ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

কৌশল নির্ধারণে ২৫ নবেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা

বায়ু ও শব্দদূষণ রোধে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া হবে

প্রকাশিত: ০৯:৩৯, ২১ নভেম্বর ২০১৯

বায়ু ও শব্দদূষণ রোধে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়া হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সরকার ঢাকাসহ সারাদেশে পরিবেশ দূষণ রোধে বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। রাজধানীর বায়ু ও শব্দ দূষণ বন্ধে সবগুলো মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে কাজ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আর এই লক্ষ্যে করণীয় ঠিক করতে আগামী ২৫ নবেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন। তিনি বলেন, বৈঠকে ঢাকাসহ সারাদেশের বায়ু ও শব্দদূষণ প্রতিরোধে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের কৌশল নিয়ে আলোচনা করা হবে। বুধবার রাজধানীর গুলশানে স্পেকট্রা ভবনে আয়োজিত এক কর্মশালার উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ উন্নয়ন পরিষদ এবং কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড বঙ্গোপসাগর উপকূল অঞ্চলে জলবায়ু অভিযোজন সম্পর্কিত পঞ্চম উপ-আঞ্চলিক এই কর্মশালার আয়োজন করে। এ সময় মন্ত্রী জানান, ২৫ নবেম্বর বায়ুদূষণ রোধে ওই সভায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীগণ এবং ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের দুই মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দফতর ও সংস্থার প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। শীত মৌসুম আসার আগেই রাজধানীতে বায়ু দূষণ মারাত্মক রূপ নিয়েছে। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে দিনের বেলায় নাক মুখ খোলা রেখে বাইরে বের হওয়া মুস্কিল। পরিবেশ অধিদফতর জানিয়েছে, বাতাসে ভাসমান বস্তুকণার (পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম) পরিমাপ করা হয় প্রতি ঘনমিটারে মাইক্রোগ্রাম (পিপিএম-পার্টস পার মিলিয়ন) এককে। এসব বস্তুকণাকে ১০ ও ২.৫ মাইক্রোমিটার ব্যাস শ্রেণীতে ভাগ করে তার পরিমাণের ভিত্তিতে ঝুঁকি নিরূপণ করা হয়ে থাকে। বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে ২.৫ মাইক্রোমিটার ব্যাসের বস্তুকণার পরিমাণ (পিপিএম) যদি শূন্য থেকে ৫০ -এর মধ্যে থাকে, তাহলে ওই বাতাসকে বায়ু মানের সূচকে (একিউআই) ‘ভাল’ বলা যায়। এই মাত্রা ৫১-১০০ হলে বাতাসকে ‘মধ্যম’ মানের এবং ১০১-১৫০ হলে ‘বিপদসীমায়’ আছে বলে ধরে নেয়া হয়। আর পিপিএম ১৫১-২০০ হলে বাতাসকে ‘অস্বাস্থ্যকর’, ২০১-৩০০ হলে ‘খুব অস্বাস্থ্যকর’ এবং ৩০১-৫০০ হলে ‘অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর’ বলা হয়। দেশের সিটি কর্পোরেশন এলাকার ১১টি স্থানের বাতাসে ২.৫ মাইক্রোমিটার ব্যাস পর্যন্ত অতি ক্ষুদ্র বস্তুকণার পরিমাণ নিয়মিত পরিমাপ করা হচ্ছে ‘সিএএসই’ প্রকল্পের মাধ্যমে। পরিবেশ অধিদফতর বলছে চলতি নবেম্বর মাসের শুরুতেই ঢাকার বাতাস ‘অস্বাস্থ্যকর’ মাত্রায় পৌঁছে যায়। ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আসার আগে প্রতিদিনই বাতাসে ভাসমান বস্তুকণার পরিমাণ ছিল ১৫০ পিপিএম এর ওপরে। গত সোমবার ঢাকার বিভিন্ন স্থানে এর মাত্রা ২৩৩ পিপিএম পর্যন্ত উঠে যায়। এদিকে ঢাকার শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়ছে। শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে একটি নীতিমালা থাকলেও তা প্রচারের অভাবে সাধারণ মানুষ এ বিষয়ে অবহিত নয় বললেই চলে। পরিবেশ অধিদফতরের একটি জরিপে দেখা গেছে নীতিমালা অনুযায়ী রাজধানী ঢাকায় যেখানে সর্বোচ্চ শব্দের মাত্রা থাকা উচিত ৩৫ থেকে ৭৫ ডেসিবলের মধ্যে সেখানে পাওয়া যাচ্ছে ১৩২ ডেসিবল পর্যন্ত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই মাত্রার শব্দ মানব স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ। শুধু তাই নয় রাজধানীর পরিবহনগুলো কারণে অকারণে হর্ন বাজায় বলেও গবেষণায় উঠে এসেছে। হর্ন গণনায় দেখা যায়, অনেক স্থানেই মাত্র ১০ মিনিটে ৫শ’ থেকে ১ হাজারবার বাজানো হচ্ছে। এ ছাড়া সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠান, নির্মাণ কাজ এবং কল-কারখানা থেকেও অনিয়ন্ত্রিত শব্দ দূষণ হচ্ছে। মন্ত্রী বলেন, এসব রোধে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকে করণীয় নির্ধারণ করা হবে। বঙ্গোপসাগর উপকূল অঞ্চলে জলবায়ু অভিযোজন সম্পর্কিত পঞ্চম উপ-আঞ্চলিক কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য বাংলাদেশসহ বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলো দায়ী নয়। দুঃখের বিষয় দায়ী দেশগুলো প্রতিশ্রুতি ছাড়া এ বিষয়ে কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। স্পেনের মাদ্রিদে আগামী ২ থেকে ১৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য পরিবেশ বিষয়ক কপ-২৫ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিপূরণ দিতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর পক্ষ থেকে এবার ঐক্যবদ্ধভাবে জোর দাবি জানানো হবে। জলবায়ূ পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় সহযোগিতা দিতে উন্নত দেশগুলোকে বাধ্য করতে হবে। বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ নেগোসিয়েটিং টিমের সমন্বয়কারী ও পিকেএসএফের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিবেশ,বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মোঃ শাহাব উদ্দিন। অতিথি ছিলেন কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. একেএম মুসা, প্রিজন কোলকাতার নির্বাহী পরিচালক অনিরুদ্ধ দে এবং কর্মশালার আহ্বায়ক ড. নিলুফার বানু। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড এর সাঈদ মাহমুদ রিয়াদ। দিনব্যাপী এ কর্মশালায় বাংলাদেশের পাশাপাশি ভারত ও নেপালের বিশেষজ্ঞরা অংশগ্রহণ করেন।
×