ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

তিস্তার বানের পানিতে ভেসে গেছে অনেকের সোনার সংসার

প্রকাশিত: ১৬:১৭, ২২ অক্টোবর ২০২১

তিস্তার বানের পানিতে ভেসে গেছে অনেকের সোনার সংসার

স্টাফ রিপোর্টার, নীলফামারী ॥ ফুডবাস্কেট খ্যাত নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিস্তা নদীর চরগুলো এখন লন্ডভন্ড। হঠাৎ উজানের পাহাড়ী ঢলের বানের পানিতে ভেসে গেছে শতশত পরিবারের সোনার সংসার ও ক্ষেতের ফসল ও পুকুরে মাছ। চারিদিকে শুধুই সর্বহারা পরিবারগুলোর আহাজারীতে আকাশ বাতাস ভারী করে তুলে। তাদের এখন চাল চুলা কিছুই নেই। রান্না করা ও শুকনা খাবার বিতরণ হচ্ছে। তাই দিয়ে চলছে জীবন রক্ষা। কিন্তু এ ভাবে আর কতদিন । তাই ক্ষতিগ্রস্থরা দ্রুত তাদের পুনঃবাসনের দাবি করেছে। তিস্তার বন্যায় সব থেকে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের কালিগঞ্জ বদি মেম্বারের পাড়া। সেখানে আজ শুক্রবার বিকালে পরিদর্শন সহ বিশেষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্থদের ত্রান সামগ্রী বিতরন করবেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মো. এনামুর রহমান এমপি। নীলফামারী জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, তিস্তার বন্যার ঘটনার দিন গত বুধবার (২০ অক্টোবর) ৪০ মেট্রিক টন চাল ও ১০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। পাশাপাশি ত্রান মন্ত্রনালয় থেকে নগদ ৫ লাখ টাকা, গোবাদী পশুর খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা, শিশু খাদ্যের জন্য ২ লাখ টাকা ও এক হাজার শুকনা খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ পেয়েছি। প্রতিটি প্যাকেটে ১০ কেজি মিনিকেট চাল, ১ কেজি দেশি মসুরের ডাল, ১ কেজি আয়োডিনযুক্ত লবণ, ১ লিটার সয়াবিন তেল, ১ কেজি চিনি, ১০০ গ্রাম মরিচের গুঁড়া, ২০০ গ্রাম হলুদের গুঁড়া এবং ১০০ গ্রাম ধনিয়া গুঁড়াসহ মোট আটটি পণ্য রয়েছে। প্রতিটি প্যাকেট খাবারে চার সদস্যের পরিবারের প্রায় এক সপ্তাহ চলে যাবে। এছাড়া গোখাদ্য হিসেবে বিভিন্ন প্রকার ভুষি, খৈল, চালের কুড়া, চিটাগুড়, খড়, মানসম্মত রেডিমেড ফুড ইত্যাদি এবং শিশু খাদ্য হিসেবে বিভিন্ন প্রকার খেজুর, বিস্কুট, ফর্টিফাইড তেল, ব্রাউন চিনি, মসুর ডাল, সাগু, ফার্টিফাইড চাল, ওয়াটার পিউরিফাইং ট্যাবলেট, বাদাম, মানসম্মত রেডিমেড ফুড ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্য স্থানীয়ভাবে কিনে বিতরণ করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। এদিকে সরেজমিনে দেখা যায় বন্যা এলাকায় মানুষজনের চরম দূর্ভোগের চিত্র। হাজারো পরিবারের বসতঘর হারানো সোনার সংসার তছনছ। রাক্ষুসী তিস্তা নিমিষেই সব গ্রাস ফেলেছে সব কিছু।সেখানে সরকারী ভাবে সকালে ও বিকালে শুকনো খাবার দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি পূর্বছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আব্দুল লতিফ খান খিচুরী রান্না করে বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন। বসতভিটা হারানো পরিবারগুলোকে বাঁধের উপর সরকারী ভাবে তাবু, ত্রিপল দিয়ে রাত্রী যাপনের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। সেখানে ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিবারগুলো আশ্রয় নিয়ে অবস্থান করছে। ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান জানান, পানি কমলেও বাংলাদেশভারত যৌথ বাধ বা তিস্তা নদীর বাংলাদেশের প্রবেশ মুখ এলাকায় এখনও পানি রয়েছে। স্বস্তি নেই। গ্রোয়েন বাঁধের যে দুটি অংশ ভেঙ্গে গেছে সেখানেই ৩০টি ঘর তলিয়ে গেছে মাটির নিচে। এখানে দেড় হাজার পরিবার চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এদের এখন চাল চুলা কিছুই নেই। উল্লেখ্য, বুধবার (২০ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে তিস্তা নদীর ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে। সকাল ১০টায় তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে ৭০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গত বৃহ¯পতিবার (২১ অক্টোবর) থেকে তিস্তার পানি বিপদসীমার পানি নেমে গেছে। ও আজ শুক্রবার তিস্তার পানি প্রবাহ ছিল বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে।
×