ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অনাহারকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে  ব্যবহার করছে  ইসরাইল ॥ ইইউ

ক্ষুধায় কান্নার শক্তিও হারিয়েছে গাজার শিশুরা ॥ জাতিসংঘ

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ০০:৪৩, ১৯ মার্চ ২০২৪

ক্ষুধায় কান্নার শক্তিও হারিয়েছে গাজার শিশুরা ॥ জাতিসংঘ

খাবার পানি পেয়ে খুশি গাজার দুই শিশু। সোমবার রাফাহ এলাকার দৃশ্য

প্রায় ছয় মাস ধরে ছোট্ট ফিলিস্তিনি ভূখ- গাজায় বর্বরতা চালিয়ে আসছে ইসরাইল। এই দীর্ঘ হামলা ও অবরোধে সেখানে প্রায় দুর্ভিক্ষ শুরু হয়েছে। খাবার না পেয়ে ফিলিস্তিনি শিশুরা তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। পরিস্থিতি এমন ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে যে অনাহারে শিশুদের শরীরে কান্না করার মতো শক্তিও নেই। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ সোমবার এই তথ্য জানায়। ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক ক্যাথরিন রাসেল বলেন, ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় ১৩ হাজারের বেশি নিরপরাধ শিশুকে হত্যা করেছে ইসরাইল। আরও হাজার হাজার শিশু আহত হয়েছে।

অথবা এসব শিশু কোথায় আছে তা-ও আমরা নির্ধারণ করতে পারছি না। তারা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকতে পারে। আমরা বিশ্বের অন্য কোনো সংঘাতে শিশুদের এত মৃত্যু হার দেখিনি। তিনি বলেন, আমি শিশুদের ওয়ার্ডে ছিলাম। তারা মারাত্মক রক্তস্বল্পতাজনিত অপুষ্টিতে ভুগছে। অথচ পুরো ওয়ার্ড একেবারে নীরব। কারণ শিশুদের গায়ে কান্না করার মতো শক্তিও নেই। রাসেল বলেন, ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনি দুর্ভিক্ষের শিকার হয়েছেন। কিন্তু ইসরাইলের হঠকারিতার কারণে গাজায় ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকতে পারছে না।

এর আগে অধিকৃত ফিলিস্তিনি ভূখ-ে জাতিসংঘের প্রধান ত্রাণসহায়তা বিষয়ক সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানায়, গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে শিশুদের মধ্যে দ্রুত তীব্র অপুষ্টি ছড়িয়ে পড়ছে। বর্তমানে উত্তর গাজায় দুই বছরের কম বয়সী প্রতি তিনজন শিশুর মধ্যে দুজন তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। 
ইউএনআরডব্লিউএ বলছে, গাজায় শিশুদের মধ্যে অপুষ্টি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং সেটি নজিরবিহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে। এমনকি অনাহার ও অপুষ্টিতে ভুগে বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে শিশুদের মৃত্যুর খবর আসছে। গাজায় দুর্ভিক্ষ ঘনিয়ে আসার জন্য তেলআবিবকে দায়ী করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)-এর পররাষ্ট্রনীতির প্রধান জোসেপ বোরেল বলেন, অনাহারকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ইসরাইলি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। খবর বিবিসি, আলজাজিরা ও এএফপির।
ব্রাসেলসে গাজায় মানবিক সহায়তা সংক্রান্ত একটি সম্মেলন উদ্বোধনের সময় বোরেল বলেন, ‘গাজায় আমরা আর দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে নেই। আমরা এখন দুর্ভিক্ষের মধ্যে রয়েছি, যা হাজার হাজার মানুষকে প্রভাবিত করছে। তিনি বলেন, ইসরাইল গাজায় দুর্ভিক্ষকে ত্বরান্বিত করছে।
পাশাপাশি গাজায় চলমান অনাহার মানবসৃষ্ট বলে মন্তব্য করেছেন ফিলিস্তিনে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার প্রধান ফিলিপ লাজারনি। সোমবার কায়রোতে অনুষ্ঠিত একটি সংবাদ সম্মেলনে এমন মন্তব্য করেছেন তিনি। জাতিসংঘ সতর্ক করে বলেছে, সেখানকার এক-তৃতীয়াংশ বা কমপক্ষে ৫ লাখ ৭৬ হাজার মানুষ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে।

ফলে সেখানে মানবিক সহায়তা প্রবেশের অনুমতির জন্য ইসরাইলকে ব্যাপক চাপ দিচ্ছে আন্তর্জাতিক মহল। কায়রোতে মিসরীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শউকরির সঙ্গে একটি সংবাদ সম্মেলনে লাজারনি বলেন, ‘গাজা উপত্যকায় ক্ষুধার প্রভাব ছড়িয়ে পড়া এবং দুর্ভিক্ষের প্রভাবকে রুখতে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ছোটার একটি প্রতিযোগিতায় নেমেছি আমরা। তিনি বলেন, সঠিক রাজনৈতিক সদিচ্ছার মাধ্যমে এই সংকটের সমাধান করা এবং একে বিপরীতমুখী করা যেতে পারে। একইসঙ্গে গাজায় সীমান্ত ক্রসিংয়ের মাধ্যমে খাবারের ‘বন্যা’ বইয়ে দেওয়া যেতে পারে।

×