সরকারের আন্তরিক প্রচেষ্টা ও উদ্যোগে দুই পর্বে বিভক্ত বিশ্ব এজতেমা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে শুরু হয়েছে। শুক্রবার বিশ্ব এজতেমা প্রথম পর্যায়ের প্রথম দিনেই টঙ্গীর তুরাগ তীরে বৃহত্তম জুমার নামাজে সমবেত হন লাখো মুসল্লি। এ সময় এজতেমার মূল ময়দান ছাড়িয়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কসহ আশপাশের সব সড়ক মুসল্লিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। অনেকেই রাস্তার ওপরে, বাড়ি ও বাসের ছাদে, নৌকায় যে যেভাবে পারেন নামাজ আদায় করেন। রবিবার মাওলানা জোবায়েরপন্থীদের পরিচালনায় আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হবে এজতেমার প্রথম পর্ব। ১৭ জানুয়ারি মাওলানা সাদপন্থীদের পরিচালনায় শুরু হবে এজতেমার দ্বিতীয় পর্ব। এজতেমা স্থানে যেন কোনরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে না পারে সেজন্য পুলিশ-র্যাব-গোয়ন্দা বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা ছিল লক্ষণীয়। দু’একটি ছোটখাটো ঘটনা ছাড়া পরিবেশ ছিল শান্তিপূর্ণ এবং অনুকূল। উল্লেখ্য, একসঙ্গে এজতেমা নিয়ে গত বছর সাদ ও জোবায়েরপন্থীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। শেষ পর্যন্ত সরকার তথা স্বরাষ্ট্র ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মধ্যস্থতায় উভয়পক্ষ শান্তি এবং সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দুই পর্বে এজতেমার আয়োজনে সম্মত হয়। নিঃসন্দেহে এটি একটি শুভ উদ্যোগ।
এজতেমার আভিধানিক অর্থ সমাবেশ। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের বৃহত্তম এ সমাবেশের মূল উদ্দেশ্য হলো শান্তির ধর্ম ইসলামের মর্মবাণী প্রচার ও প্রসারের মাধ্যমে নৈতিক উৎকর্ষ সাধন এবং আত্মশুদ্ধি অর্জন। জঙ্গীবাদ, ধর্মান্ধতা, কূপম-ূকতা, মৌলবাদ, অশান্তি, হানাহানির বিপরীতে এই সমাবেশ বিশ্বমানবতার শান্তি, সম্প্রীতি ও কল্যাণ কামনা করা হয়। সেইসঙ্গে অন্তরের পরিশুদ্ধি লাভের জন্য প্রার্থনা করা। টঙ্গীর অদূরে তুরাগ তীরে এই এজতেমায় প্রতিবছরই সমাবেশ ঘটে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের। পবিত্র হজের পর এটি হচ্ছে মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় সমাবেশ।
১৯৬৬ সালে তুরাগ তীরে এজতেমা শুরু হওয়ার পর থেকে পর্যায়ক্রমে এই সমাবেশে দেশ-বিদেশের মুসলমানদের অংশগ্রহণ এবং এর আকার বৃদ্ধি ইসলামের বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের অনন্য দিকটিই তুলে ধরছে। তাই বিশ্বব্যাপী ধর্মপ্রাণ মুসলমানের কাছে এজতেমার গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। মূল বয়ান উর্দুতে হলেও বাংলা, ইংরেজী, আরবী ভাষায় তাৎক্ষণিক অনুবাদের ব্যবস্থা রয়েছে। এজতেমায় যারা অংশ নেন তারা মূলত জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, হানাহানির বিপরীতে শান্তির বাণীই প্রচার করে থাকেন। এজতেমা যথাযথভাবে সম্পন্ন হতে পারছে এটাই শান্তিকামী মানুষের প্রাপ্তি। বিশ্ব এজতেমার আখেরি মোনাজাতে অংশ নেয়া লাখো মুসলমান একদিকে যেমন আল্লাহর কাছে বিশ্ব মানবতার শান্তি, সম্প্রীতি ও কল্যাণ কামনা করেন, তেমনি অন্তরের পরিশুদ্ধি লাভের জন্যও প্রার্থনা করেন।
এবারও আখেরি মোনাজাতে মুসলিম জাহানের কল্যাণ, দেশের কল্যাণ, মুসলিম উম্মাহর সুদৃঢ় ঐক্য, আখেরাত ও দুনিয়ার শান্তি কামনার মধ্য দিয়ে শেষ হবে বিশ্ব এজতেমার দুই পর্ব। ‘আমিন, আল্লাহুম্মা আমিন’ ধ্বনিতে তুরাগ তীর মুখরিত করে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সন্তুষ্টি লাভের আশায় আকুতি জানাবেন মুসল্লিরা। এ সময় হাত তুলে কাতর ও বিনম্র শ্রদ্ধায় দোয়া করেন লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি। মানবতার শান্তি ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠায় বিশ্ব এজতেমা অব্যাহতভাবে জোরালো ভূমিকা রাখবে- সেটাই সবার প্রত্যাশা।
শীর্ষ সংবাদ: