মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি চট্টগ্রাম (ইউএসটিসি) থেকে অস্ত্রসহ ৬ জনকে আটক করার পর থানা থেকে রাত সাড়ে ১১টায় ছেড়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। থানায় জিডি দায়ের হয়েছে পরিত্যক্ত অবস্থায় ধারালো অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায়। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে মেডিসিন বিভাগে পড়ুয়া ৬ শিক্ষার্থীকে মুচলেকায় ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। দায় এড়াতে পুলিশের ডিসি ও এডিসির পক্ষ থেকে মুচলেকা নিতে বলা হয়েছে বলে শুক্রবার জানালেন খুলশী থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন।
অভিযোগ রয়েছে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দীর্ঘ প্রায় ১২ ঘণ্টার দেন-দরবার শেষে অপরাধীদের পুলিশ ছেড়ে দেয়ার পেছনে হেতু কী। থানার অপারেটর থেকে ডিউটি অফিসার এসআই এমনকি তদন্তকারী ও অভিযানকারী কর্মকর্তার ওপরও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে তথ্য প্রদান না করার জন্য।
তবে এ ৬ জনকে থানা হেফাজতে রেখে সিএমপির নর্থ বিভাগের ডিসি, এডিসি ও খুলশী থানার ওসিসহ অস্ত্রধারী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা ওসির কক্ষে বৈঠক করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এর অংশ হিসেবে কখনও অভিভাবক ও পুলিশ কর্মকর্তারা আবার শুধু পুলিশের ওই তিন কর্মকর্তা অংশ নিয়েছেন বলে থানায় কর্মরতদের পক্ষ থেকে জানা গেছে। শেষ পর্যন্ত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে কোন মামলা বা জিডি হয়নি। তবে ইউএসটিসির গেট থেকে সিএনজি ট্যাক্সিসহ ৬ জনকে ধারালো অস্ত্রসহ আটক করে থানায় আনা হলেও শেষ পর্যন্ত পরিত্যক্ত অবস্থায় অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় একটি জিডি হয়েছে। জিডিটি পুলিশের পক্ষ থেকে করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ওসি।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওসি শেখ মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন শুক্রবার বিকেলে জনকণ্ঠকে বলেন, ডিসি ও এডিসি যা বলেছেন আমি তাই করেছি। আপনিও যা খুশি তা লিখতে পারেন।
অস্ত্রধারীদের ছেড়ে দেয়া প্রসঙ্গে তিনি প্রতিহিংসাপরায়ণ ঘটনা বলে উল্লেখ করেছেন। সিএনজি ট্যাক্সি ও অস্ত্রগুলো যেহেতু ওই ৬ জনের কাছ থেকে পাওয়া গেছে তাহলে প্রত্যক্ষ প্রমাণকে ওসি কোন আইনে সাজানো বলে দাবি করছেন তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ।
এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তথ্য জানতে খুলশী থানায় দফায় দফায় টিএ্যান্ডটি নাম্বারে ফোন করা হলেও অপারেটর স্নেহাশীষ জানান, এ বিষয়ে কোন তথ্য দেয়া ওসি সাহেবের নিষেধ। থানায় ডিসি, এডিসি ও ওসিসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত রয়েছেন।
ডিউটি অফিসার আফরোজা জানান, তাদের নাম, ঠিকানা আমাদের কাছে নেই। অভিযানে থাকা এসআই ও তদন্তকারী কর্মকর্তা বাবলু কুমার পাল বলেন, আটককৃতদের ইউএসটিসি থেকে নেয়া হয়েছে। তাদের কাছ থেকে ধারালো অস্ত্রশস্ত্র পাওয়া গেছে। তবে তাদের নাম আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে খুলশী থানার ওসি শেখ মোঃ নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৃহস্পতিবার মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি। তিনি রুদ্ধদ্বার বৈঠকে থাকাকালীন প্রতিবেদকের মুঠোফোনের কল বার বার বাতিল করেছেন। আবার মুঠোফোনে কল ঢুকলেও তিনি তা রিসিভ করেননি।
উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে ইউএসটিসি ক্যাম্পাস থেকে ৬ জনকে আটক করে নিয়ে যায় খুলশী থানা পুলিশ।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ভিসির বিরুদ্ধে আন্দোলনরত অবস্থায় ছিল। খুলশীর এসআই বাবুল কুমার পালসহ সঙ্গীয় ফোর্স এ ৬ জনকে ইউএসটিসির শিক্ষার্থীদের তথ্যের ভিত্তিতে অস্ত্রসহ আটক করে। আটকের পর থেকে খুলশী থানা প্রাঙ্গণ লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। এমনকি তাদের ছাড়াতে থানার বাইরে বিক্ষোভ মিছিলও প্রদর্শন করে বেশ কয়েক শিক্ষার্থী।