ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

তরুণরা তুলে ধরবে লালবাগ কেল্লার ঐতিহ্য

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১১ জুলাই ২০১৭

তরুণরা তুলে ধরবে লালবাগ কেল্লার ঐতিহ্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শহর ঢাকার অনন্য এক ঐতিহ্য লালবাগ কেল্লা। তবে দখলদারিত্বের সঙ্গে অযতœ আর অবহেলায় ক্রমশই বিবর্ণ হয়ে ঊঠছে এ মুঘলদের এ স্মারক ঐতিহ্য। এবার সেই ঐতিহ্যের যথাযথ সংরক্ষণের পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের মধ্যে এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে একসঙ্গে কাজ করবেন ১৫ জনের দেশী-বিদেশী তরুণের দল। লালবাগ কেল্লাকে ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ আয়োজনের উদ্যোক্তা প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর ও এডুকেশন এ্যান্ড কালচারাল সোসাইটি। সেই সুবাদে সোমবার লালবাগ কেল্লায় ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ ভলান্টিয়ার ইনিশিয়েটিভ’ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেনÑ সংস্কৃতি সচিব ইব্রাহীম হোসেন খান এবং ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স জোয়েল রেইফম্যান। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, দেশের তরুণ সম্প্রদায়ের বড় দায়িত্ব, তারাই দেশে-বিদেশে বাংলাদেশের ঐতিহ্যগুলোকে তুলে ধরবে। একইসঙ্গে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করে ঐতিহ্য সংরক্ষণেও ব্রতী হবে তারা। একইসঙ্গে এ তরুণরা অন্য দেশের আমাদের সংস্কৃতির বিনিময় করবে। লালবাগ কেল্লাকে বিশ্ব ঐতিহ্যে সংযুক্তিকরণ প্রসঙ্গে সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, বাগেরহাট, পাহাড়পুরের পর এবার আমরা ময়নামতি ও লালবাগ কেল্লাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্তির প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। লালবাগ কেল্লাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে সমস্যা হলে এর আশপাশে বেশকিছু স্থাপনা গড়ে উঠেছে। ইউনেস্কোর নিয়মাবলীর মধ্যে রয়েছে, নির্দিষ্ট দূরত্বের মধ্যে অন্য অবকাঠামো থাকতে পারবে না। তবে এটা শুধু বাংলাদেশেরই সমস্যা নয়, অন্যান্য দেশেরও রয়েছে। তারপরও আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাব। জোয়েল রেইফম্যান বলেন, বিশ্বজুড়ে ঐতিহ্যগুলো এখন হুমকির মুখে। মানুষের সচেতনতার অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে ঐতিহ্যগুলো। অথচ তারা যদি একবার বুঝত এর আর্থসামাজিক গুরুত্বের কথা! বাংলাদেশের তরুণরা এগিয়ে এসেছে। তারা একে একে সব ঐতিহ্যকে তুলে ধরুক, এটাই প্রত্যাশা। এডুকেশন এ্যান্ড কালচারাল সোসাইটির সভাপতি কাজী নাসরিন সিদ্দিকা বলেন, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি নিয়ে নানা প্রচারণার পর এবার আমরা প্রথমবারের মতো সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণে এগিয়ে এসেছি। এরপর আমরা বাংলার বাউল সঙ্গীতকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে কাজ শুরু করব। ফ্রাঙ্কো-জার্মান দূতাবাসে পাটের আসবাবপত্র প্রদর্শনী জার্মানি ও ফ্রান্স দূতাবাসের যৌথ উদ্যোগে পাট দিয়ে তৈরি করা হয়েছে বৈচিত্র্যময় আসবাবপত্র। বাংলাদেশের শিল্পীদের করা আধুনিক ডিজাইনের আর্মচেয়ার ও সাইড টেবিল দেখলে যে কেউ অবাক হতে বাধ্য। বাংলার পাট যেন নতুন রূপে ফিরে আসছে। ফ্রাঙ্কো-জার্মান দূতাবাসের উদ্যোগে পাট, সমন্বিত ঐতিহ্য এবং আবিষ্কার প্রকল্পের আওতায় তৈরি করা হয়েছে এ আসবাবপত্রগুলো। পাট ও রেজিনের সঙ্গে আরও সব উপকরণ যোগ করে আসবাবপত্র তৈরি করাই ছিল এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য। সোমবার বারিধারায় ফ্রাঙ্কো-জার্মান দূতাবাসে পাট থেকে তৈরি এসব আসবাবের প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। উপস্থিত ছিলেন ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত সোফি অবের ও জার্মান রাষ্ট্রদূত ড. টমাস প্রিঞ্জ। সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর বলেন, পশ্চিম পাকিস্তান আর পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের মূল দ্বন্দ্বই ছিল পাট নিয়ে। বর্তমান সরকার পাটের সেই হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে। অচিরেই পাট নতুনভাবে বিশ্ব বাজারে তার জায়গা করে নিতে সক্ষম হবে। সোফি অবের বলেন, এটি চমৎকার একটি প্রকল্প। পাট শিল্পের সম্ভাবনা আরও বিস্তৃতভাবে সম্প্রসারিত করতে বাংলাদেশের উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। কেননা পাট আধুনিক কালের চাহিদা পূরণে নতুন আদলে কাজে লাগানো সম্ভব। ড. থমাস প্রিঞ্জ বলেন, পাটের আঁশ থেকে তৈরি পণ্য খুব আকর্ষণীয় এবং দামে সস্তা। তার চেয়েও বড় বিষয় এটি পরিবেশবান্ধব। ইউরোপের বাজারে এর চাহিদা রয়েছে। বিশেষ করে গাড়ির ড্যাশ বোড, প্যানেলসহ আধুনিক গাড়ি নির্মাণে এর চাহিদা রয়েছে। গতবছর আঁলিয়স ফ্রঁসেজ, গ্যেটে ইনস্টিটিউট, অটবি এবং গোল্ড অব বেঙ্গল যৌথভাবে পাট নিয়ে নক্সা প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। এর উদ্দেশ্য ছিল সৃজনশীল উপায়ে পাটের ব্যবহার উৎসাহিত করা। ফরাসী প্রশিক্ষকবৃন্দের তত্ত্বাবধানে এ প্রকল্প ঐতিহ্যবাহী পাটশিল্পের সম্ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেয়ার লক্ষ্যে এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য বিভাগ ও চারুকলার শিক্ষার্থীরা এ প্রকল্পে নক্সা জমা দিয়েছিল। সেখান থেকে আটটি নক্সা বেছে নিয়ে কর্মশালা হয়। সেই কর্মশালা থেকেই এ দুটি আসবাব তৈরি করা হয়। গতকালের প্রদর্শনীতে কর্মশালায় অংশ নেয়া শিল্পীদের সনদপত্র তুলে দেন দুই দেশের রাষ্ট্রদূত। কর্মশালায় অংশ নেয়া শিল্পীরা হলেন- তাহসিনুল কবির, আনিসুল ইসলাম খান, জাকির আহমেদ, আনিলিয়া গৌরব, রেজওয়ানা রাকা সিদ্দিকা, ফারহাত জেরিন, রাকিবুজ্জামান ও ফাহিম হাসিন শাহান। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্্র জন্মদিনের একক বক্তৃতা বহুভাষাবিদ, গবেষক ও দার্শনিক ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র ১৩২তম জন্মবার্ষিকী ছিল সোমবার। এ উপলক্ষে দিনটিতে এই ভাষাবিদকে নিবেদিত একক বক্তৃতাসহ বিস্তারিত কর্মসূচী গ্রহণ করে বাংলা একাডেমি। সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়স্থ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্-র সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে একাডেমির পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। বিকেলে একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে একক বক্তৃতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে একক বক্তৃতা করেন অধ্যাপক মাহবুবুল হক। স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির সভাপতি ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র ছেলে ভাষাসংগ্রামী ও চিত্রশিল্পী মুর্তজা বশীর। ভাষাতাত্ত্বিক ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ শীর্ষক বক্তৃতায় অধ্যাপক মাহবুবুল হক বলেন, ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্ প্রায় ত্রিশ বছর ধরে ভাষাতত্ত্ব অধ্যাপনায় নিয়োজিত ছিলেন। ভাষাবিজ্ঞানের চর্চায় এ দেশে তিনিই পুরোধা। পরবর্তীকালে যাঁরা এ দেশে ভাষাতত্ত্ব চর্চা করেছেন তারা সরাসরি বা পরোক্ষভাবে তাঁর কাছে ঋণী। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, অন্যান্য কৃতীর পাশাপাশি ভাষা বিষয়ে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্র গবেষণাকর্ম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তিনি বাংলা ভাষার উৎপত্তি ও বিকাশ নিয়ে শুধু গবেষণাই করেননি, একই সঙ্গে রাষ্ট্রভাষা বাংলার পক্ষে দৃঢ় অবস্থানও নিয়েছেন যা তাঁকে স্মরণীয় করে রাখবে।
×