ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৪ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

বিলবোর্ড-ব্যানার উচ্ছেদ

প্রকাশিত: ০৬:৩৭, ১২ জুন ২০১৮

বিলবোর্ড-ব্যানার উচ্ছেদ

কবি বলেছিলেন, মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে। সত্যিই তাই। শনিবারের জনকণ্ঠে ‘বিলবোর্ডে ম্লান নগর সৌন্দর্য’ শীর্ষক প্রতিবেদনে রাজশাহীর হালফিল বিলবোর্ড সংবাদ পড়লে ক্ষুব্ধ হতে হয়। রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের বৈধ বিলবোর্ড মাত্র ৮৩টি। অথচ গোটা নগরীতে ছেয়ে গেছে লাখ লাখ বিলবোর্ড। বিলবোর্ড উচ্ছেদ করতে গিয়ে ব্যর্থ হচ্ছে রাসিক, তারা অসহায়। কেননা সামনেই সিটি নির্বাচন, তাই রাজনৈতিক বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে নগরী যা উচ্ছেদ করা সম্ভব হচ্ছে না। সিটি করপোরেশনের বক্তব্য অনুযায়ী নগরীর লাখ লাখ অবৈধ পোস্টার বিলবোর্ড ও দেয়াল লিখনের সঙ্গে যারা যুক্ত তাদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের প্রার্থী। এসব ক্ষেত্রে নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না। ফলে স্বাভাবিকভাবেই নগরীর দৃশ্যমান অবয়ব বদলে গেছে, সেখানে কদর্যতা বিরাজ করছে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, শুধু রাজশাহী শহর কি? খোদ রাজধানীসহ দেশের প্রায় সব কটি শহরেই রয়েছে অবৈধ বিলবোর্ড, যা নগরীর সৌন্দর্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। শুধু সৌন্দর্যের প্রশ্নই নয়, ভাষারুচি ও উৎকট রঙের বাড়াবাড়িও চোখে পড়ার মতো। যা দেখে অল্পবয়সীরা নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত হয়। নগর পরিকল্পনায় স্পষ্টভাবেই রাস্তার ওপর এবং দুই পাশে বিজ্ঞাপনী বিলবোর্ড স্থাপনের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকে, তবে তা সীমিত আকারে। যাতে নগরীর স্বাভাবিক শোভা ছাপিয়ে তা উৎকট হয়ে উঠতে না পারে। ঢাকার প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক এ বিষয়ে সচেতন ছিলেন বলেই তিনি বিলবোর্ড উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছেন একের পর এক। ফলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকা থেকে প্রায় ২০ হাজার বিলবোর্ড এবং ৭০ হাজার ব্যানার-ফেস্টুন উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়েছিল। প্রচলিত বিলবোর্ডগুলো সরিয়ে নিয়ে নির্দিষ্ট কিছু স্থানে অত্যাধুনিক বিলবোর্ড স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। কেননা, আমরা যত্রতত্র যথেষ্ট পরিমাণে বিলবোর্ড দেখে আসছি। এগুলোর অধিকাংশই মানহীন, ক্ষেত্রবিশেষে চরমভাবে অশৈল্পিক। ঝুঁকিপূর্ণ তো বটেই। পথচারীর মাথার ওপর বিলবোর্ড ভেঙ্গে পড়ার দৃষ্টান্তও রয়েছে। মহানগরের সৌন্দর্য বাড়ায় শিল্পিত বিলবোর্ড। শুধু ব্যবসায়িক কারণে রুচি ও সৌন্দর্যকে বিসর্জন দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ বিলবোর্ড স্থাপন কখনোই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। রাজশাহীর বিষয়টি দুঃখজনক। নগর সংস্থা সিটি করপোরেশন বিগত তিন বছরে কোন ধরনের বিলবোর্ড অপসারণের অভিযান পরিচালনা করেনি। ফলে সুযোগ পেয়ে বিজ্ঞাপনদাতা ও রাজনৈতিক প্রার্থীরা যত্রতত্র কদর্যভাবে অজস্র বিলবোর্ড স্থাপন করে ফেলেছে। জনকণ্ঠের প্রতিবেদক অনুসন্ধানে জানতে পেরেছেন তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে রাসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট না থাকার কারণেই বড় ধরনের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। এটাকে কি আমরা গাফেলতি বলব, নাকি সুকৌশলে এড়িয়ে যাওয়া বলব। কেননা রাসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা এ নিয়ে কোন মন্তব্য করতে সম্মত হননি। এতেই বোঝা যাচ্ছে এখানে কিছু রহস্যময় ব্যাপার স্যাপার আছে। সরকার শুধুমাত্র বৈধ বিলবোর্ড থেকেই রাজস্ব পেয়ে থাকে। অবৈধ বিলবোর্ড থেকে কিছু পাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। ফলে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিতও হচ্ছে। সরকার বঞ্চিত হলে নিশ্চয়ই কোন না কোন মহলের পকেট ভারি হয়। যেখানে অবৈধ কাজ-কারবার সেখানে নিয়ন্ত্রক ও পরিচালনা সংস্থার অসাধু কর্মচারী-কর্মকর্তাদের সংযুক্ত থাকাটাই স্বাভাবিক। তাই সরকারের বিশেষ মনিটরিং কমিটি বিষয়টি খতিয়ে দেখতে পারে। আমরা মনে করি শুধু রাজধানী নয়, সারা দেশের প্রধান প্রধান নগরীতে অবিলম্বে অবৈধ বিলবোর্ড উচ্ছেদে অভিযান চালানো দরকার। এটি কেবলমাত্র নগরীর সুরুচি ও সৌন্দর্যের বিষয়ই নয়, বিপুল রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অসাধু কর্মকা- বহাল রাখারও অপকর্ম। এভাবে চলতে পারে না।
×