ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি

প্রকাশিত: ২৩:৫৪, ৪ জুন ২০২০

তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাজেট বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রাণঘাতী করোনার কারণে সৃষ্ট অনাকাক্সিক্ষত বিপর্যয় রোধ করে শিক্ষার অর্জন ধরে রাখা এবং শিক্ষাকে এগিয়ে নিতে তথ্য প্রযুক্তিখাতে বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে গণস্বাক্ষরতা অভিযান। বুধবার প্রাক-বাজেটে এই দাবি জানানো হয়েছে। আসন্ন ২০২০-২০২১ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে শিক্ষা খাতে ন্যূনতম ১৫ শতাংশ বরাদ্দের দাবি জানিয়ে সরকারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে গণস্বাক্ষরতা অভিযান। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবির পাশাপাশি বাজেট ব্যবস্থাপনায় অর্থব্যয়ের সক্ষমতা বাড়ানো ও অর্থ ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করারও দাবি জানানো হয়েছে। গণস্বাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরীর সঞ্চালনায় ভাচ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ছিলেন সংসদ সদস্য গণস্বাক্ষরতা অভিযানের সহ-সভাপতি আরমা দত্ত, গণস্বাক্ষরতা অভিযানের সহসভাপতি ড. মনজুর আহমেদ, আহছানিয়া মিশনের নির্বাহী পরিচালক ড. এহছানুর রহমান, ব্র্যাকের পরিচালক (শিক্ষা কর্মসূচী) ড. শফিকুল ইসলাম, সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের রিসার্চ ডিরেক্টর ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম, গণস্বাক্ষরতা অভিযানের উপ-পরিচালক কে এম এনামুল হক। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বিগত দুইদশকে শিক্ষায় আমাদের অগ্রযাত্রা সমুন্নত রাখার জন্য ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেটকে সামনে রেখে এখনই একটি শিক্ষা পুনরুদ্ধার কার্যক্রম হাতে নেয়া প্রয়োজন। শিক্ষা পুনরুদ্ধারে বিশেষ পরিকল্পনার উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, করোনা ঝুঁকি প্রশমন ও এডুকেশন রিকভারি কার্যক্রমের আওতায় বর্তমান অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দসহ কমপক্ষে দুই-তিন বছর মেয়াদী একটি পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। বিশেষ পরিকল্পনায় পাঠদান, শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় সহায়তা দেয়া, শিক্ষক ও অভিভাবকদের আশ্বস্ত করা, অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষাগুলো বাদ দেয়া ও পাঠদানের রুটিন সমন্বয় করা আবশ্যক। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, আগামীদিনের শিক্ষা হবে তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর। এইজন্য অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদ্যালয় পর্যায়ে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত ও ইন্টারনেট সংযোগ অত্যন্ত জরুরী। তাই এখাতে পর্যাপ্ত বাজেট বরাদ্দের বিকল্প নেই। এছাড়া শিক্ষক প্রশিক্ষণ মনিটরিংয়ের জন্য আইসিটির ব্যবহার বিশেষ করে বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ দেয়ার জন্য গধংংরাব ঙহষরহব ঙঢ়বহ ঈড়ঁৎংব (গঙঙঈ) চালু করা এবং এসব কার্যক্রম সমন্বিতভাবে বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। বলা হয়, বিটিআরসি, এটুআই, আইসিটি বিভাগ, এনসিটিবি, ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী সংস্থা, মোবাইল অপারেটর এবং সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সেবা প্রদানকারী সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে তথ্য প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা ব্যবস্থাপনার একটি সুদৃঢ়ভিত্তি তৈরি করতে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ প্রয়োজন। আইসিটিভিত্তিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট এনজিওদের এই প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা যেতে পারে। আইসিটি সহায়ক কারিকুলাম ও টেক্সট বই, শিক্ষা সহায়ক উপকরণ প্রণয়ন ও শিক্ষক প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের প্রতিটি শিক্ষার্থী ট্যাবলেট বা যুগোপযোগী অন্য কোন আইসিটি ডিভাইস পায় সেই বিষয়ে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। দেশের অভিজ্ঞ ও দক্ষ শিক্ষকের ক্লাসে যেন প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরাও অংশ নিতে পারে সেই লক্ষ্যে ইন্টারনেটের নিরবচ্ছিন্ন সংযোগ ও সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ থাকতে হবে। গণস্বাক্ষরতা অভিযান বলছে, করোনার সরাসরি প্রভাবে শ্রেণীকক্ষভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সরকার এ পরিস্থিতি উত্তরণের জন্য টেলিভিশন, রেডিও, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেটভিত্তিক শিক্ষাকর্মসূচী চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও এর মাধ্যমে এখনও সব শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। তবে মোবাইলে এফএম রেডিও’র মাধ্যমে ৯৬ শতাংশ শিক্ষার্থীর কাছে পৌঁছা সম্ভব। সংবাদ সম্মেলনে শিশুদের আয় ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বিদ্যমান শিক্ষাবৃত্তির সঙ্গে আর কিছু অর্থ দেয়ার জন্য প্রস্তাব করা হয়। এতে বাড়িতে থাকা অন্য শিশুটিরও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব। শিক্ষাক্ষেত্রে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমের আওতা বাড়িয়ে উপবৃত্তি ও স্কুল মিল কার্যক্রম, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষাসহ সব পর্যায়ের সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীর জন্য তা সম্প্রসারণ করার দাবি জানানো হয়। এছাড়াও প্রতিবন্ধী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, চর-হাওড় ও উপকূলীয় এলাকা, দুর্গম এলাকা, শহরের বস্তি এবং গ্রামীণ জনপদের শিক্ষার্থীদের বিশেষ চাহিদা মেটাতে বাজেটে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানানো হয়। চলমান বিভিন্ন প্রকল্প আরও একবছর বাড়িয়ে দেয়ারও প্রস্তাব করা হয় সংবাদ সম্মেলনে।
×