ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ইইউতে জিএসপি সুবিধা পেতে

আয়ারল্যান্ডের সমর্থন চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ২১:১৮, ১৮ মার্চ ২০২৪

আয়ারল্যান্ডের সমর্থন চাইলেন প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

এলডিসি উত্তরণ পরবর্তীকালে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা সুসংহত রাখতে ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) জিএসপি সুবিধা পেতে আয়ারল্যান্ডের সমর্থন চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

সোমবার (১৮ মার্চ) গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন আইরিশ এন্টারপ্রাইজ, বাণিজ্য ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী সাইমন কভেনির নেতৃত্বে উচ্চ-পর্যায়ের প্রতিনিধি দল। এসময় এ সমর্থন কামনা করেন সরকারপ্রধান।

ইইউ বাজারে বাংলাদেশের জন্য জিএসপি সুবিধা উত্তরণের মেয়াদ ২০২৯ সাল। এর পরিবর্তে ২০৩২ সাল পর্যন্ত তা বাড়ানোর জন্য আয়ারল্যান্ডের সমর্থন চেয়েছেন শেখ হাসিনা। বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচরাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

সরকারপ্রধানকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এজন্য আয়ারল্যান্ডের সমর্থন চেয়েছেন, যাতে ইইউ বাংলাদেশের জন্য ২০৩২ সাল পর্যন্ত বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা, বিশেষ করে জেনারেলাইজড স্কিম অব প্রেফারেন্স (জিএসপি) বৃদ্ধি করে।

আয়ারল্যান্ডকে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও অংশীদার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ইইউ সদস্য দেশটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে সবসময় আমাদের পাশে থেকেছে। ইইউ প্ল্যাটফর্মে স্বার্থের বিষয়ে এদেশকে সমর্থন করতে আইরিশদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্কে বিনিয়োগ করার জন্য আইরিশ ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান। ৩ থেকে ৪ বিলিয়ন ভোক্তার বাংলাদেশকে সম্ভাব্য বড় মার্কেটিং হাব উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের আইসিটি, ফার্মাসিউটিক্যালস ও কৃষিভিত্তিক শিল্পের মতো বেশ কয়েকটি প্রতিশ্রুতিশীল খাতে আয়ারল্যান্ডের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগের বিশাল সুযোগ রয়েছে।

শ্রম ইস্যু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের শ্রম ইস্যু নিয়ে অসৎ উদ্দেশ্যে ভুল তথ্য ছড়ানো হয়। ইইউভুক্ত দেশগুলো এ ব্যাপারে আমাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করলে এই সুযোগ থাকবে না।

পরিপ্রেক্ষিতে আইরিশ মন্ত্রী সাইমন কভেনি জানান, দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক আরও জোরদার করতে বাংলাদেশে এসেছেন। ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে আয়ারল্যান্ডের প্রথম অনারারি কনস্যুলেট খোলার জন্য তিনি এখানে এসেছেন উল্লেখ করে বলেন, এই কার্যালয় দু’দেশের জনগণের মধ্যে পারস্পারিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও জোরদার করতে সহায়ক হবে।

সাইমন কভেনি বলেন, আয়ারল্যান্ড বাংলাদেশের প্রযুক্তি ও খাদ্য শিল্পে (কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প) প্রযুক্তিগত সহায়তা দিতে চায়। জাতিসংঘ ও ইইউ ফোরামে এদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহায়তার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবে দেশটি।

বর্তমানে আয়ারল্যান্ডে প্রচুর বাংলাদেশি শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে উল্লেখ করে সফররত মন্ত্রী আশ্বস্ত করেন, তারা বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি সংখ্যক শিক্ষার্থীকে স্বাগত জানাবে। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আয়ারল্যান্ড সহায়তা অব্যাহত রাখবে। তবে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে নিরাপত্তা জোরদার, তাদের উপার্জনশীল কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত করার এবং বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের জন্য স্থায়ী ও আরও উন্নত ঘরের ব্যবস্থা করার পরামর্শ দিয়েছেন আইরিশ মন্ত্রী।

জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরের জন্য পর্যাপ্ত সংখ্যক নিরাপত্তা সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তবে হত্যা ও অন্যান্য অপরাধ কখনও কখনও দেখা যায়। কারণ, সেখানে অনেক অভ্যন্তরীণ গোষ্ঠী রয়েছে। যারা এখানে দীর্ঘদিন অবস্থানের ফলে ইতোমধ্যে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে।

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, বিশ্বে শরণার্থীদের জন্য স্থায়ী ঘর নির্মাণের নজির নেই। তবে ভাষানচরে ১ লাখ রোহিঙ্গার জন্য বাংলাদেশ মানসম্মত আবাসনের ব্যবস্থা করেছে। তারা সেখানে যেতে চাইলে আমরা ভাষানচরে প্রায় ৪ লাখ রোহিঙ্গার জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করতে পারি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত কিছু আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বেসরকারি সংস্থা ও দেশের বিরোধিতার কারণে ভাষানচরে আবাসন প্রকল্পটি সফল হচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব এম তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, ভারতে নিযুক্ত আয়ারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত কেভিন কেলি এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত আয়ারল্যান্ডের অনারারি কনসাল মাসুদ জামিল খান উপস্থিত ছিলেন।

 

এস

×