ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অনলাইন গেম ও এ্যাপ বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট

প্রকাশিত: ০০:০৩, ২৫ জুন ২০২১

অনলাইন গেম ও এ্যাপ বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে টিকটক, বিগো লাইভ, পাবজি, ফ্রি ফায়ার ও লাইকির মতো সব ধরনের অনলাইন গেম ও এ্যাপ বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় মানবাধিকার সংগঠন ‘ল এ্যান্ড লাইফ’ ফাউন্ডেশনের পক্ষে গেম এবং এ্যাপগুলোর ক্ষতিকারক দিক তুলে জনস্বার্থে রিটটি করেন সুপ্রীমকোর্টের দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির পল্লব ও মোহাম্মদ কাউছার। ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, শিক্ষা সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, আইন সচিব, স্বাস্থ্য সচিব এবং পুলিশের আইজিকে রিটে বিবাদী করা হয়েছে। এর আগে গত ১৯ জুন অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে টিকটক, বিগো লাইভ ও লাইকির মতো এ্যাপ এবং পাবজি ও ফ্রি ফায়ারের মতো গেমগুলো বন্ধে লিগ্যাল নোটিস পাঠানো হয়। নোটিসে বলা হয়, টিকটক, বিগো লাইভ ও লাইকি এ্যাপ ব্যবহার করে দেশের শিশু-কিশোর এবং যুব সমাজ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হচ্ছে, অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে এবং সারাদেশে কিশোর গ্যাং কালচার তৈরি হচ্ছে। টিকটক অনুসারীরা বিভিন্ন গোপনীয় জায়গায় পুল পার্টির নামে অনৈতিক বিনোদন যৌন কার্যক্রমে লিপ্ত হচ্ছে। এছাড়াও সম্প্রতি নারী পাচার ও অর্থ পাচারের ঘটনায়ও টিকটক, লাইকি ও বিগো লাইভের মাধ্যমে চলছে- যা অত্যন্ত আশঙ্কাজনক এবং দেশের ও জনস্বার্থের পরিপন্থী, শৃঙ্খলা পরিপন্থী, মূল্যবোধের পরিপন্থী। অন্যদিকে, পাবজি ও ফ্রি ফায়ারের মতো গেমগুলো বাংলাদেশের যুব সমাজ এবং শিশু-কিশোররা ব্যাপকভাবে আসক্ত হয়ে পড়ছে। যার ফলে সামাজিক মূল্যবোধ, শিক্ষা, সংস্কৃতি বিনষ্ট হচ্ছে এবং ভবিষ্যত প্রজন্ম হয়ে পড়ছে মেধাহীন। এসব গেম যেন যুব সমাজকে সহিংসতা প্রশিক্ষণের এক কেন্দ্র বিন্দু হয়ে উঠছে। বিষয়টি মনিটর করার জন্য এবং সময়ে সময়ে শিশুদের জন্য উপযোগী ও যথাযথ অনলাইন গেমগুলোকে সুপারিশ করার জন্য একটি মনিটরিং টিম গঠন করা অত্যন্ত জরুরী। তাই সব অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে পাবজি, ফ্রি ফায়ার গেমস ও টিকটক, লাইকি, বিগো লাইভের মতো ক্ষতিকারক এ্যাপগুলো অবিলম্বে অপসারণ করা এবং সব লিঙ্ক বন্ধ করার অনুরোধ করা হয় নোটিসে। ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির পল্লব বলেন, এর আগে নোটিস পাঠিয়েছিলাম। নোটিসে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এগুলো বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। একইসঙ্গে এসব বিষয় মনিটর করার জন্য এবং শিশুদের উপযোগী যেসব অনলাইন গেম রয়েছে সেগুলো সুপারিশ করার জন্য একটি মনিটরিং, ইভালুয়েশন এবং সুপারিশ কমিটি গঠন করার জন্য অনুরোধ করা হয় নোটিসে। নোটিসের জবাব না পাওয়ায় হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে বলে জানান আইনজীবীরা। সম্প্রতি ভারতে এক বাংলাদেশী তরুণীকে বীভৎস কায়দায় যৌন নির্যাতনের ঘটনা ভাইরাল হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, তিন-চারজন যুবক ও একটি মেয়ে মিলে ওই তরুণীকে বিবস্ত্র করে শারীরিক ও যৌন নির্যাতন করছে। ওই ঘটনার সূত্রপাত টিকটক এ্যাপ ঘিরে। ওই ভিডিওর সূত্র ধরে অনুসন্ধান করে রিফাজুল ইসলাম ওরফে টিকটক হৃদয় নামের এক নির্যাতনকারীকে শনাক্ত করে পুলিশের তেজগাঁও বিভাগ। টিকটক হৃদয় নামের ওই যুবক বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও ভারতের কয়েকটি রাজ্যের কিছু অপরাধীর সঙ্গে মিলে মানব পাচারের আন্তর্জাতিক চক্র গড়ে তোলে। চক্রটির নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ, ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের দুবাইসহ কয়েকটি দেশে বিস্তৃত বলে দাবি পুলিশের। ইতোমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নারী পাচার সম্পর্কিত নতুন নতুন তথ্য আসছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার দরিদ্র পরিবারের দুই তরুণীকে টিকটকের আড়ালে চাকরি দেয়ার নাম করে ভারতে পাচারের তথ্য পায় তদন্ত সংশ্লিষ্টরা। পাচারের পর তাদের দিয়ে পশ্চিমবঙ্গের দিঘা এলাকার বিভিন্ন বাসা ও হোটেলে জোরপূর্বক দেহব্যবসায় নিয়োজিত করা হয়। উঠতি বয়সী কিশোরী-তরুণীদের মডেল বা স্টার বানানোর প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করা হয়। তাদের অবৈধ পথে ভারতে নেয়া হয়।
×