ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

প্রকৃতির আরেক দিগন্ত পর্যটন পল্লী গঙ্গামতি সৈকত

প্রকাশিত: ১৪:৩৬, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

প্রকৃতির আরেক দিগন্ত পর্যটন পল্লী গঙ্গামতি সৈকত

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, পটুয়াখালী ॥ যেন চোখ ফেরানো যায় না। আঁকাবাঁকা সৈকতের বেলাভূমে আছড়ে পড়ছে লোনা জলের ঢেউ। প্রায় আট কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতটির কোল ঘেঁষে রয়েছে ঝাউবিথি। সারি সারি গাছগুলো যেন একে অপরকে টেক্কা দিয়ে উপরে ওঠার অবিরাম চেষ্টায় রত আছে। এর ছাঁয়াতলে হাঁটাচলা, আবার সৈকতের লোনা জলে পা ভেজানো। কেউবা অতি আপনজন, অর্ধাঙ্গীনী কিংবা বন্ধুকে নিয়ে হাত ধরে হেঁটে চলা। আবার সৈকতের আধোভেজা জলের শিহরণ। এই হচ্ছে গঙ্গামতি সমুদ্র সৈকত। পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধুলাসার ইউনিয়নে দক্ষিণে সাগরের কোলঘেঁষা এক জনপদ। সৈকতের এ স্পটটিও বিরল মনোলোভা দৃশ্য সূর্যোদয় ও অস্ত দেখার জন্য আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। দীর্ঘ লকডাউনের পরে ফের প্রতিদিন প্রত্যুষে আসছেন পর্যটক। সন্ধ্যায়ও ভিড় করছেন। কারও কাছে গঙ্গামতির এ সৈকত লাল কাকড়ার চর নামেও সমধিক পরিচিত। সৈকতের বেলাভূমে লাল কাঁকড়ার ভোঁ দৌড় এক অনন্য উপভোগ্য দৃশ্য। যা চোখে না দেখলে বোঝা যায় না। তবে মানুষের বিচরণের পাশাপাশি কাঁকড়া ধরার মানসিকতার কারণে মারা পড়ছে বহু লাল কাকড়া। দিনভর পর্যটক-দর্শনার্থীর হৈ-হুল্লুরে মাতোয়ারা থাকছে। সূর্যোদয় এবং সুর্যাস্ত দেখার সুযোগ মেলে গঙ্গামতির এ সৈকত থেকে। সৈকতটি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুরদর্শী দর্শনে ১৯৯৮ সালে ঘোষণা হয় পর্যটন পল্লী। এরপর থেকে এচরটির প্রায় ২০০০ একর সরকারী আবাদ যোগ্য খাস জমি এখনও ভূমি দস্যুদের কবলমুক্ত রয়েছে। যার কল্যানে এখানে সরকারের উন্নয়ন কাজে কোন জমি অধিগ্রহণ করতে হবে না। সৈকতে যাওয়ার সড়কটি ইতোমধ্যে পাকাকরন করা হয়েছে। গঙ্গামতির লেকটির ওপরে বহু আগে একটি গার্ডার ব্রিজ করা হয়েছে। ঝাউবিথির পাশ ঘেঁষে অস্থায়ী দোকানপাট বসতে শুরু করেছে। পৌঁছে গেছে বিদ্যুত। করা হয়েছে সেখানে একাধিক আশ্রয়কেন্দ্র। কুয়াকাটায় আসলে কেউ এই সৈকতটি দেখার সুযোগকে হাতছাড়া করতে চায়না। করেন না কেউ এমন ভুল। সৈকতের দীর্ঘ এলাকার বেলাভূমে আবাদ এবং বসতবাড়ি করে আছে প্রায় দেড় হাজার পরিবার। মূলত এরা সবাই জেলে। আবার মৌসুমে ধানের সঙ্গে রবিশস্যের আবাদও করেন। এখনও গঙ্গামতির এই সৈকতে পর্যটকের জন্য সড়ক যোগাযোগের উন্নয়ন ছাড়া তেমন কোন সুবিধা গড়ে ওঠেনি। সম্ভাবনাময় এ সৈকতে একসময় শুধু শীতকালে পর্যটকের পদচারণা থাকতো। এখন বর্ষাকালেও আগমন ঘটে প্রচুর পর্যটক-দর্শনার্থীর। সৈকতের দীর্ঘ এলাকা ভ্রমন ছাড়াও প্রকৃতিঘেরা সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে। রয়েছে জেলেদের জীবনযাত্রার যুদ্ধের প্রতিদিনকার দৃশ্যপট দেখার সুযোগ।
×