ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

কাউন্দিয়ায় মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দুই ভাই ॥ একজন নৌকা প্রতীকে, অন্যজন স্বতন্ত্র

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৮ মে ২০১৬

কাউন্দিয়ায় মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দুই ভাই ॥ একজন নৌকা প্রতীকে, অন্যজন স্বতন্ত্র

গাফফার খান চৌধুরী, সাভার থেকে ফিরে ॥ ঢাকার গাবতলী লাগোয়া সাভারের কাউন্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বিশেষ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। চেয়ারম্যান পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে বর্তমান চেয়ারম্যান সাইফুল আলম খান ও আতিকুর রহমান খান শান্তর মধ্যে। সম্পর্কে ভাই। দু’জনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। বর্তমান চেয়ারম্যান দল থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। দলীয় মনোনয়ন পাওয়ায় তার প্রতীক হচ্ছে নৌকা। অপর ভাই দল থেকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। চেয়ারম্যান পদে ভাইয়ে ভাইয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে এলাকায় ব্যাপক আলোচনার জন্ম হয়েছে। সেই সঙ্গে ভোটারসহ এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্কও বিরাজ করছে। অবশ্য সরকারদলীয় স্থানীয় সংসদ সদস্য আসলামুল হক নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার আগাম ঘোষণা দিয়েছেন। সরকারের তরফ থেকে নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেয়ার কড়া নির্দেশ জারি করা হয়েছে। দু’ভাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে স্বাভাবিক কারণেই এলাকায় নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এলাকাবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন দুই ভাইয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত কি হয় তা দেখার জন্য। গত ২৮ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন ষষ্ঠ ধাপে ৭২৪টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে। ইউনিয়নগুলোতে আগামী ৪ জুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। এরমধ্যে রাজধানীর পাশে রয়েছে ১৩টি ইউনিয়ন। এগুলো হচ্ছে, ঢাকার গাবতলী সংলগ্ন সাভার উপজেলার আমিন বাজার, কাউন্দিয়া, তেঁতুলঝোরা, ভার্কুতা, বিরুলিয়া, সাভার, বনগাঁও, শিমুলিয়া, ধামসোনা, ইয়ারপুর, আশুলিয়া, পাথালিয়া ও কেরানীগঞ্জ উপজেলার শাক্তা ইউনিয়ন। আগামী ১৯ মে মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। পরদিন প্রতীক বরাদ্দের কথা। সরেজমিনে দেখা গেছে, কাউন্দিয়া ইউনিয়নটি চারদিকে নদী বেষ্টিত। নৌকা ছাড়া সেখানে যাতায়াতের কোন রাস্তা নেই। এটি দ্বীপ ইউনিয়ন হিসেবে পরিচিত। রাজধানীর মিরপুর লাগোয়া ইউনিয়নটিতে প্রবেশের জন্য চারদিকেই রাস্তা রয়েছে। নয়টি ওয়ার্ড রয়েছে ইউনিয়নটিতে। ভোট কেন্দ্রও নয়টি। তার মধ্যে চারটিই ঝুঁকিপূর্ণ। ভোটার সংখ্যা প্রায় সাঁতাশ হাজার। নির্বাচন ঘিরে সেখানে সাজ সাজ রব পড়ে গেছে। মানুষের মধ্যে বাড়তি আমেজ বিরাজ করছে। পাড়ায় পাড়ায়, চায়ের দোকানে দোকানে, হাটবাজারে সর্বত্র শুধুই নির্বাচনের আলোচনা। দোয়া চেয়ে ও এলাকাবাসীর মঙ্গল কামনা করে নানা রংবেরঙের পোস্টারে এলাকা ছেয়ে গেছে। দুই ভাই চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করায় বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। দুই চাচা তো ভাইয়ের বাড়ি দেয়াল দিয়ে ভাগ করা। ভোটাররা বলছেন, দুই ভাই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় তারা দোটানায় রয়েছেন। তারা কাকে ভোট দেবেন তা নিয়েও মতপার্থক্য রয়েছে। বিএনপি প্রার্থীর কোন নামগন্ধ নেই। তার নামও