ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১

না’গঞ্জে নারী উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় সালিশে স্কুলছাত্রকে বেত্রাঘাত

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ৩১ মে ২০১৭

না’গঞ্জে নারী উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় সালিশে স্কুলছাত্রকে বেত্রাঘাত

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেকে নারী উত্ত্যক্তের প্রতিবাদ করায় বিচার সালিশের নামে এক স্কুলছাত্রকে বেত্রাঘাত করার অভিযোগ করা হয়েছে। পরে ওই স্কুলছাত্র ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের হানিফ খান মিলনায়তনে বেত্রাঘাতের শিকার আবু রায়হান সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন। সংবাদ সম্মেলনে লিখত বক্তব্য পাঠ করেন আবু রায়হানের চাচাত ভাই ইমরান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বেত্রাঘাতের শিকার আবু রায়হান, তার বাবা মোঃ রফিকুল ইসলাম, চাচা হাজী মোঃ শফিকুল ইসলাম ও চাচাত ভাই নোমান আহমেদ। আবু রায়হানের চাচাত ভাই ইমরান আহমেদ লিখিত বক্তব্যে বলেন, গত ৪ মে বৃহস্পতিবার রাতে ছোট বোনের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান থেকে বিদায় নিয়ে যাওয়ার সময় বরের ছোট বোনকে উত্যক্ত করছিল খবির উদ্দিন, মাহবুব, আল আমিনসহ কয়েকজন। উত্যক্তের প্রতিবাদ করায় মেয়েটির চুলে ধরে তাকে মারধর করে এবং ছুরি দিয়ে ভয়ভীতি দেখায়। এ সময় বরের বোন দৌড়ে এসে বিষয়টি আমাদের জানালে আমিসহ আমার বাড়ির লোকজন ঘটনাস্থলে ছুটে গিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করি এবং তাদের জানাই তারা আমাদের মেহমান। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে আসেন আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতির খালাত ভাই নওয়াব মিয়া। তার নির্দেশে তার ছেলে মাহবুব, হাবিব, নওয়াব মিয়ার দুই স্ত্রী, সাত ছেলে, মুন্নার ছেলে আল-আমিনসহ দলবল নিয়ে এসে ঘোষণা দেয় মেহমানদের এলাকা থেকে যেতে দেয়া হবে না। এরপর পরই তারা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র লাঠিসোটা নিয়ে আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে মারধর শুরু করে। আমরা দ্রুত ওই এলাকা ছেড়ে বাড়িতে অবস্থান নিলে তারা বাড়ির বিদ্যুতের লাইন কেটে দেয় এবং বিয়ে বাড়ির গেট ভাংচুর করে। অবরুদ্ধ করে রাখে পুরো পরিবারকে। পরে পুলিশ এসে আমাদের বাড়িঘর থেকে মুক্ত করে। এই ঘটনার ন্যায় বিচারের জন্য আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতির কাছে গেলে তিনি আমাদের তার ভাই ও ভাতিজাকে বাদ দিয়ে শুধু খবির উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য চাপ দেন। আমরা শুধু খবির উদ্দিনের বিরুদ্ধে নয় সব অপরাধীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে চাইলে তিনি ক্ষুব্ধ হন। চেয়ারম্যানের সহযোগিতায় উল্টো নওয়াব মিয়ার ছেলে হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে আমিসহ আমার তিন ভাইয়ে বিরুদ্ধে হত্যার চেষ্টার অভিযোগে এনে নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর পরই চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি লোকমারফত আমাদের চাপ দিতে থাকে বিচার সালিশের মাধ্যমে মীমাংসা করার জন্য। গত ১৯ মে শুক্রবার বিকেলে আলীরটেক ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে বিচার সালিশ বসে। বিচারে চেয়ারম্যান আমাদের কোন আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে প্রতিপক্ষের কথা শুনে এক তরফা রায় দেন। রায়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী আবু রায়হানকে এক শ’ বেত্রাঘাত করা হয় এবং তার চাচাত ভাই নোমান আহমেদকে কান ধরে ওঠবস করানো হয় একই সঙ্গে এক লাখ ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানার টাকা এক সপ্তাহের মধ্যে প্রদান করা জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয়। রায় কার্যকর করার সময় চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি উপস্থিত লোকজনকে উদ্দেশে করে বলেন, কেউ বেত্রাঘাতের ছবি মোবাইল ফোনে ধারণ করলে তার হাতের কব্জি কেটে নেয়া হবে বলে হুমকি দেন। এছাড়া এই বিচার না মানলে গ্রাম ছাড়া করার হুমকি দেন। এ বিষয়ে আলীটেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান মতি বলেন, একটি ইভটিজিং ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে এক যুবক ছুরিকাঘাত হয়েছে। তার শরীরে ২২টি সেলাই লেগেছে। গ্রাম পঞ্চায়েতের উপস্থিতিতে ওই ছেলের মামা ও ভাগ্নে ঝাড়ুর ডাট দিয়ে দুটি আঘাত করেছে। তবে আমি সেই সময় বাধা দেই। যে জরিমানা ধার্য করা হয়েছে ৮০ পয়সাও দেয় নাই। এ বিচার আমি করি নাই গ্রাম পঞ্চায়েত করছে। বিচারের রায় ওনারা দিয়েছেন আমি না। তিনি দাবি করেন, ওই ঘটনাটিকে রং চং মিশিয়ে আমার প্রতিপক্ষ মিথ্যা বানোয়াট গল্প বেঁধে আমার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করিয়েছে। আমি যদি কোন দোষ করে থাকি আল্লাহ আমার বিচার করবে।
×