ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

উদ্বোধন করবেন অর্থমন্ত্রী

কুয়াকাটায় তিনদিনের বিচ কার্নিভ্যাল শুরু আজ

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৪ জানুয়ারি ২০১৭

কুয়াকাটায় তিনদিনের বিচ কার্নিভ্যাল শুরু আজ

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ১৩ জানুয়ারি ॥ পর্যটন বর্ষ ২০১৭ উদযাপন ও পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটাকে বিদেশী পর্যটকদের কাছে পরিচিত ও আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে কুয়াকাটায় আয়োজন করা হয়েছে মেগা বীচ কার্নিভ্যাল ২০১৭। শনিবার দুপুরে বীচ কার্নিভ্যাল-২০১৭’র আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ সময় পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন উপস্থিত থাকবেন বলে জেলা প্রশাসন ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড সূত্রে জানা গেছে। ১৪ থেকে ১৬ জানুয়ারি প্রথমবারের মতো কুয়াকাটায় অনুষ্ঠিত হচ্ছে এ কার্নিভ্যাল। কানিভ্যালকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড বিভিন্ন প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। ইতোমধ্যে কুয়াকাটা সৈকতে মঞ্চ নির্মাণ, কুয়াকাটা শূন্য পয়েন্টে আলোকসজ্জা করা হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে গণমাধ্যমের স্থানীয় প্রতিনিধিদের কার্নিভ্যালের কোন কর্মসূচী জানানো হয়নি। তবে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস এবং বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন দূতাবাসে এবং স্থানীয় পর্যটকদের অবহিত করার জন্য লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া শনিবার থেকে তিনদিনের প্রতিদিন ওয়াটার বাইক, ক্রিকেট, ফুটবল, হাডুডু, দাঁড়িয়াবান্ধা, ভলিবল, ওয়াটার বাইক, এটিভি রাইডস, বোট বোয়িং, বীচ লাইটিং, ক্যাম্প ফায়ার, সমুদ্র পথে কুয়াকাটার সঙ্গে ফাতড়া, সুন্দরবন, সোনার চর, হরিণখোলা, কটকা ও করমজলের সী-ক্রুজিং হবে। থাকবে রাখাইনদের পিঠাপুলি ও তাদের বুনন হস্তশিল্পের প্রদর্শনী। কুয়াকাটার প্রবেশদ্বারসহ বীচের ৬ কিলোমিটার এলাকা আলোকসজ্জা করার কথা বলা রয়েছে। থাকবে লাঠিখেলাসহ বর্ণাঢ্য ঘুড়ি উৎসব ও স্থানীয় শিল্পীদের উপস্থাপনাসহ দেশের লোকসঙ্গীতের স্বনামধন্য সঙ্গীতশিল্পীর সঙ্গীত ও ব্যান্ডশিল্পীর সঙ্গীত পরিবেশনা থাকছে। অনুষ্ঠানসূচী থেকে দেখা যায় প্রায় প্রত্যেকটি অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন স্থানীয় একজন প্রতিনিধি। কিন্তু সে প্রতিনিধি কে? বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের ওয়েব সাইটের অনুষ্ঠানসূচীতে দেখা যায় পটুয়াখালী জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় সকাল ১১ টা থেকে দুপুর ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত গ্র্যান্ড ওপেনিং, উদ্বোধনী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান জেলা সাংস্কৃতিক দল ও রাখাইন সংস্কৃতির কথা উল্লেখ আছে। খবরে জানা যায়- কলাপাড়া উপজেলায় শিল্পকলা একাডেমি, শিল্পী সংসদ কলাপাড়া, মানিকমালা খেলাঘর আসর, শিল্পীগোষ্ঠী কলাপাড়া, ঋষভ শিল্পীগোষ্ঠী, কলাপাড়া বাউল সমিতি, ঝংকার সঙ্গীত একাডেমি, ঘুঙ্গুর কলাপাড়া, রোজ রোজ মিউজিক্যাল ড্যান্স ক্লাব, মেঘদূত কলাপাড়া, কচিমুখ নাট্যাঙ্গনসহ প্রায় ২০টি সক্রিয় সংগঠন রয়েছে। এ বিষয়ে কলাপাড়া উপজেলার সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মাহবুবুর রহমান আজাদ বলেন, আমাদের আধা ঘণ্টার জন্য অনুষ্ঠান করার জন্য বলেছে