অনেক ভোটার জানেন না। দুই ভাইয়ের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। তবে সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কে চেয়ারম্যান হবেন তা নিশ্চিত নয়। তারা দলের পরিবর্তন চান না। আওয়ামী লীগের লোক চেয়ারম্যান হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তবে সেই ব্যক্তিটি সাইফুল আলম খান নাকি আতিকুর রহমান খান শান্ত তা স্পষ্ট নয়। তারা ব্যক্তির পরিবর্তন আশা করেন। ভোটারদের অভিযোগ, বর্তমান চেয়ারম্যান পঁচিশ বছর ক্ষমতায়। কিন্তু এখন পর্যন্ত ইউনিয়নে যাতায়াতের জন্য একটি ব্রিজ করতে পারেননি। সবাই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু কেউ কথা রাখেননি। ভোটারদের বক্তব্য, এজন্য তারা চেয়ারম্যান হিসেবে নতুন কাউকে খুঁজছেন। নতুন ব্যক্তিকে অবশ্যই আওয়ামী লীগের লোক হতে হবে। তাতে কোন দ্বিমত নেই। তারা পরিবর্তন চান। এবার নীরব বিপ্লবের মাধ্যমে সেই নতুন ব্যক্তিকে তারা চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চান। শান্তিপূর্ণ ভোট হলে নীরবে বিপ্লব হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। স্থানীয়দের অভিযোগ, সাইফুল আলম খান এক সময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বিএনপির নেতা থাকা অবস্থায় আওয়ামী লীগের সমস্ত কার্যক্রম জোরর্প্বূক বন্ধ করে রেখেছিলেন। ১৯৯৭ সালে তিনি গুলি চালিয়ে কাউন্দিয়া কৃষক লীগের সমাবেশ প- করে দেন। গুলিতে আহত হয়েছিলেন অন্তত ৫০ জন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী। এছাড়াও র‌্যাবের দুই গোয়েন্দা সদস্যকে হত্যার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এমন অভিযোগে ২০১০ সালে সাইফুল আলম খানকে দুই সঙ্গীসহ র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হতে হয়েছিল। এছাড়া খাল দখলের সময় প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে গুলি চালানোর দায়ে সাইফুল আলম খানসহ ১৯ জনকে র‌্যাব-৪ এর হাতে আটক হতে হয়েছিল। এসব অভিযোগের বিষয়ে মোবাইল ফোনে সাইফুল আলম খান জনকণ্ঠকে বলেন, তিনি এক সময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সেটি বহু বছর আগের কথা। ষড়যন্ত্রমূলকভাবে র‌্যাব তাকে আটক করেছিল। তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি অন্তত শতকরা ৮০ ভাগ ভোট পেয়ে এবার চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হবেন। প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থী অপর ভাই আতিকুর রহমান খান শান্তর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, তিনি আগাগোড়াই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করছেন। এবং করবেন। সুষ্ঠ নির্বাচন হলে তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হবেন বলে আশা করেন। নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নির্বাচনের আগেই নির্বাচনী এলাকায় তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী ও অস্ত্রবাজদের গ্রেফতার করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে নির্বাচনী এলাকায় বাড়তি টহল দিতে বলা হয়েছে। নির্বাচনী এলাকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষার বিষয়ে র‌্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জনকণ্ঠকে বলেন, নির্বাচনসহ যেকোন ধরনের নাশকতা এড়াতে র‌্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। নির্বাচনকে কেউ যাতে প্রভাবিত করতে না পারে সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ঢাকার পাশের ইউনিয়নগুলোর নির্বাচনে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি সন্ত্রাসী, অবৈধ অস্ত্রধারী ও সব ধরনের অপরাধীদের গ্রেফতারে ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত আছে।
×