ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

রাষ্ট্রীয় আইন লঙ্ঘন করে বিজেএমসিতে তিন উপদেষ্টা;###;বিজেএমসিতে নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছে সিন্ডিকেট

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জরুরী বৈঠক আজ

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২৮ জানুয়ারি ২০১৮

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে জরুরী বৈঠক আজ

বিভাষ বাড়ৈ ॥ বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনে (বিজেএমসি) রাষ্ট্রীয় আইন লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে তিন উপদেষ্টা নিয়োগের তুঘলকি কা- নিয়ে আজ জরুরী বৈঠকে বসছে পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, মামলা, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের তাগাদাপত্র, গোয়েন্দা সংস্থা ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের জেরেই হতে যাচ্ছে বৈঠক। এদিকে মামলা, গ্রেফতার, প্রতিমন্ত্রীর আবেদন এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরও বহাল তবিয়তে আছেন বিজেএমসির সিন্ডিকেট। জালিয়াতির মাধ্যমে পাট সরবরাহকারীদের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিলেও অপরাধীরা আছেন বহাল। এমনকি গ্রেফতার হলেও জামিন নিয়েই কাজ করে যাচ্ছেন দাপটের সঙ্গে। অথচ পাট সরবরাহ করেও পাওনা টাকা পাচ্ছেন না পাট ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় সরকারী এ প্রতিষ্ঠান থেকে পাট ব্যবসায়ীরা মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন বলে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিজেএমসিতে অপরাধী প্রতারক চক্রের দাপটে সরকারের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে অভিযোগ করে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যেই প্রতারণা শিকার হয়ে বিভিন্ন জেলায় মামলা করেছেন। পাট সরবরাহকারীদের টাকা পরিশোধ ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সরকারের মর্যাদা রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি দিয়েছেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী (মাদ্রাসা ও কারিগরি) কাজী কেরামত আলী এমপি। চিঠি দিয়েছেন পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমকেও। ব্যবসায়ীদের মামলার কাগজপত্র, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের চিঠি এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী (মাদ্রাসা ও কারিগরি) কাজী কেরামত আলীর লেখা আবেদনপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিজেএমসির নরসিংদীর ইউএমসি জুটমিলে রাজবাড়ী থেকে পাঠানো পাট বহনকারী ট্রাক নম্বর ও চালকের নাম ঠিক রেখে কৌশলে মালিক ও এজেন্সির নাম পরিবর্তন করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করেছে অপরাধীচক্র। যাদের সঙ্গে তিন উপদেষ্টাসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের যোগসাজশের অভিযোগ এনেছেন দেশের পাট ব্যবসায়ীরা। মন্ত্রণালয়ে আজকের বৈঠকের বিষয়ে জানা গেছে, উপদেষ্টা নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হতে পারে। গত মাসে জনকণ্ঠ পত্রিকায় ‘উপদেষ্টা নিয়োগ অবৈধ’ শিরোনামে সরকারের প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। যেখানে বলা হয়েছিল, আইন লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে বিজেএমসি নিয়োগ দেয়া হয়েছে তিন উপদেষ্টা। