ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আইএসের বিরুদ্ধে মার্কিন অভিযান সম্পর্কে আসাদের মূল্যায়ন

বিমান হামলা কাজে আসেনি

প্রকাশিত: ০৬:২০, ৫ ডিসেম্বর ২০১৪

বিমান হামলা কাজে আসেনি

সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটের (আইএস) ওপর মার্কিন নেতৃত্বাধীন কোয়ালিশন বাহিনীর বিমান হামলা কোন কাজে আসেনি। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ এ মন্তব্য করেছেন। তিনি ঐ অভিযান শুরু হওয়ার পর পশ্চিমা মিডিয়ার সঙ্গে তাঁর প্রথম সাক্ষাতকার দিচ্ছিলেন। এতে তিনি নিজেকে তাঁর জাহাজ রক্ষাকারী একজন ক্যাপ্টেন বলে দাবি করেন। খবর টেলিগ্রাফ অনলাইনের। আসাদ বলেন, সেপ্টেম্বরে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ঐ বাহিনীর বোমা বর্ষণ অভিযান শুরু হওয়ায় তাঁর সৈন্যরা রণক্ষেত্রে “কোন পরিবর্তন” লক্ষ্য করেনি। ফরাসী সাপ্তাহিক প্যারিস মার্চের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে আসাদ বলেন, আপনারা বিমান হামলা চালিয়ে সন্ত্রাসবাদের অবসান ঘটাতে পারবেন না। স্থলসৈন্যরাই ভূমিকে চেনে বলে তারা অপরিহার্য। এ কারণেই কোয়ালিশনের নেতৃত্বে দুই মাস ধরে পরিচালিত বিমান হামলায় কোন দৃশ্যমান ফলাফল অর্জিত হয়নি। তিনি বলেন, বিমান হামলা সহায়ক হয়েছে এ কথা সত্য নয়। অবশ্যই সহায়তা করত যদি সেগুলো ব্যাপক মাত্রায় ও দক্ষতার সঙ্গে পরিচালিত হতো। আমরা স্থলযুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছি এবং আমরা কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করিনি। গত বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি সিরীয় যুদ্ধ পরিস্থিতির যে মূল্যায়ন করেন, তা আসাদের মতামতের একেবারেই বিপরীত। কেরি বলেন, বিমান হামলাগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলছে এবং ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সামর্থ্য হ্রাস করছে। কেরি বলেন, আমাদের অঙ্গীকারের মূল্যায়ন করতে খুব সম্ভবত কয়েক বছর লাগবে, কিন্তু আমাদের চেষ্টা এরই মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলেছে। তিনি ব্রাসেলসে ন্যাটো সদর দফতরে আইএসের বিরুদ্ধে কোয়ালিশন গঠনকারী ৬০টিরও বেশি দেশের বৈঠকে ভাষণ দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, কোয়ালিশনের পরিচালিত এক হাজার বার বিমান হামলায় দায়েশের কিছু নেতা মারা গেছে এবং এর রসদ সংগ্রহ ও হামলা চালানোর সামর্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দায়েশ বলতে আরবীতে আইএসকেই বোঝায়। যুক্তরাষ্ট্র প্রথমে আগস্ট মাসে ইরাকে আইএসের ওপর বিমান হামলা শুরু করে। পরবর্তী মাসে বিমান হামলা সিরিয়াতেও সম্প্রসারিত করা হয়। এরপর থেকে রয়েল এয়ার ফোর্স, ফ্রান্স, কয়েকটি পারস্য উপসাগরীয় রাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দূরবর্তী দেশও মার্কিন বিমানবাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয়। আসাদ ও কেরির মূল্যায়নের মধ্যে বাস্তবে খুব বেশি ফারাক নেই। বিমান হামলা ইরাকী সেনাবাহিনী, মিত্রশিয়া মিলিশিয়া এবং ইরানের কুর্দি বাহিনীকে আইএসের অগ্রযাত্রা প্রতিহত করতে এবং কোন কোন ক্ষেত্রে ভূখ- পুনর্দখল করতে সহায়তা করে। সেগুলো সিরিয়ার কুর্দি মিলিশিয়াদের (ওয়াইপিজি) আইএসের হাতে অবরুদ্ধ সীমান্ত শহর কোবানি রক্ষা করতেও সাহায্য করে। কিন্তু সিরিয়ার অবশিষ্টাংশে আইএসের কার্যত রাজধানী রাকার দক্ষিণে হোমস প্রদেশ দখল করে সাবেক সরকার অবিকৃত ভূখ-ে এখন সাফল্যের পরিচয় দিচ্ছে। কেরি বলেন, বিমান হামলা আইএস কনভয়গুলোর চলাচলে বাধা দিচ্ছে। সেগুলো ত্যাগে ইরাক ও পূর্ব সিরিয়ায় ত্বরিৎ হামলা চালাতে সক্ষম ছিল। ইরাকে যেসব এলাকা থেকে আইএসকে হটিয়ে দেয়া হয়েছে, সেগুলো সুন্নী আরব ছাড়া অন্যান্য জনগোষ্ঠী শাসিত অঞ্চলগুলোর প্রান্তদেশে অবস্থিত। সুন্নী আরবরাই আইএসের স্বাভাবিক সমর্থন ভিত্তি। কোয়ালিশনের দীর্ঘমেয়াদী সাফল্য ইরাক ও সিরিয়া উভয় দেশে আইএসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সুন্নী আরবদের রাজি করানোর ওপর নির্ভর করে। ইরাকে চলমান সংঘর্ষে একই পক্ষে ইরাকের ক্রমশ জড়িয়ে পড়ার কারণে আইএসের বিরুদ্ধে যেতে সুন্নী আরবদের রাজি করানো কঠিনতর হয়ে পড়বে। ইরান কোয়ালিশনের কোন সদস্য নয়। ইরানী বিমান বাহিনীর একটি জেট বিমান ইরাকের ভেতর আইএসের ওপর বোমা হামলা চালানোর কাজে অংশ নিয়েছিল বলে জেনস ডিফেন্সে প্রকাশিত এক খবরের সত্যতা ইরান অস্বীকার করেছে। কিন্তু পেন্টাগন ও ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা সূত্রে বলা হয়। তারা এরূপ তৎপরতার খবর জানেন। সাক্ষাতকারে আসাদ লিবীয় নেতা কর্নেল মোয়াম্মার গাদ্দাফি বা ইরাকী নেতা সাদ্দাম হোসেনের ভাগ্যবরণ করতে হবে বলে ভয় পান কিনা। এ প্রশ্ন তাকে করা হয়। জবাবে তিনি বলেন, ক্যাপ্টেন জীবন বা মৃত্যু নিয়ে ভাবেন না, তিনি তাঁর জাহাজকে বাঁচানোর কথা ভাবেন। তিনি বলেন, আমি দেশ রক্ষার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।
×