ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে সেচ সঙ্কটে কমেছে গম চাষ

প্রকাশিত: ২১:৪০, ২৩ মে ২০২২

রাজশাহীতে সেচ সঙ্কটে কমেছে গম চাষ

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ ধান ও সবজিসহ অন্যান্য ফসলের চাষাবাদ ও উৎপাদন বাড়লেও রাজশাহীতে কমেছে গম চাষ। এর কারণ হিসেবে কৃষি সম্প্রসারণ দফতর বলছে, পানি সঙ্কটের কথা। অপরিকল্পিত পুকুর খনন, সার-কীটনাশকসহ আনুষঙ্গিক খরচ বৃদ্ধিও গম চাষ হ্রাসের কারণ বলছে কৃষি অফিস। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ দফতরের গত তিনবছরের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০১৯-২০ মৌসুমে জেলার ২৬ হাজার হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ওই বছর ২৬ হাজার ৫৪১ হেক্টর জমিতে মোট উৎপাদন হয় ৯৬ হাজার ৭৫৫ টন গম। এরপর ২০২০-২১ মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২৬ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে। তবে চাষ হয় ২৫ হাজার ৪৯৭ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয় ৯১ হাজার ৯১৫ টন গম। চলতি (২০২১-২২) মৌসুমে গম চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ২৫ হাজার ৫০০ হেক্টরে। চাষ হয় ২৪ হাজার ২৩৬ হেক্টর জমিতে। উৎপাদন হয়েছে ৯৪ হাজার ২১৩ টন। রাজশাহী গম গবেষণা কেন্দ্রের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্যাপ্ত সেচ সুবিধার অভাব, ইটভাঁটির ধোঁয়া ও গ্যাসের কারণে গমের রোগবালাই বেড়েছে। ফলে দিন দিন কমছে গমচাষ। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, গোদাগাড়ীতে ২০২১-২২ মৌসুমে ছয় হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। কিন্তু চাষ হয় পাঁচ হাজার ৫৮০ হেক্টরে। এখানে ৬০০ হেক্টর জমির চাষ কমেছে। এছাড়া বাঘায় পাঁচ হাজার ৫২৫ হেক্টর, চারঘাটে পাঁচ হাজার ৪০০ হেক্টর, পবায় দুই হাজার ১৯৫ হেক্টর, তানোরে এক হাজার ৫৫০ হেক্টর, পুঠিয়ায় দুই হাজার ৫১৫ হেক্টর, বাগমারায় এক হাজার ৫৬০ হেক্টর, দুর্গাপুরে এক হাজার ১০ হেক্টর, মোহনপুরে ৮৫ হেক্টর, মতিহারে ৩০ এবং বোয়ালিয়ায় ৫০ হেক্টর জমিতে গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। সব উপজেলায়ই এবার কমেছে গমচাষ। বিগত দু-তিন বছরের সমীক্ষার কথা উল্লেখ করে রাজশাহী গম গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. ইলিয়াস হোসেন বলেন, করোনাকালীন সবজি ও মসলাজাতীয় ফসল ভাল উৎপাদন হলেও চাষীরা সেগুলো বিক্রি করতে পারেনি। ফলে দামও তেমন পাননি। তাই করোনা-পরবর্তী সময়ে সবজির চাহিদা ও দাম বেড়ে যাওয়ায় কৃষক পেঁয়াজ, রসুনসহ অন্যান্য সবজি চাষে ঝুঁকে পড়েন। ফলে কমে যায় গম চাষ। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহকারী উপ-পরিচালক মোঃ তৌফিকুর রহমান জানান, জেলায় বারি-২৫, ২৮, ২৯, ৩০, ৩১ ও ৩২ জাতের গম চাষ বেশি হয়। তবে বারি ৩৩ জাতের গমে চাষীদের আগ্রহ বেশি। গম চাষ কমার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি সঙ্কটের কারণে ধান ও গমের পানি সেচে প্রচুর অর্থ খরচ হয়। তাই কৃষক পেয়ারা, মাল্টা, লেবু, ড্রাগন ও বরইসহ বিভিন্ন লাভজনক ফসলে ঝুঁকেছেন। এ কারণে গত মৌসুমের চেয়ে এবার এক হাজার ২৬১ হেক্টর জমিতে কমেছে গম চাষ।
×