ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

হেলিকপ্টারের বাণিজ্যিক ব্যবহার...

প্রকাশিত: ০৬:৫২, ৭ মে ২০১৭

হেলিকপ্টারের বাণিজ্যিক ব্যবহার...

সাজ্জাদ সাহেব একটি স্বনামধন্য ফ্যাশন হাউসের স্বত্বাধিকারী। একই দিনে তার তিনটি আউটলেট উদ্বোধন করবেন। আউটলেট তিনটি তিন মাথায় অবস্থিত সিলেট, ময়মনসিংহ, নরসিংদীতে। প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী হিসেবে তার সবগুলো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যেতে হয়। কিন্তু ঢাকা শহর থেকে সিলেটে যাবার জন্য প্লেন আছে কিন্তু অন্যান্য শহরে যাবার জন্য বিমান পথে কোন ব্যবস্থা নেই, কি করা ... সাজ্জাদ সাহেবকে অফিস সহকারী নজরুল ইসলাম বললেন, হেলিকপ্টারে করে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। সে জন্য একটু খরচ বেশি হলেও সময় অনেক বাঁচবে। সঙ্গে সঙ্গে তিনটি জায়গাতেই যেতে পারবেন। দেশের সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানও নিজ বাড়ি মাগুরায় যেতে অনেক সময় হেলিকপ্টার ব্যবহার করেন। এতে একদিকে তারা যেমন যানজটের ভোগান্তি এড়াতে পেরেছেন, অন্যদিকে মূল্যবান সময়ও বাঁচিয়েছেন। তবে যানজটের এই ভোগান্তি বেশি পোহাতে হয় এদেশে ব্যবসার কাজে আসা বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের। সে কারণেই এদেশে আসা ব্যবসায়ীদের অনেকেই এখন ঢাকার বাইরে যাওয়ার মাধ্যম হিসেবে বেছে নিচ্ছেন হেলিকপ্টারকে। ঢাকা থেকে দূরবর্তী চট্টগ্রাম, সিলেটের মতো শহরের পাশাপাশি ঢাকার কাছাকাছি নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর কিংবা ময়মনসিংহে কারখানা পরিদর্শন করতে বিদেশী ব্যবসায়ীরা এখন হরহামেশাই হেলিকপ্টার ব্যবহার করছেন। বর্তমানে দেশে বাণিজ্যিকভাবে হেলিকপ্টারের ব্যবহার বাড়ছে। এক সময় শুধু উচ্চবিত্তরা দ্রুত গন্তব্যে যেতে হেলিকপ্টার ব্যবহার করতেন। কিন্তু এখন জরুরী প্রয়োজন ছাড়াও বিয়ে, আনন্দভ্রমণে, রোগী বহন, শূটিং বিভিন্ন কাজে এ বাহনটি ব্যবহার করছেন মধ্যবিত্তরা। এতে প্রতিনিয়ত বেসরকারীভাবে এ খাতটি আরও জমজমাট হচ্ছে। শুরুর দিকে দুর্গম এলাকায় ভ্রমণ, সিনেমার শূটিং, আগে থেকেই প্রজেক্ট এলাকা পরিদর্শন, ছবি তোলা ইত্যাদি কাজের লক্ষ্য নিয়ে হেলিকপ্টার ভাড়া দেয়া শুরু হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে যানজট এড়িয়ে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের পছন্দের বাহন হয়ে উঠেছে হেলিকপ্টার। নগর জীবনে প্রতিনিয়ত বেড়ে যাওয়া অসহনীয় যানজট এড়াতে সামর্থ্যবান ব্যবসায়ী, চলচ্চিত্র নির্মাতা, হাসপাতাল মালিক ও বিদেশী বিনিয়োগকারীরা খুঁজছে বিকল্প পথ। এর ধারাবাহিকতায় কর্পোরেট লেভেলে বৃদ্ধি পাচ্ছে হেলিকপ্টারের ব্যবহার। এছাড়া সিনেমার শূটিং, রাজনৈতিক সভা সমাবেশ, রোগী আনা নেয়া, বিভিন্ন কোম্পানির বোর্ড মিটিং থেকে শুরু করে অনেকে বিমানবন্দর থেকে ঢাকায় আসা যাওয়ায়ও ব্যবহার করছেন হেলিকপ্টার। দেশে বর্তমানে হেলিকপ্টার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছে ৯টি কোম্পানি। যারা সরকারের লাইসেন্স নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে তা ব্যবহার করছে। এসব প্রতিষ্ঠানের ১৮টি হেলিকপ্টার বর্তমানে যাত্রী বহন করছে। আর দেশে ১৯৯৯ সালে বেসরকারী উদ্যোগে প্রথম বাণিজ্যিক হেলিকপ্টার সেবা চালু করে সাউথ এশিয়ান এয়ারলাইন্স। ২০০৮ সাল পর্যন্ত মাত্র ২টি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এ সেবা প্রদান করত। বর্তমানে লাইসেন্স পাওয়ার অপেক্ষায় আছে আরও বেশ কয়েকটি কোম্পানি। দেশে বেশ কয়েকটি কোম্পানি রয়েছে, যারা বাণিজ্যিকভাবে হেলিকপ্টার ভাড়া দেয়। এসব হেলিকপ্টার সাধারণত তিন থেকে সাতজন যাত্রী পরিবহন করে। কোম্পানি ভেদে হেলিকপ্টার ভাড়ার তারতম্য রয়েছে। বুকিংয়ের সময় হেলিকপ্টারের মোট চার্যের ৫০ শতাংশ পরিশোধ করতে হবে। বাকি ৫০ শতাংশ পরিশোধ করতে হবে উড্ডয়নের আগে। হেলিকপ্টার উড্ডয়নের ৪৮ ঘণ্টা আগে সিভিল এভিয়েশনকে জানাতে হয়। কারণ হেলিকপ্টারের নির্দিষ্ট কোন রুট নেই। এ কারণে কোন হেলিকপ্টার আকাশে উড্ডয়ন করলে টাওয়ারকে প্রস্তুত রাখতে হয়, যাতে সহজে যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। তবে জরুরী প্রয়োজনে ৫, ১০, ১৫ মিনিটের মধ্যেও অনুমতি দেয়া হয়। তাই হেলিকপ্টার ব্যবসার পরিধি বাড়াতে পারলে মূল্যবান সময় যেমন বাঁচবে তেমনি বড় বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে আরও উৎসাহী হবে।
×