ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গণপরিবহনে জোর করে সিদ্ধান্ত চাপাতে পারি না ॥ কাদের

প্রকাশিত: ২৩:০৩, ২৮ নভেম্বর ২০২১

গণপরিবহনে জোর করে সিদ্ধান্ত চাপাতে পারি না ॥ কাদের

সংসদ রিপোর্টার ॥ জাতীয় সংসদে সব ধরনের গণপরিবহনে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়া প্রচলনের জন্য সংসদে নতুন আইন পাসের দাবির জবাবে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বেসরকারী গণপরিহনে এমন সিদ্ধান্ত জোর করে চাপিয়ে দিতে পারি না। তবে, শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে সরকারী গণপরিবহনে হাফ ভাড়া চালু হয়েছে। সামাজিক দায়বদ্ধতা ও জনস্বার্থ বিবেচনায় বেসরকারী গণপরিবহনকেও অনুরোধ করা হয়েছে, এমনকি প্রধানমন্ত্রীর তরফ থেকেও অনুরোধ করা হয়েছে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শনিবার জাতীয় সংসদে ‘মহাসড়ক বিল-২০২১’ পাসের প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়ে মন্ত্রী এ সব কথা বলেন। পরে সংসদে কণ্ঠভোটে মহাসড়ক ও এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং টোল আদায়ে সড়ক ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত মহাসড়ক বিল-২০২১ পাস হয়েছে। বিলটির ওপর জনমত যাচাই-বাছাই প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে বিরোধী দলের সদস্যদের দাবির প্রেক্ষিতে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়ার বিষয়ে সরকারের ইতিবাচক অবস্থান তুলে ধরেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বিআরটিসি বাসে হাফ ভাড়া চালু করা হয়েছে। এটা ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হবে। এটা সারাদেশেই বিআরটিসি বাসের জন্য চালু হবে। তবে বেসরকারী যে গণপরিবহন রয়েছে, তাদের ওপর আমরা জোর করে চাপাতে পারি না। তারা তো সরকারের অধীনে না। বেসরকারী গণপরিবহনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত তাদের নেয়া দরকার। সামাজিক দায়বদ্ধতা ও জনস্বার্থ বিবেচনায় তাদেরকে অনুরোধ করা হয়েছে, এমনকি প্রধানমন্ত্রী তরফ থেকেও অনুরোধ করা হয়েছে। হাফ ভাড়া চালুর দাবি নিয়ে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগের জবাবে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ছাত্রলীগ বিবৃতি দিয়ে ছাত্রদের হাফ ভাড়ার পক্ষে সমর্থন জানিয়েছে। যেখানে সাংগঠনিকভাবে হাফ ভাড়ার পক্ষে, সেখানে তারা হামলা কেন করতে যাবে? যিনি হামলার কথা বলেছেন তাকে বলব তারা যে ছাত্রলীগ তা প্রমাণ করুন। পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের চাপে সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ এর সংশোধন করে শাস্তি কমানো হচ্ছে- এমন অভিযোগের জবাবে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে অনেক কিছু এ্যাডজাস্ট করতে হয়। এখানে অনেক সমস্যা আছে, যখন চেয়ারে বসবেন অনেক কিছু মোকাবেলা করতে হয়। এটা একটা চ্যালেঞ্জিং জব। এখানে আমরা কিছু কিছু বিষয় এ্যাডজাস্ট করি। কিন্তু সংসদে যেটা বলা হয়েছে, তা মোটেও ঠিক নয়। আইনটির সংশোধিত রূপটি এখনও দেখেননি। এটা সংসদে আসেনি। ওয়েবসাইটে আছে। আইন শাখা এটা ইতোমধ্যে ভেটিং করেছে। তারপরও আমাদের ওয়েবসাইটে রেখেছি। মতামত নিচ্ছি। তিনি বলেন, তিনজন মন্ত্রীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। তারা খুব সুন্দরভাবে দায়িত্ব পালন করেছে। স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে একটি সংশোধিত রূপ দাঁড় করিয়েছে। আপনাদের আশ্বস্ত করতে চাই, এই আইনে সাজার শৈথিল্য বা কঠোরতা কোনভাবেই শিথিল করা হয়নি। কোন সাজা কমানো হয়নি। আইনের যে কঠোরতা, আইনের যে স্পিরিট অরিজিনাল আইনে যা ছিল সেটাই আছে। সেটাই থাকবে। শুধু ভাষাগত ও প্রতিশব্দের বিষয় এবং প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আইনটিকে আমরা যুগোপযোগী করেছি। এ ছাড়া অন্য কিছু এখানে নেই। এখানে সাজা কমিয়ে কাটছাঁট করে কারও সঙ্গে প্রতারণা করিনি। জনবান্ধব শেখ হাসিনার সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে না। এই সরকার জনস্বার্থেই কাজ করে। সড়কে দুর্ঘটনা প্রসঙ্গে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী বলেন, সড়কের