ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৬ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বিশেষ অধিবেশন আজ শুরু ॥ কাল রাষ্ট্রপতির ভাষণ

জাতীয় সংসদের ৫০ বছর

সংসদ রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:২৩, ৫ এপ্রিল ২০২৩

জাতীয় সংসদের ৫০ বছর

আগামীকাল ৭ এপ্রিল শুক্রবার জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্ণ হবে

আগামীকাল ৭ এপ্রিল শুক্রবার জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্ণ হবে। সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার  বেলা ১১টায় জাতীয় সংসদের বিশেষ অধিবেশন বসছে। জাতীয় সংসদের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠেয় এই বিশেষ অধিবেশন (একদশ সংসদের ২২তম) চার কার্যদিবসের মতো চলতে পারে। বিশেষ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ স্মারক বক্তৃতা দেবেন। এ ছাড়া ১৪৭ বিধিতে সাধারণ প্রস্তাব এনে তা গ্রহণ করা হবে। বিশেষ অধিবেশনকে ঘিরে পুরো সংসদ এলাকাকে বর্ণাঢ্য ও মনোলোভা সাজে সজ্জিত করা হয়েছে। 
স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে ১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের যাত্রা শুরু হয়। জাতির পিতা ছিলেন প্রথম সংসদের সংসদ নেতা। জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হয়েছিল ঢাকার তেজগাঁওয়ে তৎকালীন জাতীয় সংসদ ভবনে। সেই হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ আগামীকাল ৭ এপ্রিল অর্ধশত বছর পূর্ণ করছে। 
১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ছিল ১৫টি। অর্থাৎ, প্রথম জাতীয় সংসদে সদস্য সংখ্যা ছিল ৩১৫। বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশন শুররু হয় তেজগাঁওয়ে জাতীয় সংসদ ভবনে ১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল। প্রথম জাতীয় সংসদের স্পীকার নির্বাচিত হন মুহম্মদুল্লাহ এবং ডেপুটি স্পীকার নির্বাচিত হন মো. বয়তুল্লাহ। পরে মুহম্মদুল্লাহ রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলে আবদুল মালেক উকিল স্পিকার নির্বাচিত হন।
জাতীয় সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় স্পিকার ড. শিরিন শারমীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বিশেষ অধিবেশন বসবে। বিশেষ অধিবেশনটি হবে চলতি একাদশ সংসদের ২২তম এবং চলতি বছরের দ্বিতীয় অধিবেশন। এর আগে গত ৫ জানুয়ারি চলতি বছরের প্রথম তথা ২১তম অধিবেশন শুরু হয়ে শেষ হয় ৯ ফেব্রুয়ারি। ওই অধিবেশনে মোট কার্যদিবস ছিল ২৬টি। যেখানে ১৯টি বিল উত্থাপিত হয়। এর মধ্যে বিল পাস হয় ১০টি। এ ছাড়া একটি অধ্যাদেশও উত্থাপিত হয়।

সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ আগামীকাল শুক্রবার বিশেষ অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। বিশেষ অধিবেশনে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের যাত্রা থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত ঐতিহাসিক বিভিন্ন অর্জনসমূহ তুলে ধরা হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণসমূহ প্রচার করা হবে। সংসদ সদস্যরা বিশেষ অধিবেশনে সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আলোচনা করবেন। বিশেষ অধিবেশনটি কত দিন চলবে তা আজ বৃহস্পতিবার সংসদের কার্যোপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে নির্ধারিত করা হবে। 
১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ যাত্রা শুরু করে উল্লেখ করে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৭৩ সালের ওই দিন সংসদের প্রথম বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২৩ সালে আমরা সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী পালন করতে যাচ্ছি। এজন্য ৭ এপ্রিল সংসদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। তিনি বলেন, আমরা যখন সংসদের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করছি তখন একাদশ জাতীয় সংসদ চলমান। এটা অনেক গৌরবের বিষয়। আমাদের সংসদ নেতা  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং স্পিকারও একজন নারী। যেটা জাতীয় সংসদের বিশেষ  বৈশিষ্ট্য হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত।
সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপনের কার্যক্রম তুলে ধরে স্পিকার বলেন, ৫০ বছরের এই বিশেষ সময়টিকে উদযাপনের জন্য কিছু কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। তার মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে- একটি বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ইতোমধ্যে এই বিশেষ অধিবেশন আহ্বান করেছেন। সেখানে সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আসবেন, তিনি স্মারক বক্তৃতা দেবেন। পরবর্তী অংশে ১৪৭ বিধিতে সাধারণ আলোচনার জন্য সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রস্তাব তুলবেন।

