ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

রিও অলিম্পিক এ্যাথলেটিক্সে নিষিদ্ধ রাশিয়া

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ১৯ জুন ২০১৬

রিও অলিম্পিক এ্যাথলেটিক্সে নিষিদ্ধ রাশিয়া

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আশঙ্কাটা সত্যিই প্রমাণিত হলো। আগামী আগস্টে রিও ডি জেনিরোয় অনুষ্ঠিতব্য গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকে অংশ নেয়া হচ্ছে না রাশিয়ার ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ড এ্যাথলেটদের। শুক্রবার রাতে এক সভা শেষে এ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন্সের আন্তর্জাতিক সংস্থা (আইএএএফ) এ ঘোষণা দেয়। গত নবেম্বর থেকে সবধরণের আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা ছিল রাশিয়ার এ্যাথলেটদের ওপর। কিন্তু অলিম্পিকে অংশ নেয়ার অনুমতি পাওয়ার আশায় ছিল রাশিয়া। কিন্তু গত চার মাসে আরও অন্তত ৭৪০টি এমন ঘটনা এবং দু’দিন আগে তিনবারের অলিম্পিয়ান সাঁতারু ইয়ানা মার্টিনোভা ডোপ টেস্টে পজিটিভ হওয়ার পর বোঝাই যাচ্ছিল যে আইএএএফ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে না। সেটাই সত্য হয়েছে। এমন ঘোষণার পর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন দারুণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তিনি এ সিদ্ধান্তকে ‘অবিচার ও অন্যায়’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে এ সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের কোন কারণ নেই বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির (আইওসি) সহসভাপতি জন কোয়েটস। তাই রাশিয়ার বিশ্বসেরা ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ড এ্যাথলেটরা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। বিশ্ব ডোপবিরোধী সংস্থা (ডব্লিউএডিএ) এক তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করার মাধ্যমে রাশিয়ার এ্যাথলেটদের মধ্যে নির্ষিদ্ধ ড্রাগ সেবনের মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণের চিত্রটা ফুটিয়ে তোলে। এমনকি এই এ্যাথলেটদের ডোপপাপে জড়িয়ে পড়ার পেছনে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা আছে এমন অভিযোগও ছিল ডব্লিউএডিএ’র প্রতিবেদনে। এরপর থেকেই সাময়িকভাবে নিষেধাজ্ঞার খড়গ ঝুলছিল ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ড এ্যাথলেটদের ওপর। কিন্তু ডোপবিরোধী কর্মকা-, প্রচারণায় বেশ শক্ত ব্যবস্থায় নিয়েছিল রাশিয়ার এ্যাথলেটিক্স ফেডারেশন (রুসাফ), রাশিয়ার ডোপবিরোধী সংস্থা (রুসাডা) এবং সরকার। এমনকি ডোপবিরোধী সংস্থাকে ঢেলে সাজিয়েছিল, আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোকে এনে সবকিছু পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৯ মে পর্যন্ত প্রায় ৭৪০টি ডোপপাপের ঘটনাও শনাক্ত করে। সবমিলিয়ে রুসাডা মোটামুটি আশান্বিত ছিল যে অন্তত আসন্ন রিও অলিম্পিকে তাদের ট্র্যাক এ্যান্ড ফিল্ডের এ্যাথলেটরা অংশ নেয়ার সুযোগ পাবে। কিন্তু শুক্রবার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বসার আগেই নতুন করে মার্টিনোভার ডোপ টেস্টে পজিটিভ হওয়া এবং ৪ বছর রুসাডা কর্তৃক নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি প্রভাব ফেলে। শেষ পর্যন্ত আইএএএফ গবর্নিং বডি শুক্রবারে এক ভোটাভুটির মাধ্যমে আসন্ন রিও অলিম্পিকে রাশিয়ান এ্যাথলেটদের অংশগ্রহণের ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞাটা বহাল রাখে। ভোটে অধিকাংশই রাশিয়ার সাময়িক নিষেধাজ্ঞা আরও বর্ধিত করার পক্ষেই সমর্থন দিয়েছে। তবে আইএএফ প্রেসিডেন্ট সেবাস্তিয়ান কো জানিয়েছেন কোন রাশিয়ান এ্যাথলেট যদি দেশের বাইরে অবস্থান করেন এবং নিশ্চিত করতে পারেন যে তিনি রাষ্ট্রীয় কোন পৃষ্ঠপোষকতার মধ্যে ছিলেন না, সেক্ষেত্রে রিও অলিম্পিকে অংশ নিতে পারবেন। তবে রাশিয়ার পক্ষে নয়, নিরপেক্ষ হিসেবে অংশ নিতে হবে তাকে। ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকের শুধু এ্যাথলেটিক্স থেকেই ৭টি সোনাসহ ১৮টি পদক জিতে যুক্তরাষ্ট্রের পরেই ছিল রাশিয়ার অবস্থান। বিশ্ব এ্যাথলেটিক্সে রাশিয়ানরা বরাবরই কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী যে কোন দেশের জন্য। কিন্তু এবার রিও অলিম্পিকে রাশিয়ান এ্যাথলেটরা থাকছেন না। এরপর রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন দারুণ হতাশা ব্যক্ত করে এটিকে অবিচার বলে অভিহিত করেছেন। তিনি সেন্ট পিটার্সবার্গে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এটা অবশ্যই অন্যায় ও অবিচার। সামগ্রিকভাবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত কিছু আইন আছে, এর মধ্যে একটি হচ্ছে আইনটা সবসময়ই ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যে ব্যবহার হবে। যদি কোন পরিবারের এক সদস্য অপরাধ করে তখন কি পরিবারের সবাইকে আটকে রাখা কিংবা আইনের আওতায় আনা ন্যায়বিচার বলে মনে হয়? তাই এখন যেটা হয়েছে সেটা ঠিক হয়নি। আমি আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির কাছ থেকে উপযুক্ত একটি প্রতিক্রিয়া আশা করছি। হয়তো তারা সঠিক পথেই সিদ্ধান্ত নেবে। ডোপ নেয়ার ক্ষেত্রে যারা প্রলুব্ধ করবে রাশিয়া সবসময়ই তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে।’ তবে পুতিনের এমন আহ্বানের পরও সিদ্ধান্তটা আইওসি বদলানোর কোন উৎসাহ দেখাচ্ছে না। মঙ্গলবার লুসানে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন হবে আইওসির। সেখানে এই নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে। তবে এ বিষয়ে আইওসি সহসভাপতি কোয়েটস বলেন, ‘আমি খুবই আশ্চর্য হব যদি আইওসি সম্মেলনে এটা নিয়ে কোন বাড়তি প্রতিক্রিয়া দেখায়। তবে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা তো অবশ্যই হবে। আন্তর্জাতিক ফেডারেশনের অধিকার আছে যে কোন জাতীয় ফেডারেশনের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার। এ কারণে আমরা মনে করি না ওই সিদ্ধান্তটা আমরা পাল্টাব।’ রাশিয়ার ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ও দারুণ হতাশ হয়েছে আইএএএফের এই নিষেধাজ্ঞা বহালের সিদ্ধান্তে। এছাড়া রাশিয়ার বিশ্বসেরা এ্যাথলেটরা এবং কোচরা দারুণ মর্মাহত হয়েছেন। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন তারা। ‘আকাশের রাণী’ খ্যাত দুইবারের অলিম্পিক স্বর্ণজয়ী পোলভল্টার ইয়েলিনা ইসিনবায়েভা বলেন, ‘এটা মানবিক অধিকার লঙ্ঘন। আমি মানবাধিকার আদালতে আপীল করব। কারণ আমি নিজের এবং আরও যারা নিষ্পাপ এ্যাথলেট আছে তাদের জন্য খুবই হতাশ। কেউ আমাদের অধিকার হরণ করতে পারে না। কিন্তু আমরা যেটা করিনি সেটার জন্য আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। আমার প্রথমত যেটা মনে হচ্ছে এটি রাশিয়ার প্রতি বৈষম্য ছাড়া কিছুই নয়।’ গতবারের অলিম্পিক হাইজাম্প চ্যাম্পিয়ন এ্যানা চিচেরোভা বলেন, ‘এটা নিয়ে কিছু বলা খুব কঠিন। যারা ডোপিং কলঙ্কে নিজেদের জড়ায়নি তাদের জন্য এটা খুবই নির্মম সিদ্ধান্ত। আমিও সেই দুর্ভাগ্যের অংশ।’ রাশিয়ার জাতীয় এ্যাথলেটিক্স দলের প্রধান কোচ ইউরি বোরজাকোভস্কি এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আইএএএফের সিদ্ধান্তে আমরা খুবই মর্মাহত। আমরা ধারণা করেছিলাম সিদ্ধান্তটা আমাদের জন্য ইতিবাচক হবে। কোচিং স্টাফ ও এ্যাথলেটদের পক্ষ থেকে আমি বলতে পারি যে, শেষ পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব। এরপরও যদি তারা আমাদের প্রতিযোগিতা করতে না দেয়, সেক্ষেত্রে বলব এটার জন্য আমার জীবন শেষ হয়ে যাবে না। আমাদের পরবর্তী অলিম্পিকের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে।’
×