স্থানীয় প্রশাসন। কিন্তু কীভাবে আধা ঘণ্টায় একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করা সম্ভব, এমন প্রশ্ন তোলেন তিনি। তার মতে কার্নিভ্যাল নিয়ে অগোছলো অবস্থা। অনুষ্ঠানসূচী অনুযায়ী ৮ থেকে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ঢাকা, বরিশাল, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, ভোলা, বরগুনা, ঝালকাঠি ও কুয়াকাটা এলাকায় ব্র্যান্ডিং করার কথা ছিল। ৯ থেকে ১৪ জানুয়ারির মধ্যে পটুয়াখালী ও কুয়াকাটার সকল হোটেল, মোটেলে সূচনা সঙ্গীত পৌঁছে দেয়ার কথা উল্লেখ আছে অনুষ্ঠান সূচিতে। অনুষ্ঠান সূচিতে ক্রিকেট, ফুটবল, হাডুডু, লাঠিখেলা, কাবাডি, ভলিবলসহ বর্ণাঢ্য ঘুড়ি উৎসব আয়োজনের কথা রয়েছে। এবং এসব খেলা ও ইভেন্ট স্থানীয় একজন সেলিব্রেটিকে দিয়ে উদ্বোধন করা হবে। স্থানীয় সেই সেলিব্রেটির নাম কেউ জানাতে পারেননি। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ২৭ অক্টোবর ঢাকায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে দুই দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ ঐতিহ্য ও পর্যটন সম্মেলন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পর্যটন শিল্পকে আরও গতিশীল করতে ২০১৬ সালকে পর্যটন বর্ষ হিসেবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানিয়েছিলেন। জাতিসংঘের বিশ্ব পর্যটন সংস্থার (ইউএনডব্লিউটিও) মহাসচিব তালিব রাফাই ছাড়াও ভারত, ভুটান, নেপাল, মিয়ানমারসহ ১৩ দেশের পর্যটনমন্ত্রী ও কর্মকর্তারা যোগ দিয়েছিলেন ওই সম্মেলনে। গেল বছরের শুরুতে কক্সবাজারে মেগাবীচ কার্নিভ্যাল ২০১৬, সুন্দরবনের আশপাশের জনগোষ্ঠীর জন্য দুই সপ্তাহব্যাপী ইকোট্যুর গাইড প্রশিক্ষণ ও কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন ও কুয়াকাটায় জনসচেতনতামূলক কর্মসূচী বাদে পর্যটন কেন্দ্রগুলো ঘিরে তেমন বড় কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি। এখন সময় বাড়িয়ে ২০১৭ ও ২০১৮ সালকেও পর্যটন বর্ষ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে । কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় গত ২৩-২৫ ডিসেম্বর কুয়াকাটায় মেগাবীচ কার্নিভ্যাল আয়োজনের জন্য ২টি জাতীয় দৈনিকে গত নবেম্বর মাসে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে বিটিবি। পরে জানা যায় ১৪ থেকে ১৬ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে হচ্ছে মেগাবীচ কার্নিভ্যাল কুয়াকাটা ২০১৭। ১৫ জানুয়ারির অনুষ্ঠানসূচীতে সকাল ১০ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত কুয়াকাটা থেকে কচিখালি কটকা-সুন্দরবন পর্যন্ত বিশেষ অতিথি ও পর্যটকদের নৌ ভ্রমণের বাস্তবায়ন কমিটিতে ভুবন চন্দ্র বিশ্বাস, মোঃ নজরুল ইসলাম, এ কে এম রফিকুল ইসলাম, শাহজাহান কবির, মাসুদুর রশিদ বিটিবি ও বিসিপির প্রতিনিধির কথা উল্লেখ আছে। এ দিনের অন্যান্য অনুষ্ঠানসূচীর মধ্যে ওয়াটার বাইক, ক্রিকেট, ফুটবল, হাডুডু, দাঁড়িয়াবান্ধা, ভলিবল, লাঠিখেলাসহ বর্ণাঢ্য ঘুড়ি উৎসব ও স্থানীয় শিল্পীদের উপস্থাপনাসহ দেশের লোকসঙ্গীতের একজন স্বনামধন্য সঙ্গীত শিল্পীর সঙ্গীত ও ব্যান্ড সঙ্গীত শিল্পীর সঙ্গীত পরিবেশনার ব্যবস্থাপনা কমিটিতেও এ ব্যক্তিদের নাম। চূড়ান্ত অনুষ্ঠানসূচীতে কী থাকছে? সে সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে পারেনি ব্যবস্থাপনা কমিটির কেউই। স্থানীয়দের মতে- এমন দায়সারা অনুষ্ঠান কী করে হচ্ছে। মাত্র দুই দিকে বাঁশের খুঁটিতে দেড়/দুই কিলোমিটার লাইটিং করা হয়েছে। কুয়াকাটার মেয়র আব্দুল বারেক মোল্লা জানান আরও লাইটিং