ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

নাগরিক ভাবনা

আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ খাত চিহ্নিত করে বৈষম্যহীন বাজেট প্রণয়নের দাবি

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ২০ মে ২০১৮

আঞ্চলিক গুরুত্বপূর্ণ খাত চিহ্নিত করে বৈষম্যহীন বাজেট প্রণয়নের দাবি

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ জেলায় জেলায় বাজেট প্রণয়ন ছাড়া কখনও দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব না। জেলার মধ্যে কোন কাজটা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করতে হবে তাও নির্ণয় করতে হবে। এ অবস্থায় আঞ্চলিক উন্নয়নে কৃষি সম্পর্কিত নীতিমালা প্রণয়ন, শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়ানো, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে খাতওয়ারি বাজেট প্রণয়ন জরুরী বলে মনে করছেন রাজশাহীর বিভিন্ন পেশাজীবীরা। তারা বলছেন, বাজেট প্রনয়নের আগে জনগণের কাছে যেতে হবে। জেলায় জেলায় জনগণকে নিয়ে কাজ করতে হবে। তাদের পরিকল্পনার মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। তারা যখন বাজেট পরিকল্পনায়ও থাকবে তখন দুর্নীতি অনেকাংশে কমে যাবে এবং তারা বাজেটকে নিজেদের বাজেট বলে ভাবতে শিখবে। আদিবাসীদের জন্য কী লাগবে, পাহাড়িদের জন্য কী লাগবে, কৃষকের কী লাগবে এইভাবেই প্রতিটি জনগোষ্ঠীর কাছ থেকে তাদের দাবি দাওয়া শুনতে হবে। সেই অনুযায়ী বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে। আগামীর বাজেট ভাবনা নিয়ে এভাবেই নিজেদের মতামত জানিয়েছেন রাজশাহীর ব্যবসায়ী, সামাজিক সংগঠন পেশাজীবী ও বেসরকারী সংস্থার প্রতিনিধিরা। রাজশাহীর স্থানীয় বেসরকারী সংস্থা সচেতনের নির্বাহী পরিচালক হাসিনুল ইসলাস চুন্নু বলেন, সব জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন করতে চাইলে জেলায় জেলায় বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। এজন্য বাজেট নির্ধারণে সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ানো উচিত। রাজশাহীভিত্তিক সংস্থা বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টার পরিচালক ফয়জুল্লাহ চৌধুরী বলেন, গণতান্ত্রিক বাজেট সম্পর্কে সব শ্রেণী পেশার মানুষকে জানাতে হবে। আগে যেমন জুন-জুলাই মাসে বাজেট ঘোষণা করা হতো। তখন শুধু বাজেট নিয়ে আলোচনা হতো। সেই সনাতনী ধারা থেকে বের হয়ে এসে সারাবছর বাজেট নিয়ে আলোচনা করতে হবে। যাদের জন্য বাজেট তাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে হবে। জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যুক্ত করে বাজেট নিয়ে আলোচনা করতে হবে। তিনি বলেন, এমন বাজেট নির্ধারণ করতে হবে যাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের জীবনের উন্নয়ন ঘটানো যায়। এ জন্য জেলা বাজেট সবার আগে জরুরী। গণতান্ত্রিক বাজেট আন্দোলন রাজশাহী জেলার সভাপতি আকবারুল হাসান মিল্লাত বলেন, সাধারণ মানুষের কাছে বাজেট মানেই দুর্বোধ্য বিষয়। কোন জিনিসের দাম বাড়ল, কোন জিনিসের দাম কমল তা নির্ধারণ করে বাজেট। এই বাজেটকে আমাদের তৃণমূল পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। কারণ বাজেট-ই নির্ধারণ করে সম্পদের কতটুকু বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে যাচ্ছে, কে কতটুকু অংশ পাচ্ছে। রাজশাহী আবৃত্তি পরিষদের সহ সভাপতি মনিরা রহমান মিঠি বলেন, সংস্কৃতি চর্চার জায়গাটা প্রশস্ত করতে সরকারকে আন্তরিক হতে হবে। সাংস্কৃতিক চর্চা বাড়ানোর জন্য বাজেট বরাদ্দ বাড়াতে হবে। সেই বাজেটের টাকা ঠিকঠাক মতো পৌঁছাল কি না তা-ও নজর রাখতে হবে। এছাড়া রাজশাহীর বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ মনে করেন, জনসম্পৃক্ত বৃদ্ধি করে জেলাভিত্তিক বাজেট প্রণয়নের বিকল্প নাই। রাজশাহীর উন্নয়নে কৃষি সম্পর্কিত নীতিমালা প্রণয়ন, শিক্ষাখাতে বরাদ্দ বাড়ানো, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ বিভিন্ন বিষয়ে খাতওয়ারি বাজেট প্রণয়ন জরুরী। রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, জাতীয় বাজেট প্রণয়নে আঞ্চলিক জনগুরুত্বপূর্ণ খাতগুলো চিহ্নিত করতে হবে। তারপর সেসব খাতে বৈষম্যহীন বাজেট প্রণয়ন করতে হবে। রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মনিরুজ্জামান মণি বলেন, প্রতিবছর বাজেট ঘোষণা হয়, তবে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী বাজেট সম্পর্কে অনেকটাই অন্ধকারে থাকে। তাদের চেতনায় এগুলো নিয়ে খুব একটি বেশি ভাবনা নেই। শুধু দাম বাড়ল, না কমল এসব নিয়ে ভাবেন তারা। তার মতে সার্বিক উন্নয়নের জন্য জেলাওয়ারী গুরুত্বপূর্ণ খাত চিহ্নিত করে বাজেট প্রণয়ন করতে হবে।
×