ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

ভারতের ৫০০তম টেস্ট, কানপুরে সিরিজের প্রথম ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষা

ভারত-নিউজিল্যান্ড ঐতিহাসিক টেস্ট শুরু আজ

প্রকাশিত: ০৭:১৪, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ভারত-নিউজিল্যান্ড ঐতিহাসিক টেস্ট শুরু আজ

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ গ্রীন পার্ক, কানপুর- ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে বিশেষ একটি অর্জনের জন্য জ্বলজ্বল করে জ্বলে থাকবে। কারণ ঐতিহাসিক এক ঘটনার সাক্ষী হতে যাচ্ছে এই ভেন্যুটি। ক্রিকেট মক্কা লর্ডস দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে যাত্রা শুরু করেছিল ভারত। সেটা ছিল ১৯৩২ সালের ২৫ জুন। অবশ্য ভারতের অভিষেক সেই টেস্টটা হয়েছিল মাত্র ৩ দিনের। এরপর ৮৪ বছর পেরিয়ে গেছে- ৪৯৯ টেস্ট খেলে ফেলেছে ভারত। অভিষেক টেস্টে খেলা অনেকেই হয় তো এখন দেখবেন কানপুরে তাদের উত্তরসূরিরা ৫০০তম টেস্ট খেলতে নামছে। আজ সফরকারী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ঐতিহাসিক এ ম্যাচে মুখোমুখি হচ্ছে বিরাট কোহলির দল। বরাবরের মতোই সফরকারী দলের জন্য স্পিন ফাঁদ ও ধীরগতির গোলকধাঁধা অপেক্ষা করছে। তাই কিউইদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হবে স্বাগতিকদের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচটা থেকেই। বিশেষ করে ব্যাটসম্যানদের জন্য অগ্নিপরীক্ষা হবে ভারতের বিশ্বসেরা স্পিন আক্রমণের বিপক্ষে। গত মৌসুমে ঘরের মাটিতে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদেরও ছিল চরম ভরাডুবি। যত টেস্ট খেলেছে শুধু বর্তমান সহ-অধিনায়ক আজিঙ্কা রাহানের কাছ থেকেই একটি সেঞ্চুরি পেয়েছে স্বাগতিকরা। তবে সফরকারী দলগুলোর অবস্থা ছিল আরও নাজুক। ভারতীয় স্পিনাররা দেখিয়েছেন দাপট। বিশেষ করে দলের দুই অপরিহার্য স্পিনার রবিচন্দ্রন অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাদেজা দারুণ কার্যকর ভূমিকা ধারাবাহিকভাবেই দেখিয়ে চলেছেন। ঘরের মাটিতে অশ্বিনের বোলিং গড় ২০.৯২ এবং জাদেজার ১৫.৭০। এ দু’জন মিলে প্রতি ৮ ওভারেই একটি করে উইকেট শিকার করেছেন এখন পর্যন্ত। কিউই ব্যাটসম্যানদের তাই বড় পরীক্ষায় পড়তে হবে। জাদেজা তার অবিশ্রান্ত, অক্লান্ত এ্যাকুরেসি ও গতি দিয়ে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের উইকেটে বেঁধে রাখেন এবং অশ্বিন তার সাঁড়াশি আক্রমণে তাদের শিকার করেন। আর যেকোন উইকেট যদি যথেষ্ট টার্নিং হয় সেক্ষেত্রে তৃতীয় স্পিনার হিসেবে অমিত মিশ্রও দারুণ ভয়ানক হয়ে উঠতে সক্ষম। গ্রীন পার্কের উইকেট সেভাবেই গড়ে তোলা হয়েছে। শুকনো-খটখটে উইকেটে কোন ঘাস নেই। সে কারণে একাদশে হয় তো তিন স্পিনার আর এক পেসার নিয়ে খেলতে পারে ভারত। অধিনায়ক কোহলি আত্মবিশ্বাস জানিয়েছেন চার বোলার নিয়েই টেস্ট জিততে সক্ষম ভারত। যেহেতু ইশান্ত শর্মা মশাবাহিত ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হয়ে