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পিআরএলে থাকা অবস্থায় তিন কর্মকর্তার উপদেষ্টা নিয়োগ সম্পূর্ণ অবৈধ। গোয়েন্দা সংস্থার এমন প্রতিবেদনে নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। বিজেএমসিতে অবৈধভাবে নিয়োগকৃত তিন উপদেষ্টাকে নিয়ে অস্বস্তিতেই মন্ত্রণালয়। সংস্থাপন মন্ত্রণালয় থেকে এই অবৈধ নিয়োগে কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চেয়ে দ্বিতীয় দফা তাগাদা দেয়ার পর সম্প্রতি বিজেএমসির পক্ষ থেকে একটি বিভ্রান্তিমূলক ও অসঙ্গতিপূর্ণ মতামত দিয়েছে। এ মতামত ও নির্বাহী ক্ষমতাপ্রাপ্ত অবৈধ উপদেষ্টাদের ভাগ্য নির্ধারণেই মন্ত্রণালয়ে বৈঠক আহ্বান করা হয়েছে। এ বৈঠকের ওপর নির্ভর করছে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের ভাবমূর্তি। মন্ত্রণালয় কি অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়ার পক্ষে যাবে, নাকি প্রশাসন ক্যাডারের নতুন কর্মকর্তাদের বিজেএমসির পরিচালক পদে যোগ দেয়ার সুযোগ তৈরি করে দেবে। জানা যায়, বিজেএমসির তিন পরিচালক পদে প্রেষণে নিয়োগকৃত তিন কর্মকর্তা এ কে নাজমুজ্জামান, মোঃ সিরাজুল ইসলাম ও বাবুল চন্দ্র রায়ের অবসর গ্রহণের সময় সমাগত হলে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তাদের সরকারী চাকরি থেকে অবসর প্রদান করে এক বছরের অবসর উত্তর ছুটি মঞ্জুর করে। সে মোতাবেক তারা সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে যোগদান করলেও বিজেএমসিতে একই পদে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। এ পদে সংস্থাপন মন্ত্রণালয় থেকে প্রশাসন ক্যাডারের নতুন কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেয়া হলেও বিজেএমসি তাদের গ্রহণ করেনি। বরং সরকারের সব নিয়মনীতি এমনকি বিজেএমসির উপদেষ্টার মতামতও উপেক্ষা করে অকার্যকর ১৯৭২ সালের পিও-২৭ এর ১৬ ধারার অপব্যবহার করে অতি গোপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের পরিচালকের নির্বাহী ক্ষমতা দিয়ে উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হয়। যে কারণে সংস্থাপন মন্ত্রণালয় থেকে তাদের নিয়োগকৃত তিন কর্মকর্তাকে যোগদানে গ্রহণ না করে কেন ফেরত পাঠানো হয়েছে, বিজেএমসির পরিচালক পদে কিভাবে উপদেষ্টা দায়িত্ব পালন করছে, উপদেষ্টাদের নিয়োগ পদ্ধতি এবং বর্তমানে কে বা কারা কোন পদে দায়িত্ব পালন করছে এবং উপদেষ্টা পদের বিপরীতে নির্ধারিত কার্যাবলী সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। দুই দফা তাগাদা দেয়ার পর সম্প্রতি বিজেএমসি সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের চিঠির তথ্যাদি সম্পর্কে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে মতামত পাঠিয়েছে। এই মতামতে প্রথমেই বিজেএমসি এই অবৈধ নিয়োগের বিষয়ে বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রীর ওপর দায় চাপাতে চাইছে। বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে নাকি আলোচনা করেই তাদের নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বার বার তারা এ নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পর্কে ১৯৭২ সালের পিও-২৭ এবং ২০০৯ সালের পিও-০৭ এর বিধান টেনে আসছে। অথচ বিজেএমসির আইন উপদেষ্টা সরকারের আইন কানুন ঘেটেই তার মতামত দিয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, উপদেষ্টাদের নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগের বিধান অত্র আইনে নেই। তিনি আরও বলেছেন, বাংলাদেশ পাটকল কর্পোরেশনের কর্মচারী প্রবিধানমালা ১৯৯০ এর ৫৪ ধারায় বলা হয়েছে, অবসর গ্রহণ এবং উহার পর পুনঃনিয়োগের ব্যাপারে কোন কর্মচারী ১৯৭৪ সালের পাবলিক সার্ভেন্টস রিটায়ারমেন্ট এ্যাক্টের বিধানাবলী দ্বারা পরিচালিত হবেন। অত্র আইনের ৫(১) ধারায় বলা হয়েছে, অবসরপ্রাপ্ত কোন গণকর্মচারী কোনভাবেই প্রজাতন্ত্রের অথবা কর্পোরেশনের জাতীয়করণকৃত প্রতিষ্ঠানের বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের চাকরিতে কোন প্রকারেই পুনরায় নিয়োজিত হইতে পারবেন না। তবে অত্র আইনের ৩ উপধারা অনুসারে অবসর গ্রহণের পর কোন গণকর্মচারীকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, জনস্বার্থে প্রয়োজন মনে করলে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে পারেন। গণকর্মচারী (অবসর) বিধিমালা ১৯৭৫ এর ৮(১) এ বলা হয়েছে, গণকর্মচারী অবসর আইন ১৯৭৪ এর ৫ ধারার ৩ উপধারার অধীনে অবসর গ্রহণের পর রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিয়োগের প্রতিটি প্রস্তাব সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে প্রক্রিয়া এবং কার্যকর করতে হবে। আবার ৮(২) এ বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি এই উদ্দেশ্যে সরাসরি কোন আদেশ প্রদান না করলে সেই নিয়োগের শর্তাদি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শক্রমে নির্ধারণ করতে হইবে। তবে আরও সুনিশ্চিত হওয়ার জন্য এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত নেয়া যেতে পারে। এখানে কোন মতামত গ্রহণ না করে দায়সারা নিজেদের একটি মতামত দাঁড় করিয়ে অবসর গ্রহণকারী ওই তিন কর্মকর্তাকে নির্বাহী ক্ষমতা দিয়ে জিজেএসমির উপদেষ্টা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এমনকি নিয়োগকৃত উপদেষ্টাদের নিয়োগপত্রে কত সময়ের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে তার উল্লেখ নেই। আসলে ওই তিন জন প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা ছিলেন বিধায় তাদের এক্সটেনশন বা যে কোন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারাধীন। বিধি মোতাবেক তাদের নিয়োগ দেয়া যাবে না বা মঞ্জুর হবে না বুঝতে পেরে অন্যভাবে আইনবহির্ভূত উপায়ে কিভাবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে পাশ কাটিয়ে তাদের বিজেএমসিতে বহাল রাখা যায় যোগসাজশকারী বিজেএমসির কতিপয় কর্মকর্তারা সেই পরিকল্পনা গ্রহণ করে। এদিকে বিজেএমসিতে অপরাধী প্রতারক চক্রের দাপটে সরকারের ভাবমূর্তী মারাত্মকভাবে ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে অভিযোগ করে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যেই প্রতারণা শিকার হয়ে বিভিন্ন জেলায় মামলা করেছেন। পাট সরবরাহকারীদের টাকা পরিশোধ ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সরকারের মর্যাদা রক্ষার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চিঠি দিয়েছেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী (মাদ্রাসা ও কারিগরি) কাজী কেরামত আলী এমপি। চিঠি দিয়েছেন পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমকেও। ব্যবসায়ীদের মামলার কাগজপত্র, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের চিঠি এবং প্রধানমন্ত্রীর কাছে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী (মাদ্রাসা ও কারিগরি) কাজী কেরামত আলীর লেখা আবেদনপত্র পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, বিজেএমসির নরসিংদীর ইউএমসি জুটমিলে রাজবাড়ী থেকে পাঠানো পাট বহনকারী ট্রাক নম্বর ও চালকের নাম ঠিক রেখে কৌশলে মালিক ও এজেন্সির নাম পরিবর্তন করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাত করেছে অপরাধীচক্র। ব্যবসায়ীরা নরসিংদীর ইউএমসি জুট মিলে পাট পাঠালেও কৌশলে দীপক কংস বণিকের মালিকাধীন চরমুগরিয়া পাঠ ক্রয় কেন্দ্র পরিবহন ঠিকাদার মাদারীপুর ঠিকানায় পাটের চালান গ্রহণ দেখানো হয়। যাতে ট্রাক নম্বর ও পাটের পরিমাণ ঠিক রয়েছে। একই অপকর্ম করা হয়েছে অন্য জেলা থেকে আসা পাটেও। মনোয়ারসহ টাকা আত্মসাতকারীদের বিরুদ্ধে মাদারিপুরে এবং নারায়ণগঞ্জে মামলা হয়েছে। প্রতারক চক্রের অন্যতম ও মামলার প্রধান আসামি হচ্ছেন বিজেএমসির আওতাধীন ইউএমসি জুট মিলের তৎকালীন সাবেক পাট বিভাগীয় প্রধান (ম্যানেজার, জুট উপব্যবস্থাপক (পাট বিভাগ) এস এ এইচ মনোয়ার আলী। যিনি এখন আছেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ জুট ফাইবার গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজের উপ-ব্যবস্থাপকের পদে। আসামিদের মধ্যে আরও আছেন মাদারীপুরের ইউএমসি জুটমিলের চরমুগুরিয়ার ভারপ্রাপ্ত পার্সেজার মোজাম্মেল হক, ইউএমসি জুটমিলের সহপাট ক্রয় কর্মকর্তা আব্দুল মজিদ দেওয়ান, ইউএমসি জুটমিল ঘাট কয়াল আব্দুস সাত্তার ওরফে কাজল, ইউএমসি জুটমিলের সহব্যবস্থাপক (পাট) নুরুল ইসলামসহ আরও চারজন। টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রাজবাড়ী থানায় দায়েরকৃত মামলায় নুরুল ইসলাম ও আরিফুল ইসলামকে পুলিশ ঢাকা থেকে গ্রেফতারও করেছিল। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এ দুইজনই ঘটনার জন্য দায়ী করেন প্রধান আসামি এমএএইচ মানোয়ার আলীকে। এরপর মনোয়ার আলী মামলায় হাজিরা দিতে গেলে আদালত জামিন না দিয়ে হাজতে পাঠয়ে দেন। তবে পরে জামিনে মুক্তি পেয়েই বিজেএমসি ও মন্ত্রণালয়ের বিশেষ মহলের আশীর্বাদ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন নির্বিঘেœ। ব্যবসায়ীদের টাকাও ফেরত দেয়া হচ্ছেনা এমনকি মামলায় জেলে গেলেও চাকরিতে কোন সমস্যা হবে না বলে ওপরের সিগনাল অফিস করছেন কোন ঝামেলা ছাড়াই। আসামিরা আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, উর্ধতন কর্মকর্তা হিসেবে এমএএইচ মানোয়ার আলীর নির্দেশে তারা সহযোগিতা করেছেন। মামলার বাদী পাট ব্যবসায়ী মনোয়ার হোসেন মনো বলেন, ইউএমসি জুটমিলের পাট বিভাগীয় প্রধান (ম্যানেজার, জুট) এমএএইচ মানোয়ার আলী ও মাদারীপুরের ইউএমসি জুটমিলের চরমুগুরীয়ার ভারপ্রাপ্ত পার্সেজার