দুর্ঘটনা বন্ধ শুধু সরকারের কাজ নয়। সকলের সহযোগিতা দরকার। সাধারণরা আইন মানলেও আপনি ভিআইপি হয়ে রং সাইডে যেতে চান, সেখানে কী সড়কের শৃঙ্খলা থাকবে? মা শিশুকে কোলে নিয়ে হাঁমাগুড়ি দিয়ে আইল্যান্ড ক্রস করছে। মোবাইল ফোন কানে দিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে, দুর্ঘটনা হবে না? এ জন্য কী শুধু চালকরা দায়ী? বেপরোয়া ড্রাইভিং অবশ্যই দায়ী, আমি সেটা অস্বীকার করছি না। কিন্তু আমরা জনগণ যারা রাস্তা ব্যবহার করি, তারা সচেতন নই। শুধু চালক নয়, পথচারীরাও বেপরোয়া হয়ে যায়। তিনি বলেন, সড়ক নিরাপত্তার জন্য বিলটি আনা হয়েছে, রাস্তায় শৃঙ্খলার জন্য বিল আনা হয়েছে। ডিসিপ্লিন সড়কে দরকার, পরিবহনেও দরকার। সরকার দেশের উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করলেও বিরোধী দলের সদস্যরা ভাল কাজের সাধুবাদ জানাতে কার্পণ্যবোধ করে জানিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, আপনারা (বিএনপি ও জাতীয় পার্টি) দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিলেন, আপনারা কী একটি এক্সেপ্রেসওয়ে, ওভারপাস, মেট্টোরেল, ৬ লেনের অত্যাধুনিক মহাসড়ক, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু, কর্ণফুলী টানেল ইত্যাদির নাম কী আপনাদের সময় জনগণ শুনেছে, নাকি দেখেছে। এটি সম্ভব হয়েছে একমাত্র বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার আমলে। বিএনপি ও জাতীয় পার্টির দুই শীর্ষ নেতার বাড়িই উত্তরাঞ্চলে, কিন্তু ৬ লেনের রাস্তা করতে হচ্ছে শেখ হাসিনাকে। শেখ হাসিনা বিশ্ব ব্যাংকের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করেছেন। আর আপনারা (বিএনপি) বলেছেন, জোড়াতালি দেয়া সেতু, কেউ চড়বেন না। আগামী বছরেই চারটি মেগা প্রকল্পের উদ্বোধনের পর পুরো দেশের চেহারাই বদলে যাবে বলে দাবি করেন মন্ত্রী। মহাসড়ক বিল পাস ॥ মহাসড়ক ও এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং টোল আদায়ে সড়ক ব্যবস্থাপনা-সংক্রান্ত বিল সংসদে পাস হয়েছে। শনিবার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ‘মহাসড়ক বিল-২০২১’ সংসদে পাসের প্রস্তাব করলে তা কণ্ঠভোটে পাস। বিলে বলা হয়েছে, এই আইন অমান্য করলে দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড, পাঁচ হাজার টাকা থেকে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত দণ্ড হবে। আইনের অধীনে গেজেট দিয়ে সরকার বলে দেবে কোন সড়ক বা মহাসড়কে কে প্রবেশ করবে বা কে প্রবেশ করবে না। কোনটা মহাসড়কের সঙ্গে এক্সপ্রেসওয়ে হিসেবে ঘোষণা করা হবে। পরিচালনা কেমন করা হবে। কোনগুলো টোল নেয়া হবে। সরকার বা সরকারের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি মহাসড়ক উন্নয়ন, মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণ, মহাসড়ক সংশ্লিষ্ট স্যুয়ারেজ সিস্টেম, ড্রেন, কালভার্ট, সেতু নির্মাণ ও সংস্কার করবে। পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, নির্ধারিত মাশুল প্রদান সাপেক্ষে নাগরিক সেবাপ্রদানকারী সরকারী, আধা-সরকারী, স্বায়ত্তশাসিত বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ইউটিলিটি সংযোগগুলো মহাসড়কের প্রান্তসীমা বরাবর স্থাপন করা যাবে। তবে শর্ত থাকে যে, মহাসড়কের উন্নয়ন, মেরামত বা রক্ষণাবেক্ষণের সময় প্রয়োজন হলে ওই ইউলিটি সংযোগগুলো সেবা প্রদানকারী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজ খরচে নির্দিষ্ট সময়ে অধিদফতরের তত্ত্বাবধানে স্থানান্তর করবে। পাস হওয়া বিলে বলা হয়েছে, মহাসড়কে ফসল, খড় বা অন্য কোন পণ্য শুকানো বা অনুরূপ কোন কাজে মহাসড়ক ব্যবহার করা যাবে না। মহাসড়কের নির্ধারিত স্থান ব্যতীত অন্য কোন স্থান দিয়ে পদযাত্রা করা যাবে না বা এই আইনের অধীন অনুমোদিত উদ্দেশ্যে মহাসড়কের কোন স্থানে অবস্থান করা যাবে না। সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের অনুমতি ছাড়া মহাসড়কে কোন বিলবোর্ড, সাইনবোর্ড, তোরণ বা অনুরূপ কিছু টাঙানো বা স্থাপন করা যাবে না। ধীর গতিসম্পন্ন যানগুলো মহাসড়কের নির্ধারিত লেন ছাড়া অন্য কোন লেন ব্যবহার করতে পারবে না। নির্ধারিত জায়গা ছাড়া মহাসড়কে গবাদি পশু চরানো, প্রবেশ করানো, পারাপার করানো যাবে না।
×