ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

জাফর ইকবালের ওপর হামলা

ফয়জুরের বাবা মামা ও মা রিমান্ডে

প্রকাশিত: ০৫:০২, ১২ মার্চ ২০১৮

ফয়জুরের বাবা মামা ও মা রিমান্ডে

শংকর কুমার দে ॥ বিশিষ্ট লেখক ও সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জাফর ইকবালকে হত্যা চেষ্টার সময়ে হামলার মামলায় হামলাকারী ফয়জুর হাসান ওরফে ফয়জুর সালাফি বা আহলে হাদিস থেকে জঙ্গীবাদে যোগ দেয়ার পর হামলার আগে নিজের পরিবারেও জঙ্গীবাদের দাওয়াত দিয়েছিল। ফয়জুর জঙ্গী মতবাদে বিশ্বাসী সহযোগী তরুন সুমনের সঙ্গে বিয়ে দিতে চেয়েছিল তার বোনকেও। সেই সুমনকে খুঁজছে পুলিশ। হামলাকারী ফয়জুর হাসানের বাবা শফিকুর রহমান ও মামা ফজলুর রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সিলেটের আদালত থেকে ৫ দিনের রিমান্ড ও মা মিনারা বেগমকে ২ দিনের রিমান্ড পেয়েছে পুলিশ। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, হামলাকারী ফয়জুলসহ তার বাবা-মা ও মামাকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে জাফর ইকবালের ওপর হামলার আদ্যোপান্ত জানার চেষ্টা করছে। ফয়জুরের জঙ্গীবাদে সম্পৃক্ত হওয়ার মূল কারণগুলোও জানার চেষ্টা করেছেন তদন্তকারীরা। কারণ ফয়জুল তার পরিবারের সদস্যদেরও জঙ্গীবাদে দাওয়াত দেয়ার মাধ্যমে তার জঙ্গীবাদে বিশ্বাসী হওয়ার পরের ঘটনাগুলো পরিবারের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। জাফর ইকবালের ওপর হামলার ঘটনার রহস্য উম্মোচনের স্বার্থেই হামলাকারীর বাবা, মা ও মামাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ ছাড়া জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে ফয়জুরের জঙ্গীবাদী বিশ্বাসী হওয়ার নেপথ্যের কারণ ও কারা জড়িত তার খোঁজ করাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারী ফয়জুর হাসান শফিকুলের বাবা-মা ও মামাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানিয়েছে জালালাবাদ থানার ওসি শফিকুল ইসলাম। রবিবার রিমান্ড শুনানি শেষে ফয়জুরের মামা ফজলুর রহমান ও বাবা আতিকুর রহমান ও মামা ফজলুর রহমানকে ৫ দিনের এবং মা মিনারা বেগমের ২ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন সিলেট মহানগর হাকিম হরিদাস কুমার। রিমান্ড শুনানির আগে হামলাকারী ফয়জুরের বাবা, মা ও মামাকে আদালতে হাজির করা হয়। এর আগে গত বৃহস্পতিবার হামলাকারী ফয়জুরকে ১০ দিনের রিমান্ডে পেয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। গত ৩ মার্চ বিকেলে সিলেট শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এক অনুষ্ঠানে জাফর ইকবালের ওপর হামলা চালায় ফয়জুল হাসানা ওরফে ফয়জুর। তাকে ঘটনাস্থল থেকে আটক করে গনপিটুনি দিয়ে পুলিশে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। ওই দিন রাতেই ফয়জুরকে প্রধান আসামি করে জালালাবাদ থানায় মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ইশফাকুল হোসেন। সে দিনই নগরীর টুকেরবাজারের শেখপাড়া থেকে ফয়জুলের মামাকে আটক করে পুলিশ। পরদিন মদিনা মার্কেট এলাকা থেকে ফয়জুলের বাবা ও মাকে আটক করা হয় বলে রিমান্ড আবেদনের নথি থেকে জানা গেছে। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, এনামুল হাসান নামে ফয়জুলের আরেক ভাইকে হামলার পাঁচ দিন পর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গাজীপুর থেকে আটক করা হয়েছে। সেও জঙ্গীবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হামলার পরপরই ফয়জুলের মোবাইল ফোন ও ট্যাব এবং কম্পিউটার নিয়ে পরিবারের সঙ্গে সিলেটের বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় সে। হামলার দু’দিন পর ফয়জুলের বাবা-মা কে গ্রেফতার করা হলেও এনামুলকে পাওয়া যাচ্ছিল না। তাকেও গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা বলেন, হামলাকারী ফয়জুল অনলাইনে জড়িয়ে পড়ে জঙ্গীবাদে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানায় সে। নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গী সংগঠন আনসরুল্লাহ বাংলা টিম এবং আনসার আল ইসলামের অনলাইন গ্রুপ দাওয়াহ ইলাল্লাহ সঙ্গে যুক্ত হয়ে পাঠ নেয় সাংগঠনিক কার্যক্রমের। দাওয়াহ ইলাল্লাহর নির্দেশনা অনুসারে জাফর ইকবালের ওপর সে একাই হামলা করেছে বললেও তার এই হামলা পরিকল্পনার সঙ্গে আরও কেউ না কেউ সরাসরি যুক্ত ছিল বলেই তদন্তে অনুমিত হয়। হামলাকারী ফয়জুরের সঙ্গে আর কে কে রয়েছে তার নেপথ্যের জঙ্গী নেতাদের সন্ধান পাওয়া অপরিহার্য বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা। আর এ জন্যই ফয়জুরের ভাই এনামুলকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। রিমান্ডে এনে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডে আনা হয়েছে হামলাকারী ফয়জুলের বাবা, মা ও মামাকে। হামলাকারী ফয়জুলকে দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের সময় অনেক প্রশ্নের উত্তরও জানার চেষ্টা করেছে ঢাকার কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের কর্মকর্তারা। সিটিটিসির এক কর্মকর্তা বলেন, আদালতে রিমান্ডের আবেদনে বলা হয়েছে, জাফর ইকবালের ওপর হামলাকারী ফয়জুল জিজ্ঞাসাবাদে হামলার দায় স্বীকার করেছে। তবে তার সঙ্গে আড়ালে কোন ব্যক্তি, উগ্রবাদী কোন সংগঠন কিংবা উচ্চ পর্যায়ের কারও যোগাযোগ আছে কিনা সেই বিষয়টি তদন্তে খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ তদন্তের শুরুতেই পুলিশ ধারণা করছে, হামলাকারী ফয়জুল একা নয়, তার সঙ্গে আরও কয়েকজন জড়িত থাকতে পারে। এ জন্য ফয়জুলের সঙ্গে তার ভাই এনামুল, বাবা শফিকুল ইসলাম, মা মিনারা বেগম ও মামা ফজলুর রহমানকে রিমান্ডে এনে জাফর ইকবালকে হত্যা চেষ্টার উদেশ্যে হামলার রহস্য উম্মোচনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
×