ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৭ জুন ২০২৪, ৪ আষাঢ় ১৪৩১

জাতীয় কবির জন্মদিন

প্রকাশিত: ২১:৩০, ২৪ মে ২০২৪

জাতীয় কবির জন্মদিন

.

আজ ১১ জ্যৈষ্ঠ। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন। প্রেম, মানবতা বিদ্রোহের প্রতীক কবি কাজী নজরুল ইসলাম। ১৮৯৯ সালে পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের চুরুলিয়া গ্রামে এই মহান কবির জন্ম। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে তিনি শোষণ বঞ্চনার বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন।

বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুলের যখন আবির্ভাব, তখন কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ দেশের সাহিত্যে এক বিশাল মহীরুহের মতো অবস্থান করছিলেন। সে সময় খুব কম কবিই রবীন্দ্র প্রভাব এড়িয়ে কাব্যচর্চায় সাফল্য পেয়েছিলেন। কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন সেই বিরল প্রতিভার একজন, যিনি রবীন্দ্র বলয়ের বাইরে বাংলা কবিতায় এক নতুন যুগের সূচনা করেন। তখন ভারতসহ পৃথিবীর নানা দেশে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল। এমন অবস্থায় নজরুল প্রকৃতপক্ষে গোটা ঔপনিবেশিক ব্যবস্থাকেই চ্যালেঞ্জ করেছিলেন। এদিক দিয়ে নজরুল একক অনন্য। নজরুল এক বহুমুখী অনন্য প্রতিভা। তিনি একদিকে ছিলেন বিদ্রোহী, অন্যদিকে প্রেমিক মানবতাবাদী। তাঁর কবিতা গান জাতিকে জাগরণের পথে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। ইসলামী গানের পাশাপাশি তিনি শ্যামাসংগীত রচনা করেছিলেন। কোথাও উদার মানবতাবাদকে বিসর্জন দেননি। তাঁর কবিতা, গান গদ্য উপমহাদেশের মানুষকে সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছে। সাংবাদিক হিসেবেও নজরুল পালন করেছেন অনন্য ভূমিকা। তাঁর সম্পাদিতধূমকেতুগণমানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করে।আনন্দময়ীর আগমনেকবিতা রচনার জন্য কবি নজরুল রাজদ্রোহের অপরাধে কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন।

বাংলা সাহিত্যের অন্যতম বিস্ময়কর প্রতিভা নজরুল কখনই ধন-সম্পদের প্রতি আগ্রহী ছিলেন না। দারিদ্র্য সংগ্রাম ছিল তাঁর চিরকালের সঙ্গী। তিনি জগতের দরিদ্র বঞ্চিত মানুষের দুঃখ-কষ্ট গভীরভাবে অনুভব করেছিলেন। অসময়ে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার কারণে হঠাৎ করেই তাঁর সাহিত্য সাধনা স্তব্ধ হয়ে যায়। এরপরও তিনি দীর্ঘকাল বেঁচেছিলেন। কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা গান ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের অন্যতম প্রেরণা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবিকে সসম্মানে ঢাকায় নিয়ে আসেন। তাঁকে বাংলাদেশের নাগরিকত্বসহ জাতীয় কবির সম্মান দেন।

বাংলাদেশে তাঁর অনেক স্মৃতিবিজড়িত স্থান রয়েছে। তাঁর স্মৃতিবিজড়িত বেশ কয়েকটি স্থান রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে সংরক্ষিত হয়েছে। ঢাকায় নজরুল ইনস্টিটিউট, ত্রিশালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে কবি নজরুলের স্মৃতি সংরক্ষণ করা হয়েছে। এরপরও বলতে হয়, নজরুলের স্মৃতিবিজড়িত বাংলাদেশ পশ্চিমবঙ্গে এখনো তাঁর সঠিক পূর্ণাঙ্গ জীবনী রচনা মূল্যায়ন হয়নি। গবেষকরা নজরুলের পূর্ণাঙ্গ যথাযথ জীবনীর বিষয়ে উদ্যোগ নিতে পারেন। রাষ্ট্রীয়ভাবেও ধরনের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। মনে রাখা দরকার, নজরুল শুধু বাংলাদেশের সম্পদ নন, তিনি বিশ্ব সম্প্রদায়সহ সমগ্র মানবজাতির সম্পদ। বাংলা সাহিত্যে কবি নজরুলের আবির্ভাব অনেকটা ধূমকেতুর মতো। কবির ১২৫তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষেছায়ানটপ্রকাশ করছে তাঁর গানের ভাবসন্ধান, সুরসন্ধান তথ্যসমৃদ্ধ বিশেষ প্রকশনা। স্বল্পসময়ে মহাকালের কণ্ঠে বিশেষ করে কবিতা গানের যে অক্ষয় মালা তিনি পরিয়েছেন, তা অমর, অম্লান, চিরভাস্বর, চিরস্মরণীয়।

×