প্রধানমন্ত্রী সেটি উত্থাপন ও বক্তব্য রাখার পর সকল সদস্যরা এই আলোচনায় অংশগ্রহনের সুযোগ পাবেন। আলোচনায় আমরা প্রবীণ সদস্য বিশেষ করে ১৯৭৩ সালের সংসদের সদস্যদের অভিজ্ঞতা আমরা শুনব। ৮ এপ্রিল আলোচনা শুরু হয়ে ৯ এপ্রিল তা সমাপ্তির দিকে যাবে এবং প্রস্তাব সাধারণ সর্বসন্মতক্রমে গ্রহণ করা হবে। এর মাধ্যমে অধিবেশন সমাপ্তির দিকে যাবে। আমরা বিশেষ অধিবেশনের একটি খসড়া কর্মসূচি গ্রহণ করেছি। এর সবকিছু চূড়ান্ত হবে কার্যউপদেষ্টা কমিটির  বৈঠকে।
স্পিকার জানিয়েছেন, বিশেষ অধিবেশনের আলোচনাগেুলো লিপিবদ্ধ করা হবে। তা একত্রিত করে বই আকারে প্রকাশের উদ্যোগ নেওয়া হবে। এর আগে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীতে যে বিশেষ অধিবেশন হয়েছিল তার আলোচনাগুলোকেও বই আকারে ইতোমধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে। আজ কার্যউপদেষ্টা কমিটির  বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এই বইটির মোড়ক উন্মোচন করবেন।
বিশেষ অধিবেশন ছাড়াও বছরব্যাপী কিছু কিছু অনুষ্ঠান থাকবে বলে জানান ড. শিরীন শারমিন।

তিনি বলেন, আমরা প্রবীন সংসদ সদস্যের সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে পারষ্পরিক একটি মতবিনিময়ের চিন্তা করছি। সিনিয়র সংসদ সদস্যরা তাদের অভিজ্ঞতা সেখানে েেশয়ার করবেন। বর্তমানের তরুণ শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন থাকলে সেটা করবেন। আমরা আন্তর্জাতিক একটি সম্মেলনও করতে চাই। সেটা হয়ত বাজেট সেশনের পরে হবে। সেখানে আমরা অন্যান্য দেশের কিছু স্পিকারসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানাব। সেটি সুবর্ণজয়ন্তী পালনের অংশ হবে বলে আশা করছি। সেটা সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে হয়ত হবে।
বিশ্বের অন্যতম দৃষ্টিনন্দন আইনসভা ॥ বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ ভবন পৃথিবীর দৃষ্টিনন্দন আইনসভা ভবনের একটি। রাজধানী ঢাকার শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার আয়তন ২১৫ একর। দৃষ্টিনন্দন এ ভবনের নক্সা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত স্থপতি লুই আই কান। সংসদ ভবন এলাকাকে প্রধান ভবন, দক্ষিণ প্লাজা ও প্রেসিডেন্সিয়াল প্লাজা এই তিনটি অংশে ভাগ করা হয়েছে।

সংসদের পেছন দিকে ক্রিসেন্ট লেক নামে একটি নান্দনিক জলাধার রয়েছে। সংসদের মূল ভবনের পাশাপাশি রয়েছে উন্মুক্ত সবুজ পরিসর, মনোরম জলাধার ও সংসদ সদস্যদের কার্যালয়। ১৯৬১ সালে ৯তলা এ ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ইতিহাসের নানা চড়াই উতরাই পেরিয়ে ১৯৮২ সালের ২৮ জানুয়ারি এ ভবনের উদ্বোধন করা হয়।

×