ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৭ মে ২০২৪, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১

সহিংসতার জন্য অবশেষে দুঃখ প্রকাশ বাবুনগরীর

প্রকাশিত: ২৩:৩৭, ২১ এপ্রিল ২০২১

সহিংসতার জন্য অবশেষে দুঃখ প্রকাশ বাবুনগরীর

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফটিকছড়ি ॥ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনকে কেন্দ্র করে হাটহাজারীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত সংঘাত ও সহিংসতার জন্য অবশেষে দুঃখ প্রকাশ করেছেন হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী। তার বক্তব্যে নরম সুর যেমন প্রকাশিত হয়েছে তেমনিভাবে প্রকারান্তরে ওসব ঘটনার নেপথ্যে সংগঠনটির সম্পৃক্ত থাকার স্বীকারোক্তিও মিলেছে। সোমবার রাতে ফেসবুকের মাধ্যমে দেয়া এক ভিডিও বার্তায় হেফাজত আমির নিজেদের অরাজনৈতিক দাবি করে বলেন, কাউকে ক্ষমতায় বসানো বা ক্ষমতা থেকে সরানো তাদের উদ্দেশ্য নয়। তবে পাশাপাশি ২০১৩ সালের মামলায় এতদিন পরে গ্রেফতার কেন, সে প্রশ্নও রাখেন। বক্তব্যে তিনি নেতাদের আটক করা বন্ধ এবং এ পর্যন্ত যারা গ্রেফতার হয়েছেন তাদের মুক্তির দাবিও করেন। হেফাজতে ইসলামের আমির জুনায়েদ বাবুনগরী তার ভিডিও বার্তায় বলেন, কাউকে ক্ষমতায় বসানো, কাউকে ক্ষমতা থেকে নামানো এবং কোন পার্টি বা দলের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা হেফাজতে ইসলামের উদ্দেশ্য নয়। হেফাজতে ইসলামের উদ্দেশ্য হল আল্লাহর জমিনে রাসুলের (সা) এজেন্ডা বাস্তবায়ন করা। কিন্তু কিছু কুচক্রীমহল নানাভাবে গুজব ছড়াচ্ছে। সরকারের প্রতি অনুরোধ, আপনারা এ গুজবে কান দেবেন না। তিনি দলের নেতাকর্মীদের ধৈর্য ধারণ করার নির্দেশনা দিয়ে বলেছেন, আপনারা ধৈর্য ধারণ করুন, কোন সংঘাতে যাবেন না। কোন জ্বালাও পোড়াও করবেন না। হেফাজতে ইসলাম ভাঙচুর আর জ্বালাও পোড়াওয়ে বিশ্বাস করে না বরং হারাম মনে করে। সাম্প্রতিক সময়ে সংঘটিত বিভিন্ন ঘটনার উল্লেখ করে বাবুনগরী বলেন, গত ২৬ মার্চ জুমাবার কিছু দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। অথচ সেদিন হেফাজতে ইসলামের কোন কর্মসূচী ছিল না। আমাদের কোন কমান্ড ছিল না। আমি নিজে হাটহাজারী মাদ্রাসায় ছিলাম না, দূরে সফরে ছিলাম। এর আগে বায়তুল মোকাররমেও কিছু মুসল্লি আর ক্যাডারের মধ্যে কিছু অঘটন ঘটেছে। ক্যাডাররা মুসল্লিদের মারধর করেছে মসজিদের ভেতরে। এরপর হাটহাজারীর ঘটনা হয়েছে, যার জন্য আমরা বেশি দুঃখিত। আবার ব্রাহ্মণবািড়য়ায় কিছু ঘটনা হয়েছে। এসব ঘটনার পেছনে হেফাজতে ইসলামের কোন কর্মসূচী ছিল না, কোন কমান্ডও ছিল না। হেফাজতে ইসলামকে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক সংগঠন দাবি করে তিনি বলেন, কুচক্রী কিছু মহল নানা ধরনের গুজব রটাচ্ছে। মাননীয় সরকারকে আমি বলব, আপনারা এসবে কান দেবেন না। জুনায়েদ বাবুনগরী আরও বলেন, শুধু দুনিয়ার হায়াত নয়, আসল হায়াত শুরু হবে মৃত্যুর পর থেকে। কবরের হায়াত, হাশরের হায়াত, আখেরাতের হায়াত ও বেহেস্তের হায়াত। কেউ নিরাশ হবেন না। হিম্মত, সাহস রাখুন, বালা মুসিবত বিপদের মুহূর্তে ধৈর্য ধারণ করুন। একটি হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, এটা তো হযরত আদম (আ.)-এর যুগ থেকে চলে আসছে। যাদের ইমান আকিদা বেশি মজবুত তাদের ওপর আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষাও শক্ত হয়। বিপদও শক্ত আসে। নবীগণের দ্বীন ও ঈমান সবচেয়ে বেশি শক্ত ছিল, তাই নবীরা বেশি বিপদের শিকার হয়েছিলেন। এরপর সাহাবায়ে কেরাম, তাদের দ্বীন ও ইমান শক্ত ছিল বিধায় তারাও নবীদের পরে বেশি বিপদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। এভাবে সিলসিলা চলতে থাকবে। আমাদের মধ্যেও যাদের দ্বীন ইমান বেশি মজবুত, যাকে আল্লাহ ভালবাসেন, তার ওপর বিপদ আসে। তারাও বিভিন্ন পরীক্ষার সম্মুখীন হন। হেফাজত আমির বলেন, অনেকের সন্দেহ “হেফাজতে ইসলামের উদ্দেশ্য অমুক অমুক দলকে ক্ষমতায় বসানো। ... নাউজুবিল্লাহ, এটি ডাহা মিথ্যা কথা। নির্জলা মিথ্যাচার।” ২০১০ সালে হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয়। এখন ২০২১ সাল, এই ১১ বছরে কেউ প্রমাণ দিতে পারবে না, অন্য কোন পার্টি বা দলের সঙ্গে হেফাজতে ইসলামের সম্পর্ক ছিল। প্রশাসন মাহে রমজানে হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীদের, ওলামায়ে কেরামকে, দেশের জনগণকে, তৌহিদী ছাত্র জনতাকে হয়রানি করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদের যেসব নেতাকর্মী, হক্কানি আলেম, নির্দোষ মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদেরকে অবিলম্বে নিঃশর্তে মুক্তি দান করুন। বড় বড় আলেম, আজিজুল হক ইসলামাবাদী, জুনায়েদ আল হাবিব, মুফতি সাখাওয়াত, মাওলানা মামুন, মামুনুল হক, মুফতি ইলিয়াস হামিদীসহ আরও অনেক বড় বড় আলেম, তৌহিদী জনতা, ছাত্র জনতা যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মুক্তি দিন। বাবুনগরী প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, ২০১৩ সালের মামলায় ৮/৯ বছর পর এখন গ্রেফতার করা হচ্ছে। এতদিন কোথায় ছিলেন আপনারা? আর এই ২০১৩ সালের মামলা হিসেবে যেগুলো সাজানো হয়েছে এগুলো ডাহা মিথ্যা। ২০১৩ সালের ডাহা মিথ্যা মামলায় যাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদেরও মুক্তি দিন। এটাও আমাদের দাবি।
×