করার দরকার ছিল। গোটা অনুষ্ঠানটিতে নেই গোছানো পরিকল্পনা। বিভিন্ন স্কুলের বয়স স্কাউট ও গার্লস গাইডদের নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত থেকে অংশগ্রহণের জন্য স্থানীয় প্রশাসন নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু কীভাবে এসব অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার খরচ বহন হবে তা বলা হয়নি। ফলে শিক্ষকরা পড়েছেন বিপাকে। মূল মঞ্চ করতে এক লাখ টাকাও ব্যয় হবে না বলে জানালেন স্থানীয় একাধিক ডেকোরেটর ব্যবসায়ী। স্থানীয় লোকদের মতে কুয়াকাটায় ফি-বছর রাস মেলা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে লাখো রাসভক্তসহ পর্যটক অংশ নেয়। ওই অনুষ্ঠানেও একটি সুশৃঙ্খল পরিকল্পনা থাকে। যা এ সরকারী অনুষ্ঠানে পরিলক্ষিত হয়নি। এখন পর্যন্ত আগত পর্যটকের জন্য অস্থায়ী টয়লেট তৈরি করা হয়নি। হয়নি সুপেয় পানির ব্যবস্থা। ওয়াশরুম করা হয়নি। যা রাস পূর্ণিমায় করা হয়। শুধু কলাপাড়া থেকে কুয়াকাটাগামী সড়কে কয়েকটি গেট এবং ফেস্টুন ঝোলানো হয়েছে, তাও আবার কিছু ইতোমধ্যে বাতাসে পড়ে গেছে। তবে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা তাদের নিজস্ব অর্থায়নে এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন বলে জানা গেছে। কুয়াকাটাকে আন্তরিকভাবে উপলব্ধি করা এবং এখানকার পরিচিতি তুলে ধরার জন্য এ মানুষগুলো এমন উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে এ অনুষ্ঠানকে ঘিরে নিñিদ্র নিরাপত্তা নেয়া হয়েছে বলে কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশের এএসপি মীর ফসিউর রহমান জানিয়েছেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের কর্মকর্তারা পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন লঙ্ঘন করে লোক দেখানো দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে নিজেদের পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী সরকারী কর্মকর্তারা নিজেরা কোন ক্রয় কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবে না। এ নিয়ম না মেনে মেগা কাজের বীচ কার্নিভ্যাল আয়োজনের বীচ ডেকোরেশন, জেনারেটর ভাড়া, বারবিকিউ পার্টি, তাঁবু নির্মাণ, ব্যান্ড শিল্পীদের সম্মানী, সুন্দরবনে ভিআইপি ভ্রমণ, ডিজিটাল ফেসবুক, ইউটিউব ও ওয়েব সাইট, ফটোগ্রাফি ও ভিডিও রেকর্ডিং বাবদ প্রায় ২০ লাখ ৪১ হজার টাকা কোন দরপত্র ছাড়াই খরচ করছে। আর দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল ৭২ লাখ ৫২ হাজার টাকা প্রাক্কলিত মূল্য নির্ধারণ করে। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ২০০৬ ও পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান ছিল ম্যাক্সপোজার লিমিটেড। নিয়ম অনুযায়ী এ প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ না দিয়ে নিজেদের পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দিয়ে সরকারী অর্থ আত্মসাতের প্রক্রিয়া করেছে বিটিবি। এ বিষয়ে কার্যাদেশ চেয়ে গত ২৭ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে বিটিবির প্রধান নির্বাহী বরাবর আবেদন করে এবং লিগ্যাল নোটিস দেয়ার পরেও কোন উত্তর দেয়নি বিবিটি কর্তৃপক্ষ। পরে ৪ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটি বরাবর রিভিউ আবেদন করে ম্যাক্সপোজার লিমিটেড। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের পরিচালক ও যুগ্ম সচিব নিখিল রঞ্জন রায়কে মোবাইল করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ফোনে কথা বলেননি বিটিবির উপব্যবস্থাপক নজরুল ইসলাম।
×