মিথুন আশরাফ ॥ শিরোপা জেতা হয়নি। তাতে কি। বিশ্বকাপে ইতিহাসের সেরা সাফল্য মিলেছে। অসাধারণ খেলেছেন ক্রোয়েশিয়া ফুটবলাররা। আর তাই রাশিয়া বিশ্বকাপ শেষে দেশে ফেরার পর রাজকীয় অভ্যর্থনাই মিলল ক্রোয়েশিয়া ফুটবলারদের।
রানার্সআপ হয়েছে ক্রোয়েশিয়া। তবে দলটি এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে সমীহ জাগানো দল। তাই নিজ দেশে লুকা মডরিচদের প্রত্যাবর্তনটাও হয়েছে রাজকীয়। ক্রোয়েশিয়ার ফুটবল দলকে সোমবার স্বাগত জানাতে রাজপথে হাজির হয়েছিল সাড়ে ৫ লক্ষ মানুষ। যারা নেচে গেয়ে আতশবাজি পুড়িয়ে জাতীয় বীরদের বরণ করে নিয়েছেন।
মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে শিরোপা জিতেছে ফ্রান্স। কিন্তু কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমীর হৃদয় জিতেছে ক্রোয়েশিয়া। তাদের হার না মানা ফুটবল দিয়ে জয় করেছে বিশ্ববাসীর হৃদয়। লড়াকু এই দলটি ফাইনালে হেরে যায় ফ্রান্সের কাছে। কিন্তু জয় করে নেয় মানুষের ভালবাসা। বিশ্বকাপ শেষে যখন দেশে ফেরে দলটি তাদের স্বাগত জানাতে রাজধানী জাগরেবে নামে মানুষের ঢল।
ক্রোয়েশিয়া প্রথমবারের মতো ফাইনালে খেলে। ইতিহাস গড়ে। এর আগে চারবার বিশ্বকাপে অংশ নিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। প্রথমবার ১৯৯৮ সালে বিশ্বকাপ খেলতে নেমেই সেমিফাইনালে খেলে ক্রোয়েশিয়া। তৃতীয় হয়। এরপর ২০০২, ২০০৬ ও ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে গ্রুপপর্ব থেকেই বিদায় নেয়। ১৯৯৮ সালের সেমিফাইনালে ফ্রান্সের কাছে হেরেই বিদায় নিয়েছিল। এবার প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ ধরা দেয়। এবারও পারেনি ক্রোয়েশিয়া। ৪-২ গোলে হেরে রানার্সআপ হয় ক্রোয়েশিয়া। তবে যে খেলা দেখিয়েছে ক্রোয়েশিয়া তা মন ভরিয়ে দিয়েছে সবার। ক্রোয়েশিয়ান ফুটবলাররা দেশে ফিরে তাই রাজকীয় অভ্যর্থনাই পেলেন।
বিশ্বকাপ বাদে প্রায় সবই জিতেছেন মডরিচরা। বিশ্বজুড়ে ফুটবলপ্রেমীদের কাছ থেকে মিলেছে অকৃত্রিম ভালবাসা-অভিনন্দন। ভালবাসার অভাব হয়নি নিজ দেশেও। রাশিয়া বিশ্বকাপে ফাইনালের মহারণে ফরাসী সৌরভের কাছে হার মানলেও দেশে ফিরে ভক্ত-সমর্থকদের শুভেচ্ছা আর ভালবাসায় সিক্ত হয়েছেন তারা।
ছোট্ট একটি দেশ ক্রোয়েশিয়া। ৪.২ মিলিয়ন মানুষ বাস করেন। এদিন মডরিচ-রাকিটিচদের বরণ করতে রাস্তায় নেমে আসে সাড়ে ৫ লক্ষ মানুষ। যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ১০ ভাগ। নেচে গেয়ে তারা স্বাগত জানায় জাতীয় বীরদের। দলের জার্সি গায়ে, জাতীয় পতাকা হাতে কে ছিল না সেই মিছিলে। শিশু থেকে বৃদ্ধ, নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাই এদিন রাজধানী শহরে উদযাপন করেছে জাতীয় দলের প্রত্যাবর্তন।
স্বাধীনতা পাওয়ার সপ্তম বছরেই ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে সেমিফাইনালের টিকেট কেটে ফুটবল বিশ্বকে চমকে দিয়েছিল ক্রোয়েশিয়া। সেবার ফাইনাল খেলা হয়নি তাদের। সন্তুষ্ট থাকতে হয় তৃতীয় হয়ে। স্বাধীনতার ২৭তম বছরে ফাইনালের টিকেট কেটে আবারও বিশ্বকে চমকে দেয় ইউরোপের দক্ষিণ-পূর্বের দেশটি।
এবার তরী ডুবেছে একেবারে তীরে এসে। ফ্রান্সের কাছে ৪-২ ব্যবধানে হেরে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে রানার্সআপ হয়ে। স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় পুড়লেও বীরদের বরণ করে নিতে আয়োজনের কোন কমতি রাখেনি ক্রোয়েট সমর্থকরা। রাস্তার দুই ধারে দাঁড়িয়ে উষ্ণ অভর্থনা জানিয়েছেন বিশ্বকাপ মিশন শেষ করে দেশে ফেরা ফুটবলারদের।
রবিবার মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে ফাইনালের মধ্য দিয়ে পর্দা নেমেছে একমাস ধরে চলা রাশিয়া বিশ্বকাপের। পরদিনই দেশে ফিরেছেন মডরিচরা। বিমানবন্দরে নেমেই ভক্তদের ভালবাসায় সিক্ত হন তারা। টিম বাসে চড়ে রওনা হন গন্তব্যে।
সেখানে অপেক্ষা করে আরও বড় চমক। পতাকা হাতে জার্সি গায়ে রাস্তার দুই পাশে আগে থেকেই অপেক্ষারত ভক্তরা বিভিন্ন লেখা সংবলিত ব্যানার, পোস্টারে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান বিশ্বকাপ শেষ করে দেশে ফেরা ফুটবলারদের। সমর্থকদের উপস্থিতি এতটাই বেশি ছিল জ্যাম লেগে যায় পুরো রাস্তায়। ভক্তদের ভালবাসার জবাব দিয়েছেন ফুটবলাররাও। দুই হাত নেড়ে ভক্ত-সমর্থকদের জবাব দেন কোচ-ফুটবলার সবাই।
চারদিক ঘিরে থাকা আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীদের উপেক্ষা করে সমর্থকরা পৌঁছে গেছেন ফুটবলারদের কাছে, আর ফুটবলাররা পৌঁছে গেছেন ভক্ত-সমর্থকদের কাছে। রাজকীয় অভ্যর্থনাও মিলে।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: