জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এখনও ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে ক্ষয়ক্ষতির খবর আসছে। ভোলার বিদ্যুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। ঘটনার ৫ দিন পরও এই জেলায় ছিঁড়ে যাওয়া বিদ্যুতের তার ও উপড়ে পড়া খুঁটি দাঁড় করাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
ছিঁড়ে যাওয়া বিদ্যুতের তার জড়িয়ে মঙ্গলবার সকালে মিলন নন্দী নামে এক দিনমজুর নিহত হয়েছে। বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় ভোলার বিভিন্ন এলাকা নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে। ভারি বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে বরগুনার দুই উপজেলার অন্তত ৬০ গ্রামের কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ঝালকাঠির ৪ উপজেলায় রোয়ানুর আঘাতে অন্তত ২০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। রোয়ানুর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত মহেশখালীর বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। মঙ্গলবার মহেশখালীর দুর্গম মাতারবাড়ি ও ধলঘাটা ইউনিয়ন পরিদর্শন করেন তিনি। এ সময় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে বিভিন্ন ত্রাণ বিতরণ করেন মন্ত্রী।
ভোলা ॥ রোয়ানুর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত ভোলার বিদ্যুত পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক হয়নি। অনেক এলাকায় মঙ্গলবার পর্যন্ত বিদ্যুত চালু হয়নি। ৫ দিনেও কর্তৃপক্ষ ছিঁড়ে যাওয়া তার ও উপরে পড়া বিদ্যুতের খুঁটি দাঁড় করাতে পারেনি। সদর উপজেলার মধ্যবাপ্তা গ্রামে ছিঁড়ে যাওয়া ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির বৈদ্যুতিক তারে জড়িয়ে মঙ্গলবার মিলন নন্দি নামে এক দিনমজুর নিহত হয়েছে।
ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ৪৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে। ভেঙ্গে যাওয়া বাঁধ দিয়ে এখনও বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ওইসব এলাকার মানুষের এখনও দুর্ভোগ কমেনি।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর ৪ দিন পরও ভোলার জেলার বিভিন্ন রাস্তায় পড়ে আছে বিদ্যুতের খুঁটি ও তার। স্থানীয়রা জানান, একাধিকবার বিদ্যুত কর্তৃপক্ষের কাছে ছিঁড়ে যাওয়া তার অপসারণের দাবি জানালেও কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা নেয়নি। যে কারণে প্রাণ হারাতে হয়েছে দিনমজুর মিলন নন্দিকে।
ওজোপাডিকোর আবাসিক প্রকৌশলী মোহাম্মদ আলী জানান, অন্য জায়গায় পড়ে থাকা তার সড়াতে ব্যস্ত থাকায় তারা দক্ষিণ বাপ্তায় তার সরাতে পারেননি। জেলা সদরের ইলিশা, রাজাপুরসহ বোরহানউদ্দিন, লালমোহন, চরফ্যাশন, তজুমদ্দিন, মনপুরা উপজেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রায় ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ দিয়ে এখন পানি প্রবেশ করলেও চাপ কম।
আমতলী (বরগুনা) ॥ রোয়ানুর প্রভাব কেটে গেলেও বরগুনার আমতলী-তালতলী উপজেলার লাখো মানুষ পানিবন্দী হয়ে পরেছে। ভারি থেকে ভারি বর্ষণ ও অস্বাভাবিক জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে ৬০ গ্রাম। পানি নিষ্কাশনের ভাল ব্যবস্থা না থাকায় গত তিনদিনেও পানি সরে যায়নি। এতে গ্রামবাসীদের সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। ক্ষেতে কৃষি কাজ বন্ধ রয়েছে। আউশের বীজতলা, মরিচ, ডাল, তিলসহ রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ভাসিয়ে নিয়ে গেছে পুকুর ও ঘেরের মাছ।
মঙ্গলবার দু’উপজেলার চাওড়া, হলদিয়া, কুকুয়া, আঠারগাছিয়া, ছোটবগী, পচাঁকোড়ালিয়া, কড়ইবাড়িয়া ও নিশনবাড়িয়া ইউনিয়নের চালিতাবুনিয়া, চন্দ্রা, পাতাকাটা, রাওঘা, গাজীপুর, পূর্ব কুকুয়া, পশ্চিম কুকুয়া, ফকিরবাড়ী, নাচনাপাড়া, বান্দ্রা, চরপাড়া, তালতলী, সুন্দরীয়া, জাকিরতবক, গাবতলী, নিশানবাড়িয়া, তেঁতুলবাড়িয়া, ও লাউপাড়া গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামের পর গ্রাম পানিতে থৈথৈ করছে। কৃষি কাজ বন্ধ রয়েছে। পানি নিষ্কাশনের ভাল ব্যবস্থা না থাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা গেছে, দু’উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৪ ইউনিয়নে ৭০০ ঘর, ৩০ বিদ্যালয়ের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। ১ হাজার মাছের ঘের ভেসে গেছে। ৪ হাজার হেক্টর ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৫ কোটি টাকা।
ঝালকাঠি ॥ জেলার ৪ উপজেলা ও ২ পৌরসভায় ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর প্রভাবে হাজার হাজার লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ঝড়ে ৯৩ বাড়ি সম্পূর্ণ ও ৮১৪ বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব মিলিয়ে এই জেলায় প্রায় ২০ কোটি টাকার সম্পদ ক্ষতি হয়েছে।
মহেশখালী ॥ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া রোয়ানুর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সরকারী ত্রাণ বিতরণের লক্ষ্যে মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজারের উপকূলীয় দ্বীপ মহেশখালীর দুর্গম মাতারবাড়ি ইউনিয়নের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সরকারী ত্রাণ বিতরণ করেন।
মন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মাতারবাড়িতে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। পরে মন্ত্রী ক্ষতিগ্রস্ত ধলঘাটা ইউনিয়নের অপর এক জনসভায় যোগদেন এবং ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: