ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৭ জুন ২০২৪, ৪ আষাঢ় ১৪৩১

অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর

প্রকাশিত: ২১:৩২, ২৪ মে ২০২৪

অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর

.

সম্প্রতি ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওংয়ের সংক্ষিপ্ত সফর থেকে বাংলাদেশের নিঃসন্দেহে কিছু প্রাপ্তি ঘটেছে। বলা দরকার, অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম দেশ। ১৯৭১-এর বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর উন্নত বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় অস্ট্রেলিয়া। মুক্তিযুদ্ধের শুরুর দিকে বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংস নির্যাতন গণহত্যার আলোকচিত্র তুলে গোপনে বহির্বিশ্বের বিভিন্ন তথ্যমাধ্যমে পাঠাতে শুরু করেন অস্ট্রেলীয় নাগরিক ওডারল্যান্ড। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষে বিশ্ব জনমত গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যা বিরাট ভূমিকা রাখে। ওডারল্যান্ডকে আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রীয় খেতাব প্রদানের মাধ্যমে সম্মানিতও করেছে আওয়ামী লীগ সরকার।

দীর্ঘ বিরতির পর অস্ট্রেলিয়ার কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাম্প্রতিক দ্বিপক্ষীয় সফর অবশ্যই তাৎপর্যপূর্ণ। দুই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, নিরাপত্তা প্রতিরক্ষা সহযোগিতার নিরিখে সফরটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। নিকট অতীতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য দুই দেশেরই বেড়েছে। ছয় বছর আগে দুই দেশের বাণিজ্য ছিল ১৪০ কোটি ডলার, যা এখন প্রায় ৪০০ কোটি ডলারে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের পরও অস্ট্রেলিয়া থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধা অব্যাহতভাবে পাবে, এমন একটি আশ্বা পাওয়া নিঃসন্দেহে সুখবর, যা দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর থেকেই প্রাপ্ত। এর ফলে, আগামী কয়েক বছরে দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ এক হাজার কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে।

ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরকে ঘিরে ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা, বাংলাদেশের আর্থিক অগ্রযাত্রাসহ গত এক দশকের বড় সময়জুড়ে পরিবর্তিত পরিস্থিতির জেরে এই অঞ্চলকে ঘিরে অস্ট্রেলিয়ার কৌশলগত অবস্থানে সন্দেহাতীতভাবে পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশকে নিয়ে দেশটির মনোভাবের পরিবর্তন ঘটেছে। অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রাথমিক পণ্য হিসেবে বাংলাদেশ কৃষিজাত পণ্য, বিভিন্ন ধরনের ধাতু খনিজ পদার্থ, তুলা, উলসহ নানা পণ্য আমদানি করে থাকে। অস্ট্রেলিয়ার তুলা উল বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পে ব্যবহার করা হয়। ২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়া থেকে বাংলাদেশ লোহা, কপার জিঙ্ক মাত্র ছয় কোটি ডলারের আমদানি করত। চার বছরের মধ্যে এটি বেড়ে দাঁড়ায় ২০ কোটি ডলারে। যা আশাব্যঞ্জক।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রযুক্তিগত দক্ষতা থাকায় দেশের কৃষি উৎপাদন বাড়াতে অস্ট্রেলিয়ার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেছেন। তিনি খোলাখুলিই বলেন, আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। কারণ, আমাদের জমি কমছে আর মানুষ বাড়ছে। অস্ট্রেলিয়া বিষয়ে আমাদের সাহায্য করতে পারে, কেননা, অস্ট্রেলিয়া কৃষি প্রযুক্তিতে অনেক উন্নত। প্রধানমন্ত্রীর এই আহ্বানে সক্রিয় ইতিবাচক সাড়া অচিরেই মিলবে বলে দেশবাসী প্রত্যাশা করে।

উল্লেখ্য, বর্তমানে প্রায় ৯০ হাজার বাংলাদেশী অস্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছেন এবং তারা অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিতে যথোচিত অবদান রাখছেন। অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তাঁদের দেশে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের আরও সুযোগ বাড়ানোর অনুরোধও জানান প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে অস্ট্রেলিয়া। এটিও বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য সুসংবাদ। এছাড়া টেকসই নিরাপদ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে অস্ট্রেলিয়ার বাংলাদেশের পাশে থাকার আশ্বাসের বিষয়টিও বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের মানবিক সেবা কার্যক্রমে অস্ট্রেলিয়ার সহযোগিতা অব্যাহত থাকছে। সব মিলিয়ে এটা বলা যথাযথ হবে যে, বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরের ভেতর দিয়ে দুদেশের সম্পর্কের অগ্রসরতার ক্ষেত্রে যে উজ্জ্বল সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে, সেটির বাস্তবায়নে সময়োচিত উদ্যোগ গ্রহণই কাম্য।

×