ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

শেখার ধারা অব্যাহত রাখুন

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৫ মে ২০১৭

শেখার ধারা অব্যাহত রাখুন

বর্তমান কর্মব্যস্ত এ জগত সংসারে আমরা অর্থের পেছনে ছুটছি প্রতিটি মুহূর্ত। ব্যস্ততায় ঘিরে থাকা সপ্তাহের সময়গুলোতে মনোযোগটা যেন অন্যদিকে সরানোর ফুরসতই মেলে না। সময় বেরোলেই চোখ আটকে যায় ছোটপর্দায় কখনও কিংবা বড় পর্দায়, হয়ত লেনদেনের গোলকধাঁধায় আর চিত্তবিনোদন, সে তো যোজন যোজন দূরে। বলা যায়, জীবন আর আগের মতো নেই, টেকনোলজির অব্যর্থ নিশানা আর আমাদের হাতের স্মার্টফোনের ডিসপ্লেতে নুয়ে পড়া ঘাড় যেন জানান দেয়, আমাদের ঘুরে দাঁড়াবার শক্তি ফুরিয়ে গেছে। কে জানে? হয়ত বা নিশ্চুপ সমর্থন দিয়ে আমরাও আস্তে আস্তে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি দিনকে দিন। চব্বিশটি ঘণ্টা বা একদিনে অনেক কিছুই করা যায়, যদি সেখানে আপনার পূর্ণ সদিচ্ছা থাকে। নাহ, আমি এখানে চব্বিশ ঘণ্টার কথা বলব না, আমি বলব এক সপ্তাহ। একটি সপ্তাহকে নিজের করে সাজিয়ে নিন, জায়গাটাকে নিজের জন্য নিজের যুদ্ধক্ষেত্র ঘোষণা করুন। আপনাকে কাজগুলো নিজের জন্য করতে হবে এবং আপনি করবেন। এখানে সফলদের অনুসরণ করা পাঁচটি দৈনন্দিন অভ্যাসের কথা বলা হলোÑ যেগুলো নিমিষেই পাঁচ ঘণ্টায় করা সম্ভব। এগুলো মেনে নিজেকে আপনি সফলতার শিখরে যেতে না পারলেও নিজের কাছে নিজে একজন সফল হিসেবে পরিচয় দিতে পারবেন। নতুন কিছু খুঁজে বের করুন আধুনিকতা ছোঁয়া কিংবা নিজেকে রিচার্জ করার একটা ভাল ক্ষেত্র বলা যায় কফি হাউস, যদিও আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে কফি হাউস তুলনামূলকভাবে অর্থের বদহজম হিসেবে ধরা হয়। অনেকের ভরসা টংয়ের দোকানগুলোতেই আবদ্ধ থাকে। তবে ব্যস্ততার একটু ফাঁকে কফি হাউস কিংবা নিরিবিলিতে টংয়ের দোকানে চা খেতে খেতে কিছু সময় কাটানো আমাদের কাছে কষ্টের কিছু মনে হওয়ার কথা না। আগ্রহী হয়ে উঠুন অপরিসীম কৌতূহল একজন অতি সফল উদ্যোক্তা কিংবা একজন সফল ব্যক্তির অন্যতম হাতিয়ার বলা চলে। এটা অবশ্য তাকে বাকি সবার থেকে খানিকটা আলাদা করে দেয়। এ ক্ষেত্রে তিনি কখনোই কেবলমাত্র একটি বিষয় ভালভাবে জেনে তৃপ্ত থাকেন না। তিনি সবসময় নিজের মধ্যে বৈচিত্র্য এনে সকল মূল্যবান সুযোগের সঠিক ব্যবহার করে থাকেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করুন একজন উদ্যোক্তার আরেকটি বড় গুণ হলো কোন বিষয় নিয়ে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে চিন্তা করা। অবশ্য কাজের চাপে হয়ত এ চিন্তা বা গবেষণার ধারা বেশিক্ষণ সময় পর্যন্ত থাকে না। তবে মাথায় ব্যবসার যে ধারণাটিই আসুক না কেন, সেটি নিয়ে দিনের একটি নির্দিষ্ট সময়ে ভাবুন, এর সম্ভাব্যতা যাচাই করুন। কারণ, ব্যবসা আপনার, মূলধনও আপনার, হঠাৎ ভুল সিদ্ধান্তে মূলধনও কখন অনিশ্চিত ব্যয়ে চলে যাবে তা আপনি শত চেষ্টা করেও ফেরাতে পারবেন না, বিশেষ করে নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য। পড়ুন, পড়ুন, পড়ুন আসলেই পড়ার কোন বিকল্প নেই। নিজের মতো করে মাথা উঁচু করে বাঁচার জন্য হলেও আপনাকে পড়তেই হবে। বই কিনে মানুষ যেমন দেউলিয়া হয় না, বই পড়ার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই। আগেই বলেছি বিষয়গুলো হবে একান্তই নিজের ভাল লাগার। দেখুন বারাক ওবামা, বিল গেটস, অপরাহ উইনফ্রে, মার্ক জাকারবার্গ, ওয়ারেন বাফেটরা প্রচুর পড়তেন এবং এখনও তাদের সেই পড়াশুনার ধারা অব্যাহত রয়েছে। এদের জীবনী পড়লে আপনি জানতে পারবেন নিয়মিত পাঠ্যাভ্যাস কিভাবে তাদের আরও পরিণত করেছে এবং জীবনের মোড় পরিবর্তন করে দেয়া এমন সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছে। সে ক্ষেত্রে পারলে সপ্তাহে ৫ ঘণ্টা আপনি বই পড়ার পেছনে সময় ব্যয় করতে পারবেন। শেখার ধারা অব্যাহত রাখুন নিজেকে আর দশটা মানুষের মতো করে দেখতে না চাইলে প্রতিদিন নতুন কিছু শিখুন। শেখার ধারাটা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে একদিকে যেমন নিজের অভিজ্ঞতা বাড়বে, তেমনি জীবন চলার পথে আরেকটু এগিয়ে যাবেন প্রতিনিয়ত। বলা যায় নিয়মিত কিছু একটা করার অভ্যাস আমাদের আইডিয়া কিংবা দক্ষতাকে নিশ্চল করে দেয়, নতুন কিছু বের হতে চায় না আমাদের ভেতর থেকে। সে জায়গায় আপনি যখন ধীরে ধীরে নিজেকে নতুন কিছু শেখাবেন, আপনি ততই নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করতে সক্ষম হবেন। দিনের কিছু সময়ে কিংবা সপ্তাহের রুটিনে বেঁধে দেয়া কিছু সময়ে আপনি তা চালিয়ে নিতে পারেন।সবশেষে একটাই আহ্বান, শুধু দরকার আপনার প্রাত্যহিক একঘেয়ে জীবন থেকে মাত্র ৫টি ঘণ্টা। যে পাঁচটি ঘণ্টা আপনাকে আপনার কাছে নতুনভাবে প্রকাশ করবে, তুলে ধরবে আপনার বিশালত্ব, চিনিয়ে দেবে আপনার আপন সত্তাকে। আর সেই পথ ধরেই আপনার জীবনকে করে তুলবে আরও প্রাণবন্ত, মুখর ও ক্লান্তিহীন।
×