মোফাজ্জেল হকের মৌখিক নির্দেশে দশটি ট্রাকে প্রতিটি ১৩০ কেজি ওজনের এক হাজার বেল পাট রাজবাড়ীর কালুখালী গুদাম হতে সরাসরি নরসিংদীর ইউএমসি জুটমিলে পাঠান। যার মূল্য ৬২ লাখ ৮৭ হাজার ১২৫ টাকা। অথচ তার পাঠানো চালানগুলো মোজাম্মেল হক এবং এমএএইচ মনোয়ার আলী ও গুদাম ইনচার্জ আরিফুল ইসলাম পরিবর্তন করে ইউএমসি জুটমিলের চরমুগুরীয়ার গুদাম মালিক ও পরিবহন ঠিকাদার দীপক কংশ বনিকের মাধ্যমে পাট বহনকারী ট্রাক নম্বর ও চালকের নাম ঠিক রেখে সুকৌশলে নতুন বিল তৈরি করে অবৈধভাবে ওই টাকা তুলে আত্মসাত করা হয়েছে। পরবর্তীতে তিনি নরসিংদীর ইউএমসি জুটমিলে গিয়ে জানতে পারেন তার নামে কোন পাটের চালানই জমা হয়নি। এরপর অনেক দেন দরবার করে তিনি পর্যায়ক্রমে ১০ লাখ ৫৫ হাজার টাকা পেলেও বাকি ৫২ লাখ ৩২ হাজার ১২৫টা আজ অবধি তিনি পাননি। আরেক মামলার বাদী নারায়ণগঞ্জের পাট ব্যবসায়ী শহিদুল্লাহ সরকারের দুই কোটি ১৮ লাখ, ফরিদপুরের পাট ব্যবসায়ী বাচ্চুর ৮ লাখ ৩০ হাজার, কিশোরগঞ্জের পাট ব্যবসায়ী তাজু, মাহাবুব ও খোকন বাবুর এক কোটি ১৭ লাখ, পাবনার পাট ব্যবসায়ী আরজুর ৩৩ লাখ এবং পাবনার অপর পাট ব্যবসায়ী কার্তিক চন্দ্র সাহার ৬০ লাখ টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। পাওনা ৮ কোটি টাকার মাত্র ৪০ লাখ টাকা পেয়ে অভিযোগ নিয়ে ঘুরছেন আরেক পাট ব্যবসায়ী চিত্ত রঞ্জন কর। ব্যবসায়ী চিত্ত রঞ্জন কর বলছিলেন, অপরাধীদের হতিয়ে নেয়া কোটি কোটি টাকার ভাগ পান শীর্ষ কর্তাদের অনেকেই। তাই তদন্ত এমনকি সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে আদেশ হলেও অপরাধীদের তারা আগলে রাখছেন। এজন্য তিনি উপদেষ্টা হিসাবে বিতর্কে পড়া একেএম নাজমুজ্জামানকে প্রধানত দায়ী করলেন। তিনি বলেন, এই লোক জামায়াতের হয়েও সরকারের সুবিধা নিচ্ছে আইন লঙ্ঘন করে। বদলি নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগের পরও সে টিকে আছে। একই অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ী মনোয়ার হোসেন মনো, শহীদুল্লা সরকার, কার্তিক চন্দ্র সাহাসহ অন্য ব্যবসায়ীরাও। তারা অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ার জন্য চেয়ারম্যান, সচিবসহ আরও কয়েকজনকে দায়ী করেছেন। অভিযোগের বিষয়ে চেয়ারম্যান মাহমুদুল হকের সঙ্গে কয়েকদিন চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। সেলফোনে কল ও এসএমএস দিলেও তিনি সারা দেননি। সচিব ড. মোঃ সালাউদ্দিনকে সেলফোনে কল করা হলে তিনি উল্টো এসব বিষয়ে বিরক্ত না করার পরামর্শ দেন। বলেন, আমাকে বিরক্ত করবেন না। আমি প্রতিষ্ঠানের মুখপাত্র নই। আপনি চেয়ারম্যান ও সংশ্লিষ্ট বিভাগে কথা বলেন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বললেই হবে না। আমি আসামি মনোয়ার আলীকে পছন্দ করি না। তাকে তো সাসপেন্ড করা হয়েছে। তবে সাসপেন্ড নয়, তাকে নারায়ণগঞ্জে সংযুক্ত পোস্টিং দেয়া হয়েছে। এ দুটো বিষয় এক নয় এমন তথ্য জানালে তিনি আর কথা বলতে রাজি হননি। অন্যতম অভিযুক্ত মানোয়ার আলীর সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তার অফিসে গেলে সহকর্মীরা তার সেল নম্বর দিয়ে বলেন, সে অফিস টপিস নিয়ে ভাবেন না। ফোনে চেষ্টা করে দেখেন। এরপর তার চারটি সেল নন্বর দেন। তবে তার একটি নম্বরও খোলা পাওয়া যায়নি।
×