ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

মালিতে মাইন বিস্ফোরণে নিহতদের বাড়িতে থামছে না কান্না

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২ মার্চ ২০১৮

মালিতে মাইন বিস্ফোরণে নিহতদের বাড়িতে থামছে না কান্না

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ১ মার্চ ॥ মালির দোয়েঞ্জায় মাইন বিস্ফোরণে নিহত জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীর বাংলাদেশী সেনা সদস্য মোহাম্মদ রায়হানের বাড়িতে চলছে মাতম। সাঁথিয়া উপজেলার কাশিনাথপুরের সোমাশনারী গ্রামের সৈনিক রায়হানের বাড়িতে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন পরিবারের সদস্যরা। তাদের সান্ত¡না জানাতে আসছেন এলাকার লোকজনসহ স্বজনরা। বৃহস্পতিবার ভোরে রায়হানের মৃত্যুর সংবাদ তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছায়। এ খবর জেনে রায়হানের স্ত্রী-সন্তান, মা-বাবার চিৎকারে আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। স্বামীর মৃত্যুর খবরে স্ত্রী সোহানা খাতুন বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। তিনি কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, বুধবার বিকেলে ভিডিওকলে তার সাথে সর্বশেষ কথা হয়। কাজ শেষে আবার কথা হবে এ কথাই যে শেষ কথা তা কে জানত। ছোট অবুঝ দুই শিশু কন্যাকে কি বলবো তা আমার জানা নেই। দু’মাস পরেই ওর দেশে আসার কথা ছিল তা আর হলো না। রায়হানের দু’শিশু ইশরাত জাহান, নুশরাত জাহান বাবার ছবি হাতে নিয়ে বাবা ডাকতেই উপস্থিত সবারই চোখ ভিজে যায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে রায়হানের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র। এলাকাবাসীর ভিড় আর স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে উঠেছে সাঁথিয়া উপজেলার সমাশনারী গ্রামের পরিবেশ। নিহতের চাচা ইসলাম প্রামানিক জানান, গতরাত ১০টার দিকে টেলিভিশনের সংবাদে তারা জানতে পারেন রায়হান নিহত হওয়ার বিষয়টি। বাবা মোসলেম প্রামানিক বাড়ির উঠোনে বসে আছেন রায়হানের অবুঝ দুই শিশুকে নিয়ে। স্থানীয়দের কোন সান্ত¡নাতেই তাদের কমছে না শোক। এদিকে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন স্ত্রী শোহানা ও মা রহিমা বেগম। নিহত রায়হানের ছোট বোন আঁখি খাতুন জানান, দরিদ্র পরিবারের উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন ছিলেন তার ভাই। শান্তিরক্ষা মিশনে গেলে যে আয় হবে তা দিয়ে তাদের দুর্দশা কাটবে এমন স্বপ্নই তাদের ছিল। কিন্তু আকস্মিক এ ঘটনায় পরিবারের সবাই হতবিহ্বল। চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টাফ রিপোর্টার চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে জানান, আর মাত্র আড়াই মাস পর দেশে ফেরার কথা ছিল জাতিসংঘ মিশনে কর্মরত সেনা সদস্য জামাল উদ্দিনের। কিন্তু বুধবার রাতে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে তার পিতা মেশের আলীকে জানানো হয় যে তার ছেলে মিশনে বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয়েছে। এজন্য পরিবারের সকলকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেয়া হয়। শিবগঞ্জ উপজেলার ঘোড়াপাখিয়া ইউনিয়নের ঘাইসাপাড়া গ্রামে তার পরিবারে চলছে আহাজারি। ১৩ বছর আগে সেনাবাহিনীতে চাকরি নেন তিনি । যশোর সেনানিবাসে কর্মরত অবস্থায় প্রায় ৯মাস আগে তিনি শান্তি মিশনে যোগ দেন। ৭বছর আগে বাষের গ্রাম মহারাজপুরের ফাহিমা আক্তার শিল্পী খাতুনের সঙ্গে বিয়ে হয় জামাল উদ্দিনের। তাদের পাঁচ বছরের একটি ছেলে রয়েছে। পিরোজপুর নিজস্ব সংবাদদাতা পিরোজপুর থেকে জানান, মালিতে রাস্তার পাশে পুঁতে রাখা মাইন বিস্ফোরণে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা বাহিনীতে নিয়োজিত চার বাংলাদেশী সেনা সদস্যের মধ্যে ওয়ারেন্ট অফিসার আবুল কালামের বাড়ি পিরোজপুর জেলায়। তিনি জেলার নাজিরপুর উপজেলার কলারদোয়ানিয়া ইউনিয়নের উত্তর কলারদোয়ানিয়া গ্রামের মৃত মকবুল হোসেনের পুত্র। বাড়িতে তার স্ত্রী ও এক কন্যা ও এক পুত্র সন্তান রয়েছে। এদিকে বুধবার এ খবর জানান পর থেকেই নিহতের বাড়িতে চলছে মাতম। নিহত কালামের চাচাত ভাই সাইফুল্লাহ জানান, ওয়ারেন্ট অফিসার আবুল কালাম ১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সেনাবাহিনীতে যোগদান করে এবং ২০১৭ সালের ২০ মে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে যোগদান করে মালিতে যায়।
×