাটিংয়ে। পরবর্তী ছয় ওভারের মধ্যে আর মাত্র ২৪ রানের মধ্যে বাকি তিনটি উইকেটও খুইয়ে ফেলে অলআউট হয়ে যায় তারা। পর্যায়ক্রমে আউট হন ইসুরু উদানা (০), সুরঙ্গ লাকমাল (৭) এবং লাসিথ মালিঙ্গা (১)। তবে ৪টি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে উইকেটে মজুদ রয়ে যান ৮৪ বলে অপরাজিত ৫২ রানের ইনিংস খেলা অধিনায়ক-ওপেনার দিমুথ করুনারত্নে। লঙ্কানরা মাত্র ২৯.২ ওভারেই প্যাকেটবন্দী হয়ে যায় ১৩৬ রানে (অতিরিক্ত রান ১১)। নিউজিল্যান্ড বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সফল ছিলেন লকি ফার্গুসন (৩/২২) এবং ম্যাট হেনরি (৩/২৯)। এছাড়া ১টি করে উইকেট শিকার করেন মিচেল সান্টনার, কলিন ডি গ্র্যান্ধমি, জেমস নিশাম এবং ট্রেন্ট বোল্ট। মোট কথা, বোলারদের কেউই উইকেটশূন্য ছিলেন না। জবাব দিতে নেমে খুব সহজেই জয়ের বন্দরে নোঙর করে ফেলে নিউজিল্যান্ড। ওয়ানডে নয়, যেন টি-টুয়েন্টি স্টাইলে খেলেই অনায়াসেই কাজটুকু সেরে ফেলেন দুই কিউই ওপেনার মার্টিন গাপটিল এবং কলিন ডি মুনরো। দু’জনেই হাঁকান জবরদস্ত অপরাজিত অর্ধশতক। গত বিশ্বকাপের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান গাপটিল করেন ৭৩। হাঁকান ৮টি বাউন্ডারি এবং ২টি ওভার বাউন্ডারি। তার সঙ্গী কলিন মুনরোও পিছিয়ে ছিলেন না। তার সংগ্রহ ৫৮ রান। তিনি মারেন ৬টি বাউন্ডারি এবং ১টি ওভার বাউন্ডারি। পাঁচ লঙ্কান বোলার (মালিঙ্গা, লাকমাল, উদানা, থিসারা এবং জীবন) প্রাণপণ চেষ্টাতেও ঘটাতে পারেননি একটি কিউই উইকেটের পতন! মাত্র ১৬.১ ওভারে প্রয়োজনীয় রান নিজেদের স্কোরবোর্ডে জমা করে ফেলে নিউজিল্যান্ড (বিনা উইকেটে ১৩৭ রান)। প্রতিপক্ষের টপঅর্ডারে ধস নামানো পেসার ম্যাট হেনরিই পান ম্যাচসেরার পুরস্কার। ম্যাচ জিতে পূর্ণ ২ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়ে কিউই দল। বিশ্বকাপে এ নিয়ে ১১ বারের মুখোমুখিতে ৫ বার জিতলো নিউজিল্যান্ড। তবে ৬ ম্যাচে জিতে এখনও এগিয়ে শ্রীলঙ্কা। আর নিউজিল্যান্ড জিতেছিল ৪টিতে। তবে সার্বিকভাবে আগের ৯৯ ওয়ানডেতে ৪৯টিতে জিতে আবার এগিয়ে ব্ল্যাক ক্যাপসরাই। লঙ্কান লায়ন্সরা জেতে ৪১ ম্যাচ। স্কোর ॥ টস : নিউজিল্যান্ড। শ্রীলঙ্কা ২৯.২ ওভারে ১০/১৩৬ (করুনারত্নে ৫২*, কুসল ২৯, থিসারা ২৭; ফার্গুসন ৩/২২, হেনরি ৩/২৯); নিউজিল্যান্ড ১৬.১ ওভারে ০/১৩৭ (গাপটিল ৭৩*, মুনরো ৫৮*)। ফল : নিউজিল্যান্ড ১০ উইকেটে জয়ী। ম্যাচসেরা : ম্যাট হেনরি।
×