খেলতে পারছেন না তাই একমাত্র পেসার হিসেবে ভুবনেশ্বর কুমার খেলতে পারেন। আর এ কারণে মিডলঅর্ডারে আরেকটি সুযোগ পেতে যাচ্ছেন রোহিত শর্মা। আর দীর্ঘদিন ফর্মহীন থাকায় শিখর ধাওয়ান আপাতত একাদশের বাইরেই থাকছেন। মুরালি বিজয়ের সঙ্গে উদ্বোধন করবেন দারুণ ফর্মে থাকা লোকেশ রাহুল। তিনে থাকছেন চেতেশ্বর পুজারা। তবে ৫ বোলার নিয়ে খেললে উমেশ যাদব একাদশে জায়গা করে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে রোহিতকে অপেক্ষায় থাকতে হবে আরও। চতুর্থ দেশ হিসেবে ৫০০তম টেস্টের ল্যান্ডমার্কে পা রাখতে যাচ্ছে ভারত। ইতোমধ্যে ইংল্যান্ড (৯৭৬), অস্ট্রেলিয়া (৭৯১) ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ (৫১৭) এই মাইলফলক ছুঁয়েছে। ঐতিহাসিক এই ম্যাচ দিয়ে নতুন মৌসুম শুরু করবে কোহলির দল। এ মৌসুমে ঘরের মাটিতে তারা ১৩ টেস্ট ম্যাচ খেলবে। কোহলি প্রত্যয় জানিয়েছেন আইসিসির টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান দখলের। বর্তমানে এক নম্বরে আছে ভারতের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান। আর দুইয়ে কোহলিরা। ইতিহাস, পরিবেশ, পরিস্থিতি, দর্শক এবং উইকেট কোনকিছুই সফরকারী নিউজিল্যান্ডের পক্ষে নেই। আজ পর্যন্ত ভারতের মাটিতে মাত্র দুই টেস্ট জিততে পেরেছে কিউইরা। সর্বশেষ জয়টা তারা পেয়েছে ১৯৮৮ সালে। তবে গ্রীন পার্কের পরিস্থিতি দেখে কিউইরাও স্পিননির্ভর দলই গড়ার চিন্তাভাবনা করছে। নিউজিল্যান্ড দলেও আছেন তিন স্পিনার। সবাইকে নিয়েই দল গড়তে পারে কিউইরা। ইনজুরির কারণে দলের অন্যতম পেসস্তম্ভ টিম সাউদি নেই এবং পেস অলরাউন্ডার জিমি নিশামও খেলতে পারছেন না। সে কারণে পেস বিভাগটা সামাল দেবেন ট্রেন্ট বোল্ট। আর ব্যাটিংয়ে ভারতের ধীর উইকেটে সফরকারীদের বড় ভরসা অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। তবে ব্যাটসম্যানদের চেয়েও উভয় দলের মূল দৃষ্টি লেটঅর্ডারে নামা বোলারদের দিকে। কারণ গত বছরের পরিস্থিতি বলছে লেট অর্ডারে যারা ব্যাটিং ভাল করবে সেই দলটাই এগিয়ে যাবে। এ কারণে শুধু বোলিংয়ে পারঙ্গম কাউকে নিয়ে নয়, বরং ভাল ব্যাটও চালাতে সক্ষম এমন ক্রিকেটারদের নিয়েই একাদশ সাজাবে উভয় দল। ঐতিহাসিক এই টেস্টে ভারতের সাবেক অধিনায়কদের আমন্ত্রণ জানিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেট কন্ট্রোল বোর্ড। সাবেক অধিনায়কদের মধ্যে থাকবেন মোহাম্মদ আজহারউদ্দিন ছাড়াও শচীন টেন্ডুলকর, দিলীপ ভেঙ্গসরকার, কপিল দেব, রবি শাস্ত্রী, সুনীল গাভাস্কার, সৌরভ গাঙ্গুলী, বিরেন্দর শেবাগ, কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্তরা। এ টেস্টে দুই দেশের দুই বোলারের মাইলফলক অপেক্ষা করছে। কিউই বাঁহাতি পেসার নিল ওয়াগনার ৬ উইকেট শিকার করলেই ২৩ টেস্ট থেকে ১০০ উইকেটের মালিক হয়ে যাবেন। এর আগে ২৪ টেস্টের আগে কোন কিউই বোলার এক শ’ উইকেট শিকার করতে পারেননি। আর অশ্বিন ৭ উইকেট শিকার করলেই হয়ে যাবেন ২০০ উইকেট শিকারি ক্লাবের সদস্য।
×